ডাক ডেস্ক : হবিগঞ্জের তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৭৪৮টি শিশু মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় আসামি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার শিশু। জেলার দুটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বয়স বেশি দেখিয়ে প্রতিবছর অন্তত এক হাজার শিশুকে মামলার আসামি করা হচ্ছে। তাদের অনেকে লজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
মাধবপুর উপজেলার শিমুলঘর গ্রামে গত বছরের ৪ আগস্ট একটি ঘটনায় অমল ভৌমিক নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন। মামলায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আট বছরের এক শিশুকে ১৮ বছর দেখিয়ে আসামি করেন তিনি। এ ছাড়া ১৩ বছরের এক কিশোরকে আসামি করে দেখানো হয় ২৮ বছর।
স্কুলে না গিয়ে এসব শিশুকে আদালতে হাজির হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে আলোচনা হয়।
শিশুরা স্কুলে গেলে খুনসুটি করে সহপাঠীরা। এমন অবস্থায় লজ্জায় স্কুলে যেতে পারেনি এক শিশু। শিশুটি বলে, মামলায় আসামি করায় এবং পুলিশ তার বাড়িতে যাওয়ায় সহপাঠীরা খুনসুটি করে। তাই সে লজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রতি মাসে সে মামার সঙ্গে আদালতে আসা-যাওয়া করলেও কী কারণে আসে, সেটা সে জানে না।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাত্রাবড়বাড়ী গ্রামে পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় মীর দুলাল তাঁর চার চাচাতো ভাই মীর জালাল, ফজল উদ্দিন, চনু মিয়া ও সাজু মিয়াকে আসামি করে মামলা করেন। এমনকি বয়স বেশি দেখিয়ে মীর জালালের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানকে আসামি করা হয়। ফলে স্কুল ড্রেস পরে বাবা-চাচার সঙ্গে হৃদয়কে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে এই মামলায়।
হবিগঞ্জে নারী ও শিশু মামলার পরিমাণ বেশি হওয়ায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে হবিগঞ্জ জেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৭৪৮টি শিশু মামলার মধ্যে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে ২৬৮টি, ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালে ২৭৯টি এবং ৩ নম্বর ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন শিশু মামলার সংখ্যা ২০১টি। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারের জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি শিশু আসামির মামলার সংখ্যা রয়েছে পাঁচ শতাধিক।
হবিগঞ্জ জেলা অ্যাডভোকেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোছাব্বির বকুল বলেন, পারিবারিক বিরোধ ও মারামারির ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ইচ্ছাকৃতভাবেই শিশুদের নাম আসামি হিসেবে দেওয়া হয়। এতে যে মামলা দায়ের করে সে দুটি মামলার সুবিধা ভোগ করে।
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘অনেকেই শিশুদের মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করে। পারিবারিক বিরোধ ও সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা আমাদের সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এ ব্যাপারে যাতে শিশুদের জড়ানো না হয় তার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।’
হবিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, ‘থানায় কোনো অভিযোগ এলে শিশুর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু আদালতে যখন মামলা করা হয়, তখন বয়সের বিষয়টি নিয়ে আমাদের কিছুই করার থাকে না।’