বিশ্বনাথে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন নির্বাচন, কার লাভ কার ক্ষতি ?

Uncategorized
শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার : স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় তারিখ নির্ধারণ নাহলেও সারা দেশব্যাপী মহামারী করোনাকালিন সময়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার কাজ চলছে। করোনায় কর্মহীন  নি¤œ আয়ের মানুষ এখন প্রচারনায় প্রার্থীদের নিকট থেকে কিছু আয় রোজগার করছেন। গ্রামের হাট বাজারের হোটেল-রেস্তুরা, থানা ও জেলা পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারণা খুব জোরে সুরে হচ্ছে। চেয়ারম্যান মেম্বার প্রার্থীদের যাচাই-বাচাই করছেন ভোটাররা। মেম্বার প্রার্থীরা সরাসরি এখন পর্যন্ত  প্রচারণা শুরু না করলেও চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রচারণার কাজ করছেন। এর একটি বড় কারন হচ্ছে দলীয় প্রতীক পাওয়া। দলীয় প্রতীকের জন্য নানা কৌশল কাপড়-চোপড় পড়ে সাজগুজ করে, জনদরদী বক্তব্য, নির্বাচনী ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা, বংশ পরিচয় এবং দলীয় পরিচয়ের চমকপদ বক্তব্য রাখছেন। প্রায় জায়গা মুজিব কোট পরিহিত ব্যক্তিদের প্রচারণা বেশি দেখা যাচ্ছে।

গণমাধ্যমের তথ্যমতে, আগামী বছর ফেব্রæয়ারী বা মার্চ মাসে ইউনিয়ন নির্বাচন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯ সালের তথ্যমতে বর্তমান বাংলাদেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে হওয়ার সম্ভবনার কথা বললেও সরকারের নীতি নিধারনী মহল মনে করছেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগে কোন্দল সৃষ্টি হবে বেশি, অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডরা অর্থের বিনিময়ে নমিনেশন কিনে নৌকার মাঝি বনে যেতে পারে, দলের আদর্শবান ও ত্যাগীরা, অভ্যান্তরীন কুন্দলের কারনে নমিনেশন না পেতে পারেন। আগামী শীত মৌসুমে ইউনিয়ন পরিষদ আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কেউ কেউ বলছেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের জন্য কমশিন প্রস্তুতি গ্রহন করছেন।

ইতিপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা নির্বাচনের সুযোগে প্রায় ৫৫হাজার বির্তকিত সুবিধাভোগী, জামাত বিএনপির হাইব্রিডরা দলে অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ৮হাজার চরম বির্তকিত এবং ৫হাজার আওয়ামীলীগ বিরোধী মতাদর্শে বিশ্বাসী। যে সমস্ত এমপিরা বিভিন্ন কারনে দলের নমিনেশন পেয়ে এমপি হয়েছিলেন, তারা ব্যক্তিগত ক্ষতার ধাপট ও আয় রোজগারের জন্য অন্য দলের সুবিধা ভোগীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে দলের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় নেতারা অনুপ্রবেশকারিদের দল থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিলেও কোন কাজ হচ্ছেনা। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কঠোরভাবে প্রার্থী বাছাই করা না হলে অনুপ্রবেশকারি ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে এবং তারাই তৃণমুলে শিকড় শক্তকরে বসে যাবে। এতে জাতীয় নির্বাচন সহ অন্যান্য নির্বাচনে আওয়ামীলীগ চরম ক্ষতীর সম্মূখীন হতে পারে।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মাত্র ২জন আওয়ামীলীগের প্রার্থী এবং একজন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন এবং বিএনপির ৫জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হন। ৭২টি ওয়ার্ডে ৬৪৮জন পুরুষ ও ২৪জন মহিলা মেম্বার সহ ৭৭২জন মেম্বারের মধ্যে ৮০জন আওয়ামীলীগ এবং বাকী সবাই জামাত বিএনপির মেম্বার নির্বাচিত হন। বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা ছয়ফুল হক কে নৌকা প্রতীক না দেয়ায় তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয় লাভ করেছিলেন। এসবের মূল কারণ হচ্ছে, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক পংকী খাঁনকে ২০১৫সালে ৬জুন সম্মেলনে একটি মহল সভাপতি ঘোষণা করায় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমান উপজেলা কমিটিতে জামাত বিএনপি, রাজাকার পুত্র সহ ১৫জন পদ পদবী নিয়ে বিরাট ধন সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর থেকে বা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০০৯ পর্যন্ত যারা সব কিছু ত্যাগ করে দলের জন্য কাজ করেছেন তারা এখন জামাত বিএনপির চাপে কোনঠাসা হয়ে পড়ে আছেন।

দলীয় নমিনেশন নিয়ে আর্থিক সুবিধার জন্য কিছু লোক দোকান পেতে বসে আছেন। তারা অমুক নেতার কাছে গেলে বড় অঙ্কের টাকা পয়সা খরছ করলে নৌকা প্রতীক পেয়ে যাবেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশায় ভোগছেন। ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘‘যারা মুখে নৌকা অন্তরে ধান, তারা দিচ্ছে এখন জয়বাংলার শ্লোগান’’। নাম ঠিকানা জানা নেই এমন ব্যক্তিদেরও আওয়ামীলীগের নমিনেশন দেয়ার চেষ্টা তদবির শুরু হয়েছে। কেউ কেউ নতুন করে মুজিব কোর্ট পরা শিখেছেন। জন্ম মৃত্যু দিনে স্ট্যাটার্স দিয়ে পূর্ব পূরুষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।

এমতাবস্থায় দলের আসল নেতাকর্মীরা নিরব ভুমিকা পালন করছেন। বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া বলেন, এখন দলে হাইব্রিডদের কোন স্থান নেই। প্রকৃত আওয়ামীলীগরাই সংগঠনে ও নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ জানান, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে প্রতি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে সৎ, ত্যাগী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয় প্রদানে সুপারিশ করা হবে এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনাই যে প্রার্থী দিবেন সেই প্রার্থীই আওয়ামীলীগের হিসেবে গণ্য হবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *