বিশ্বনাথে উরুসের নামে মাদক ব্যবসা করে কোটি পতি : ধ্বংস হচ্ছে সমাজ

Uncategorized
শেয়ার করুন

ডাক ডেক্স: মাদক মানুষের মনুষত্ব, বিবেক জ্ঞান বুদ্ধি বিনষ্ট করে, ধবংস হয় সমাজ। মাদকের ছোবলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের যুব সমাজ, সুনাম নষ্ট হচ্ছে এলাকার। এক সময় বিশ্বনাথ একটি শান্তিপ্রিয় ও অপরাধ মুক্ত এলাকা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এ উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের মাদকের বেছাকেনায় সচেতন মহল বিস্মিত ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন মহল সোচ্চার না হলে নতুন প্রজন্মকে গ্রাস করবে আগ্রাসি এ মাদক।
বিশ্বনাথ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে রামপাশা ইউনিয়নকে মাদকে গ্রাস করছে বেশি। ৭০ দশকের দিকে এই ইউনিয়নের একটি গ্রামে লাগাতার যাত্রাগান হয়েছিল। এই যাত্রা গানের নৃত্যশিল্পী ও কলাকৌশলিরা মদ পান করতেন। তখন থেকেই মদ ছড়িয়ে পড়ে চর্তুদিকে। স্থানীয় কিছু লোকও মাদক সেবন শুরু করে। দীর্ঘদিন একটি বাজারে মদ বেচা কেনা হয়েছিল। এনিয়ে অনেক মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ ও মামলা মোকদ্দমাও হয়েছিল।
বর্তমান রামপাশা ইউনিয়নের পূর্বপাশে শ্রীপুর নামক একটি গ্রামে একজন ভন্ডপীরের বাস ছিল। তিনি নিজেকে পীর দাবি করে জীবিত থাকাবস্থায় উরুসের প্রচলন শুরু করেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদকাশক্তরা এসে আড্ডা জমায় এখানে। সে সময় মদ ও গাজা ব্যতীত অন্য কোন মাদক দেখা যেতনা। এ ভন্ডপীরের মৃত্যুর পর তাকে দাফন করা হয় নদীর তীরে খাস জায়গায়। তার এক নিকটাত্মীয় অতিরিক্ত মদপানে মৃত্যু হলে তাকেও দাফন করা হয় নদীর তীরে। প্রচার করা হয় এই দুই ভন্ডপীরের কল্পনা কাহীনি। বাড়িটি হয়ে উঠে মাদকের অভয়ারণ্য। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দুটি গেইট অতিক্রম করতে হয়। সাংবাদিক কিংবা সচেতন লোকদের ঢুকতে দেয়া হয়না। প্রতি বছর ২ বার উরুসের নামে এখানে মাদকের বিশাল আড়ৎ বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মাদকসেবিরা এখানে এসে ভীড় জমায়। কিন্তু মাদক বিক্রেতা হচ্ছে একমাত্র এই ভন্ডপীরের উত্তরাধীকারিগণ। তারা তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার মদ, গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন সহ মাদক জাতীয় দ্রবাদি উরুসে নিয়ে আসে। ৩/৪ দিনের উরুসের আসরে কোটি টাকার মত ইনকাম হয়। দান দক্ষিনাতো আছেই। এ নিয়ে কিছুদিন আগে ৭ বস্তা টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিচার বৈঠক হয়। এক সময় শতাধিক গরুও উপহার পাওয়া যেত। বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহমান নদীটি ভরাট হওয়ায় এখন নৌকাযোগে আর গরু-মহিষ ও ছাগল আসেনা। আসে নগদ টাকা, না হয় মাদক। এসব টাকা উরুসের পর সপ্তাহ খানেক বাড়ির উঠানে ও ছাদে মশারি টানিয়ে শুকানো হয়। ভাগ বাটোয়ারা দেয়া হয় পাতি নেতা, পুটি নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে। উরুসের সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের চোখ থাকে অন্ধকার। পুলিশের কেউ কেউ নাছ গানেও মগ্ন হয়ে পড়েন। আমাদের হাতে থাকা ভিডিওতে কিছুদিন আগে শেষ হওয়া উরুসে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নারীদের সাথে পোষাক পরে নাচ গান করতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে বিশ্বনাথে মাদকের ছড়াছড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। খবর চলে আসে ভন্ডপীরের মাজার মালিকদের। এসময় ফয়ছল নামের একজনকে গাজাসহ গ্রেফতার করে বিশ্বনাথ পুলিশ। এ ঘটনাটি ছিল মাজার মালিকের কৌশল। ফয়ছল নামের এ যুবক মাজারের একজন নিয়মিত সেচ্ছাসেবক ও নিকটাত্মীয়। কয়েক বছর পূর্বে এই মাজারের গাজা সেবন অবস্থায় একজন এসআই এর ছবিসহ সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তদন্ত শেষে উক্ত পুলিশ সদস্যকে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই মাজারের মাদকের ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য মাজার মালিক পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ফয়ছল নামের যুবককে গাজাসহ ধরিয়ে দেয়া হয়। ফয়ছল গ্রেফতারের পর মাজারের কথিত খাদেম থানায় গিয়ে অন্য একজন লোকের নাম বলার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসে। কিছুদিন পূর্বে এই ফয়ছল মাদক মামলায় হাজতবাস করে জামিন নিয়ে আসে।
স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ এই মাজারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। এবং এলাকার যুবসমাজ মাদক সেবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বলতে গেলে প্রতিদিন রাতেই সবধরনের মাদক সেবন ও বেচাকেনা করা হয়ে তাকে এই মাজারকে কেন্দ্র করে।
অশ্লীলতা বন্ধ করলে এ এলাকা মাদক মুক্ত হওয়ার আশা করা যাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধতন মহলের নজর দিলেই সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *