স্টাফ রিপোর্টার : আছমা শিকদার শিমলা (৪০) নামের এক স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ৪০ বছর বয়সী এই শিক্ষিকার মৃত্যুকে ঘিরে চলছে আলোচনা সমালোচনার।
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এই শিক্ষিকা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের অফিস সহকারির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার স্বামীর বাড়ি দৌলতপুর ইউনিয়নের বাহাড়া দুবাগ গ্রামের ইউপি সদস্য শাহিন তালুকদারের বড় ভাই ফজলু তালুকদারের স্ত্রী। গত (৬ জুলাই) রাতে স্কুলের সামনে ভাড়াটে বাসায় তিনি পারিবারিক কহলের জের ধরেই হারপিক খেয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পরে তাকে রাতেই আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং (৮ জুলাই) মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ময়না তদন্ত শেষে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৬টায় নিহতের পিত্রালয় একই উপজেলার ৮পাড়া গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ওই স্কুল কমিটির এক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর বাড়ি থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ওই শিক্ষিকা দৌলতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতায় নিয়জিত ছিলেন। কিন্তু স্বামীর বাড়ির লোকজন অত্যাচার নির্যাতন করে গত ১০ মাস পূর্বে স্বামী-স্ত্রী ও এক ছেলেসহ তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে তিনি ওই স্কুলের সামনে একটি ভাড়াটে বাসার দ্বিতীয় তলায় উঠেন। কিন্তু এই ভাড়াটে বাসায় আসার পর থেকে তাকে নানাভাবে মানুষিক চাপ সৃষ্টি করা হতো। একমাত্র ছেলের মুখের দিকে চেয়ে সব নির্যাতন সহ্য করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে হারপিক খেয়ে আত্নহত্যার চেষ্টার পথ বেছে নেন আসমা।
তবে ওই শিক্ষিকার পরিবারের দাবি তাকে স্কুল কমিটির কয়েকজন সদস্যরা হিসাব নিকাশের চাপ দেয়ায় সে আত্নহত্যা করেছে।
এদিকে আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক হাসিম উদ্দিন গতকাল তার দেশের বাড়ি ময়মনসিংহে চলে গেছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, অফিস সহকারি আসমার পাশের প্লাটে আমি থাকি। আসমাকে আমি প্রায়ই মানষিক টেনশনে দেখতে পেতাম। সবসময় সে তার পারিবারিক কহলের কথা আমাকে বলতো এবং কান্নাকাটি করতো।
এ বিষয়ে নব নির্বাচিত স্কুল কমিটির সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসি, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ জানান, গত জুন মাসে আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের গভনিং বডির সভাপতি নির্বাচিত হই। এখনও স্কুলের পূরো দায়িত্ব পাইনি। আছমার সাথে হিসাব নিকাশের কোন প্রশ্নই আসেনা। হিসাব নিকাশের কোন ব্যাপার থাকলে প্রধান শিক্ষক বা সাবেক সভাপতিকে অবহিত করব। আর আছমার বাবা ফিরোজ আলী আমার দীর্ঘ দিনের ক্লাসমিট। সেই সুবাদে আমছা আমার মেয়ের মত। সে খুব ভাল একটি মেয়ে। আমাকে বার বার তার পরিবারিক জীবনের অশান্তির কথা অবহিত করেছিল। সে পারিবারিক কহলের জেরেই আত্নহত্যা করেছে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতা জানান, পারিবারিক কহলের জের ধরেই এই শিক্ষিকা আত্নহত্যা করেছেন। বিষয়টি ভিন্নভাবে নেয়ার জন্য অযথা স্কুল কমিটিকে দায়ী করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, প্রতিষ্ঠানটির কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্ধ রয়েছে। এরই জেরে সম্প্রতি সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদদ্ধা আব্দস শহীদকে বাদ দিয়ে আব্দুর রউফকে সভাপতি করে গত ৬জুন ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিশ্বাথ থানার ওসি শামীম মুসা সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যালয়ের নতুন কমিটির সদস্য একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।