সিলেটে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৪ শতাধিক মামলা বিচারাধীন

বিশ্বনাথ সারাদেশ সিলেট
শেয়ার করুন

ডাক ডেক্স : বহুল আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিল করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। অথচ বাতিলকৃত এ আইনের আওতায় দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৪ শতাধিক সিলেটে। এছাড়া সিলেটসহ সারা দেশে সাইবার ট্রাইব্যুনালের এক হাজার মামলা রয়েছে তদন্ত পর্যায়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বদলে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন হচ্ছে, তাতে আগের আইনের অনেক ধারার সাজা কমছে। তাই চলমান মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ এবং এ আইনের মামলার আসামিরা প্রস্তাবিত নতুন আইনে কোনো সুবিধা পাবেন কিনা, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। দেশে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ অনুযায়ী যখন যে আইনে মামলা হয় বিচারও সে আইনের আওতায় হয়। কিন্তু সরকার নির্বাহী আদেশে অনেক বিষয় বাতিল বা শিথিল করতে পারে। ভূমিকা রাখতে পারে সংসদও।

প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত অনেক ধারা রাখা হলেও আগের আইনের কয়েকটি ধারার সাজা কমানো হয়েছে। এর ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামিন অযোগ্য ধারায় যারা কারাগারে রয়েছেন, তাদের অনেক স্বজন প্রস্তাবিত আইনের ধারা প্রয়োগ করে দ্রুত জামিনের দাবি জানিয়েছেন।

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে, এটি হয়ে গেছে বিতর্কিত। তাই এর আওতায় করা সব মামলা বাতিল করাই শ্রেয়। আবার অনেক আইনজ্ঞের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আদালত তার বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের সময় সাজা কম দেওয়ার যে বিষয়টি রয়েছে, সেটি প্রয়োগ করতে পারে। তাহলে হতে পারে অনেক বিতর্কের অবসান। বিশ্বায়নের এই যুগে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যাপক জনপ্রিয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড এবং মানুষের ভাবের

আদান-প্রদানে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক- ইউটিউবসহ নানা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার হচ্ছে। তবে এর ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপব্যবহারও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও বিচারের জন্য ২০০৬ সালে তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইসিটি আইন করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর এর কার্যক্রম থমকে থাকে। ২০১৩ সালে সাইবার আইনের আওতায় করা মামলা বিচারের জন্য ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল আরো সাতটি বিভাগীয় শহরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে দায়ের করা অনিষ্পন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

সিলেটে সাইবার ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল। ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) পদে পদায়ন করা হয় আবুল কাশেমকে। ওই বছরের ১ এপ্রিল থেকেই সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের গোপনীয় শাখার পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮টি বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজার ৫১২টি মামলা বিচারাধীন। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট মামলা হয় ৭ হাজার ৬৬৪টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৫৫টি। দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাই বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের এক সিনিয়র আইনজীবি বলেন, এই আইন ও ধারা তথা এর সম্পূর্ণ ব্যবহার একমাত্র প্রয়োগ হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের প্রভাবে। তাদের ইচ্ছে মতো এ আইন দিয়ে চলছে মুখ-কলম-প্রতিবাদী কণ্ঠ স্তব্ধ করার অপচেষ্টা। ক্ষমতাসীন কারো বিরুদ্ধে এই আইনের প্রয়োগ বা ব্যবহার চোখে পড়ে না। কারণ এ আইন বাস্তবায়ন করতে যার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি, সেই ক্ষমতাবান হলো পুলিশ। পুলিশ কেবল ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষায় একচোখা ।

সুত্র, দৈনিক ইনকিলাব


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *