১৯৯৬ সালে বিশ্বনাথে বঙ্গবন্ধুর নাম বললে জিব্বাহ কাটার ঘোষনা ছিল

Uncategorized
শেয়ার করুন

স্টাফ রির্পোটার : ১৯৯৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন বিশ্বনাথে কলঙ্কময় ঘটনা ঘাটিয়েছিল বিএনপি। যা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কোন দিন ভূলতে পারেনা। বিএনপির ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক তরফা জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ হলে প্রিজাইটিং পোলিংদের প্রশিক্ষণ দেয়ার তারিখ ছিল। আওয়ামীলীগসহ ১৫ দলীয় জোট এ নির্বাচন শুধু বয়কট করেনি, প্রতিহতও করার ঘোষনা দিয়েছিল। সারা দেশের ন্যায় বিশ্বনাথে তখন উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক আনম শফিকুল হক আগের দিন ৭ ফেব্রুয়ারি বুধরাব সন্ধা ৭টায় বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের (বাসষ্ট্যান্ডের) দ্বিতীয় তলার অফিসে আসেন। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মজম্মিল আলী, বাবুল আখতার, এ এইচ এম ফিরোজ আলী এবং ব্যাংকার তাজ উদ্দিন সহ ৫ জনের এক গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে পরের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্বনাথে বিক্ষেভ মিছিল দেয়ার ঘোষনা দেন। বিশ্বনাথ ডাক বাংলা, আলিয়া মাদরাসা, বিশ্বনাথ নতুন বাজার, রাজনগর রোড থেকে সকাল ১১টায় একযুগে মিছিল বের করার কথা ছিল।
কিন্তু বৈঠকে ৫ জনের মধ্যে একজন ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতির চাচাত বোনের জামাই, তাই এ রাতেই খবর চলে যায় বিএনপির কাছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াছ আলী ও পংকি খান তাদের বাহিনীকে মিছিল প্রতিহতের প্রস্তুতি করে রাখেন।
পরদিন (৮ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পয়েন্টে পয়েন্টে সশ্স্ত্রভাবে অবস্থান নেয়। বিষয়টি মুখে মুখে জানাজানি হয়ে গেলে বিশ্বনাথ বাজারে দোকান পাট প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ফিরোজ আলী বাসযোগে বিশ্বনাথ বাজারে নেমে উপজেলা পরিষদের কাছে পৌছান। এ খবর পেয়ে ইলিয়াস আলী তার বাহিনী নিয়ে ফিরোজ আলীকে আক্রমন করতে পরিষদ এলাকায় আসেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ফিরোজ আলী কৌশলে বিলকিস মার্কেটে চলে যান। তখন তার সাথে ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাই মাহবুবুল হক ও এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। হামলা হতে পারে এই দুজনকে রামসুন্দর স্কুলের দিকে পাটিয়ে দেন।
এদিকে ইলিয়াস আলী উপজেলা পরিষদের প্রতিটি হলে ফিরোজ আলীকে খুুঁজতে থাকেন। এসময় বিশ্বনাথ নতুন বাজার ধান হাটায় তৎকালীন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আছলম খান, আফছর মিয়া (আতাপুর), তজম্মুল আলীকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অপর দিকে বিশ্বনাথ বাসষ্ট্যান্ডে আওয়ামীলীগের অফিসের তালা ভেঙ্গে চেয়ার টেবিল নিচে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি নিচে নামিয়ে পায়ের নিচে পেলে মুছড়াতে থাকেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পংকি খান। তিনি তখন চিৎকার করে অশ্লীল অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে বলেন, বিশ্বনাথ আওয়ামীলীগ যারা করে তারা জারদ সন্তান। আজ থেকে বিশ্বনাথে বঙ্গবন্ধুু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের নাম বলা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হল। বিএনপি ছাড়া যারা আওয়ামীলীগের নাম বলবে, তাদের জিব্বাহ কেটে দেয়া হবে। সে সময় এসব কটুক্তির তীব্র প্রতিবাদ করেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ফিরোজ আলী। তখন নুরুদ্দিন, সফিকুল ইসলাম, মেঘল, ঝুটন সহ বিএনপির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিলকিস মার্কেটের সামনে ফিরোজ আলীর উপর আক্রমন চালায়। প্রথমেই হকিষ্টিক দিয়ে মাথা পাটিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়া হয় ফিরোজ আলীকে। তার পর সফিকুল বুকের উপরে উঠে পিস্তল দিয়ে গুলি করতে চাইলে প্রাণ বাচাঁতে ফিরোজ আলী স্ব-জোরে লাতি দিলে পিস্তলটি রাস্তায় গিয়ে উড়ে পড়ে। এখানে দাঁড়ানো তৎকালীন এসআই মঈন উদ্দিন পিস্তলটি কুড়িয়ে তার পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন। তার পর সন্ত্রাসীরা ফিরোজ আলীর ৬টি দাঁত ভেঙ্গে দেয় এবং দুই হাটু, চোখ থেতলে দেয়া হয় ও বুকের বাম পাশের দুটি হাড় ভেঙ্গে দেয়। এক পর্যায়ে বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের প্রক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের পুত্র তোফায়েল আহমদ, ব্যবসায়ি শেখ মনির মিয়া সহ মার্কেটের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকে মৃত ভেবে পালিয়ে যায়। তখন পুলের মুখে বাবু নগর গ্রামের দলিল লেখক বিনদ বিহারি দাস ‘আমার এলাকার ছেলেটিকে মেরে ফেলা হয়েছে মর্মে চিৎকার করতে থাকেন,। তার পর রামসুন্দর হাইস্কুলের পিয়ন অধির চন্দ্র সহ অন্যান্যদের সহায়তায় ফিরোজ আলীকে ডা: শিবলি খানের চেম্বারে নিয়ে গেলে তিনি রোগীর অবস্থা আশংকাজনক দেখে তাড়াতাড়ি সিলেটে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ফিরোজ আলীকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গভীর রাত পর্যন্ত অপারেশন করা হয়। এসময় আনম শফিকুল হক, ইফতেখান হোসেন শামীম ও মাসুক উদ্দিন সহ অনেকেই হাসপাতালে ছুটে যান। রাতে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শত শত মানুষ হাসপাতালে গিয়ে ভীড় জমায়। এদিকে একদল সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মজম্মিল আলীকে ধরে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করতে চাইলে মীরেরচর গ্রামের রুস্তুম বেগের প্রচেষ্টায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান। হাসপাতালে ফিরোজ আলী দুই দিন চিকিৎসার পর ইনজেকশন পুশ করে তাকে হত্যার চেষ্টা করতে চাইলে একজন নার্সের সহায়তায় আনম শফিকুল হক হাসপাতাল থেকে তাকে নিয়ে আসেন। তার পর তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার কয়েকদির পর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সিলেটে ফিরোজ আলীকে দেখতে এসে বলেছিলেন, ‘বিএনপির মানুষ হত্যার রাজনীতি বেশিদিন টিকবেনা। এ ঘটনায় সিলেটে একটি এজহার লিখে বিশ্বনাথ থানায় পাঠানোর কোন লোক না পাওয়ায় এজহারটি আর দাখিল করা হয়নি। বিএপির সাধারণ সম্পাদক পংকি খান বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসনিাকে কটুক্তি ও ছবি পুড়িয়ে পা-দিয়ে মুছড়ে, আওয়ামীলীগকে জারদ সন্তান বলে এখন কেন নির্লজ্জভাবে আওয়ামীলীগের সভাপতি হলেন ? এ জিজ্ঞাসা এখন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ? পরের ঘটনা জানতে বিশ্বনাথেরডাক ২৪ডটকমের সাথে থাকুন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *