স্টাফ রিপোটার : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার পুরান সিরাজপুর গ্রামে মাদরাসা ছাত্র হাফিজ নুরুল আমীন ওরফে লাইস মিয়া খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। শুক্রবার সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ভূইয়ার আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে লজিং মাষ্টার সেলিম আহমদের পুত্র আশফাক আহমদ রাতুল (১৬)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ওসি শামিম মুসা জানান, আশফাক আহমদ রাতুলকে আটকের পর হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে বলে, দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসা ছাত্র হাফিজ নুরুল আমীন (তার ছাত্র) রাতুলের নাম ও ছবি ব্যবহার করে একাধিক ফেইক (ফেসবুক আইডি) বানিয়ে বø্যাকমেইল করে আসছিল। এসব ফেইক আইডি থেকে রাতুলের আত্মীয়-স্বজনের কাছে অশ্লিল ছবি পাঠাত নুরুল আমিন। এই বø্যাকমেইল থেকে রেহাই পেতে নুরুল আমীন প্রায় ২০ হাজার টাকা দেয় রাতুল। সর্বশেষ তার কাছে আরো ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন নুরুল আমিন। এনিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে হাতাহাতির-মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। এব্যাপারে নিজ পরিবারের কাছে রাতুল বিচার প্রার্থী হলেও, উল্টো নুরুল আমিনের পক্ষাবলম্বন করেন পরিবারের লোকজন। এতে নুরুল আমীনের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে রাতুল। একপর্যায়ে নুরুল আমিনকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় রাতুল এবং ক্রাইম পেট্ট্রল দেখে সে পরিকল্পনা করতে থাকে। (৮ এপ্রিল) বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জরুরী আলাপ আছে বলে নুরুল আমিনের কক্ষে প্রবেশ করে রাতুল। এসময় নুরুল আমিন প্র¯্রাব করার জন্য ঘরের বাহিরে গেলে রাতুল তার সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরাটি বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর নুরুল আমিন কক্ষে প্রবেশ করলে তার সঙ্গে জরুরী আলাপ শুরু করে রাতুল। এসময় পূর্বের পকিল্পনা অনুযায়ী ধারালো ছুরি দিয়ে নুরুল আমিনের বুকে, পেটে ও পায়ে একাধিক আঘাত করে রাতুল। একপর্যায়ে নুরুল আমিন গুরুত্বর আহত হয়ে মাটিতে পরে গেলে ছুরাটি ঘরের বাহিরে একটি ঝেপে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং চিকিৎকার করে বাড়ির লোকজনকে জড়ো করে বলতে তাকে কেবা কারা নুরুল আমিনকে মেরে পালিয়ে গেছে।
এসময় বাড়ির লোকজন গুরুত্বর আহত অবস্থায় নুরুল আমিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে সে মারা যায়। এঘটনার পরই আশফাক আহমদ রাতুল ও তার পিতা সেলিম আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরাটি উদ্ধার করে পুলিশ।
এঘটনায় নিহতের ছোটভাই নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে আশফাক আহমদ রাতুলকে আসামী করে বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং-৮)। রাতুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের পর তাকে সিলেট বাঘবাড়ীস্থ কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত হাফিজ নূরুল আমীন উরফে লায়েছ বিশ্বনাথ দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী ছিল ও পার্শবতী জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসী গ্রামের মৃত সজ্জাদ আলীর পুত্র। সে প্রায় চার বছর ধরে বিশ্বনাথ উপজেলার পুরাণ সিরাজপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার বাড়ীতে লজিং থাকতেন।