অনলাইন ডেস্ক :: টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই দখল হতে শুরু হয়েছে সিলেট মহানগরীর কোরবানির পশুর হাট। টেন্ডার প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত আগামী মঙ্গলবার আসার কথা থাকলেও টেন্ডার জমা করে এসেই কোরবানীর হাটের কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন। হাটের গর্ত ভরাট, ঘাস পরিষ্কারসহ প্যান্ডেল টানানো পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে একটি চক্রের দখলে।
সিটি কর্পোরেশন বলছেএয়য়, ‘যে বা যারা টেন্ডার পাবে, তারাই টেন্ডার নিয়ে কাজ শুরু করবে। যারা দখল করে কাজ করছে তারা তো টেন্ডার নাও পেতে পারেন। তাই ইজারা সম্পন্ন করতে কোনো রকম বিঘ্নতা না ঘটে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আর কিছু দিন পর মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে কোরবানীর পশুর হাট ইজারা দেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। ৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট নগরীর ২০ নং ওয়ার্ডের টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন আম্বরখানা রোডের খালি জায়গায় ১টি হাটের মাঠ দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। হাটের গর্ত ভরাট, ঘাস পরিষ্কারসহ প্যান্ডেল টানানো পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় দরপত্রে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েও হাটের ইজারা পাবেন কি-না; সেই শঙ্কায় ভুগছেন দরপত্রে অংশ নেওয়া বাকি ইজারাদাররা।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে এবার কোরবানির পশুর ১২টি অস্থায়ী হাট বসানোর জন্য আবেদন পত্র জমা পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ১২টি আবেদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি তবে অন্যদিকে ৬টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি চেয়ে শনিবার (২৪ মে) দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার সর্বশেষ সময় বেধে দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জমাদানের শেষ তারিখ বিকলে দরপত্র খোলা হবে। এরপর সর্বোচ্চ দরদাতাকে দেওয়া হবে হাটের ইজারা।
এবার হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে দরপত্র আহ্বান করা হাটগুলো হলো- সিলেট মহানগরীর মিড়াপাড়াস্থ আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খালি জায়গা, টুকের বাজারস্থ তেমুখী পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, মাছিমপুর কয়েদির মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, মেজরটিলা বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন আম্বরখানা রোডের খালি জায়গা ও শাহপরাণ (রহ.) বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট নগরীর ২০ নং ওয়ার্ডের টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন আম্বরখানা রোডের খালি জায়গা দখল করে হাটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন। শনিবার (২৪ মে) সকাল থেকে ৮/১০ জন ব্যক্তি মিলে বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেল টানানোর কাজ করছেন। কেউ কেউ বাঁশ কেটে সারিবদ্ধভাবে সাজাচ্ছেন আবার কেউ কেউ শাবল (খুন্তি) দিয়ে মাটি খুড়ে বাঁশগুলো মাটিতে পুতে রাখছেন। আবার অন্যদিকে ২/৩ জন ব্যক্তি মিলে বাঁশের মাচার উপর উঠে বাঁশুগুলোকে বেধে মজবুত করছেন।
এইসময় কর্মরত কয়েকজনের সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানান, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন আম্বরখানা রোডের খালি জায়গায় ১টি হাটের মাঠে কাজ করাচ্ছেন অধ্যাপক মাকসুদ আলী, রাহাদ চৌধুরী মুন্না এবং আলমগীর লিলু মিয়া।
এই ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর লিলু মিয়া জানান, ‘টিলাগড় পয়েন্টের এই মাঠ আসলে গরুর বাজারের উদ্দেশ্যে নয় বরং এই মাঠে কি একটি অনুষ্ঠান না-কি একটি ওয়াজ মাহফিল হবে তাই এখানে প্যান্ডেল টানানো হচ্ছে। গরুর বাজার পাবো কি পাবো না, সেটা এখনোও সিওর নয়। ১৬/১৭টি সিডিউল জমা পড়েছে এখান থেকে কে পাবেন তা বলা যাচ্ছে না। আগামী ২৭ তারিখ টেন্ডার ড্রপ হওয়ার পর বাজারের কাজ শুরু হবে।’ এখানে যে বা যারা কাজ করছেন তারা বলছেন এটা গরুর বাজারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- ‘যারা এখানে কাজ করছেন তাদের অন্য কোনো একটি বলয় গিয়ে শিখিয়ে দিয়েছে যে এটা গরুর বাজারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমাদের অনুপস্থিতিতে এখানে কর্মরত লোকদের কেউ শিখিয়ে দিয়ে গেছে যে, কেউ জিজ্ঞেস করলে এই কথা বলার জন্য।’
অধ্যাপক মাকসুদ আলী বলেন, ‘টিলাগড় পয়েন্টের গরুর হাটের ব্যাপারে আমি বলতে পারবো না। এখানে হয়তো আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ এই কাজ করে যাচ্ছে। কোরবানীর পশুর হাট নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল কিনি নাই। তবে রাহাদ চৌধুরী মুন্নাসহ কয়েকজন শিডিউল কেনার কথা আমাকে বলেছেন। এখন পর্যন্ত শিডিউল কিনেছেন কি-না সেটা আমি সঠিক বলতে পারছি না। আমি চাই এলাকায় সুন্দরভাবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই যেনো কোরবানীর পশুর হাট ইজারা যায়। কেউ টিলাগড়ে আধিপত্য বিস্তার, বিশৃঙ্খলা কিংবা ত্রাস সৃষ্টি করুক সেটা আমরা চাইনা।’ টিলাগড় পয়েন্টের গরুর হাটে আপনার নাম আসলো কিভাবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার নাম যদি কেউ বেচিলায় আমি কিতা করতাম। আমার বয়স ৭৯, আমার ওতার সময় আছে নি।’
সিলেট সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ওপেন টেন্ডার খোলা হবে। যে বা যারা টেন্ডার পাবেন তারাই টেন্ডার নিয়ে কাজ শুরু করবেন। এখন যারা দখল করে কাজ করছেন তারা তো টেন্ডার নাও পেতে পারেন। তাই ইজারা সম্পন্ন করতে কোনো রকম বিঘ্নতা না ঘটে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিলেট মহানগরী এলাকায় এইবছর ৬টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি চেয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। আগামী মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুর পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার সর্বশেষ সময় বেধে দেওয়া হয়। এর পরেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কে বা কারা উল্লেখিত এই ৬টি পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন। তবে ১২টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন বাছাই করা হয় নি।’