শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কারনে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

জাতীয় রাজনীতি
শেয়ার করুন

এএইচএম ফিরোজ আলীঃ ১৯৭৫সালে ১৫ আগষ্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যাকান্ডের সময় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা শেখ হাসিনা এখন বিশে^র এক ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী। সেদিন তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহেনা জার্মানিতে ছিলেন। শেখ হাসিনা এখন দক্ষিণ সুরমা এশিয়ার বিবেক, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। তাঁর ক্যারিসমেটিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কৌশলের কারনে বিশে^র শক্তিধর অনেক রাষ্ট্রপ্রধান তাঁেক সমিহ করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূবনে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার আর্বিভাবে এক বিরল ঘটনা। পিতার মতো তাঁর পথ চলা কখনও মসৃণ ছিলনা। ১৯৮১সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। আজ তাঁর ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। আজকের এদিনটি বাঙালির জাতীয় জীবনে অনেক স্মৃতি বিজড়িত আনন্দ ও বেদনার।
১৯৮১ সালের ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারী দুইদিন ব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সমেমলনে শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দলের নেতারা ভারত সরকারের সাথে একাধিক বৈঠক করেন। সে সময় ক্ষমতায় থাকা জিউয়াউর রহমান ও তাঁর দল, পাকিস্তান পন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দল, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল, তারা শেখ হাসিনাকে দেশে না আসতে দেশব্যাপী লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরন করে প্রতিরোধের ডাক দেয়। আকাশবাণী কলকাতা শেখ হাসিনার দেশে ফেরার খবর প্রচার করলে, দলীয় নেতা কর্মীদের দেহে যৌবন ফিরে আসে। গরীর, ত্যাগী নেতাকমীরা নেত্রীকে বরণ করতে ঢাকায় তিন/চার দিন আগ থেকেই কমদামী চার পোকার হোটেলে, মার্কেটের বারান্দায়, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে দিন যাপন করেন লাখো নেতাকর্মীরা। সিলেট থেকে হাজার হাজার নেতা কর্মী সুরমা মেইলে ঢাকায় চলে যান। ১৭ মে দেশের ইতিহাসের এক করুন ও সার্থক ইতিহাস।
১৭ মে দিনটি ছিল রবিবার। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি-ব্রজপাতের মধ্যেও হাজার হাজার নেতা কর্মীরা সকাল থেকে রাস্তায় নেমে পড়েন। সামরিক জান্তা” ও প্রতিরোধকারীরা জনতার ঢল দেখে প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানটি যখন দুপুর ১২টার কর্মিটোলা বিমানবন্দরে অবতরণ করে, তখন সকল শৃংখলা ভেঙ্গে যায়। বিমান থেকে নামতে শেখ হাসিনাকে দেখে হাজার হাজার নেতাকর্মী হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। নিজেও কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে দিলাম। সেই করুন দৃশ্য লাখো কর্মীর জীবন ইতিহাসে বিরল। নেতা-কর্মীদের চোখের জল ও মুষলধারে বৃষ্টি পানি মিলে ঢাকায় আবেগের অপূর্ব এক বন্যা। সেদিন প্রমাণ হয়েছিল, শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। বিমান বন্দর থেকে বনানী হয়ে মানিকমিয়া এভিনিউ যেতে সময় লেগেছিল তিন ঘণ্টা। শেখ হাসিনাকে দেখে অনেক বৃদ্ধ লোক রাস্তার নেমে সেজদায় পড়ে দোয়া করেছিলেন।
পিনপতন নিরবতার মধ্যে প্রায় ১০/১২ লাখ মানুষের সামনে দুই হাত তুলে শেখ হাসিনা কান্না শুরু করেন। তখন সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। এমন কোন দিন লোক সেদিন । নেতা কর্মীদের বুকফাটা আর্তনাদ ছিল যেন মা মরার কান্না ছিল। পাগল জনতার স্রোত দেখে পরাজিত শত্রু ও সামরিক জান্তার সকল চক্রান্ত বানের পানির মতো ভেসে যায়। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ” আমি আওয়ামীলীগের নেত্রী হতে আসেনি। বাংলার মানুষের পাশে থেকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করতে এসেছি। আমি আপনাদের মেয়ে-বোন হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হয়ে পাশে থাকতে চাই। নেত্রীর এমন বক্তব্য শুনে হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীরা দলকে সু-সংগটিত করতে দুই হাত তুলে শপথ করেছিলেন।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গী পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রথম সন্তান। দাদা লুৎফর রহমান ও দাদী সাবেরা খাতুন অতি আদরের বড় নাতিনকে হাসু বলে ডাকতেন। তখন তরুন শেখ মুজিব আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত থাকায় পিতার সান্নিধ্য কম পেয়েছেন। গ্রামের করাল কোফা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পিতা বঙ্গবন্ধু জয়লাভের পর ৭বৎসর বয়সে শেখ হাসিনা পুরান ঢাকার রজনীবুস লেনের বাসা ভাড়ায় উঠেন এবং টিকাটুলি নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি হন। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু জয়লাভ করে এ বৎসর ১৫ মে মুখ্যমন্ত্রী শেরে-বাংলা একে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভার সদস্য হওয়ায় মিন্টু রোডের বাসায় উঠেন। তারপর তিনি আজিমপুর গালস হাই স্কুলে ভর্তি হন, তখন আইয়ুব খান পৌরনীতি বইয়ে তার জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার নবম শ্রেণীর পৌরনীতি প্রশ্নের উত্তর পত্রে শেখ হাসিনা কঠোর সমালোচনা করায় শিক্ষক তাঁর উত্তরপত্র বাতিল করেন। ১৯৬৫ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ৫৬ সালের ইডেন কলেজে ভর্তি হন এবং স্থানী সংসদের ভিপি এবং কলেজ ছাত্র লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অর্নাসে ভর্তি হন এবং রোকেয়া হলের ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর ঠিক করে ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রংপুরের আওয়ামীলীগ নেতা মতিয়ার রহমান বিয়ের ঘটকালী করেছিলেন। ১৮ নভেম্বর নবদম্পতি জেল গেইটে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে বঙ্গবন্ধু আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তিনি চেয়ে ছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিবাহ হউক। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ছয় দফাকে ১১ দফায় প্রনয়ন করলে শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ মিয়া ইকবাল হলে ছাত্রনেতাদের সাথে মিলিত হয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের একটি লিখিত দলিলে ডাকসু’র ভিপি তোফায়েল আহমদ ও ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রূপ তাতে স্বাক্ষর করার পর ক্যান্পনমেন্টে বঙ্গবন্ধুর নিকট নিয়ে গেলে তিনি ১১ দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
৭১-৭৫ এর ঘাতকদের পরম শত্রু শেখ হাসিনা। প্রতিটি মুহুতে তাকে মৃত্যুভয়ে তাড়ায়। তিনিও বলেন, ‘আমি জীবনের জন্য ভীত নয়, আমি ভীত হলে গোটা জাতী ভীত হয়ে পড়বে। আমি থামবো না, আমি তাও জানি আমার জন্য কিছু বুলেট অপেক্ষা করছে। শেখ হাসিনার উপর ২১ বার হামলা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড সরাসরি তাঁর উপর হামলা ছিল নাজিরবিহীন। এ হামলায় প্রয়াত রাষ্টপ্রতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। ৯৩ সালের ১৫ দিন, ৮৪-৮৫ সালের ফেব্রুয়ারী ও নভেম্বর মাসে গৃহবন্দী করা হয় শেখ হাসিনাকে। ৮৫ সালে তিনি তিন মাস বন্দী ছিলেন । ৮৮ সালে চট্টগ্রাম লালদিঘী ময়দানে শেখ হাসিনার উপর হামলা করা হলে ৩৮ জন নিহত হন। ৯০ সালে ঈশ^রদী রেলস্টেশনে বন্দুকধারীরা শেখ হাসিনার রেলের কামরায় গুলিবর্ষন করে। ২০০০ সালে কোটালীপাড়া ৭ ৬ কেজি ওজনের বোমা ফুটানি ঝাড়ায় ডুবিয়ে রাখা হয় হত্যার জন্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৮ মাস, ২০০৭ সালে সেনাশাসিত সরকারের আমালে বন্দী হলে ২০০৮ সালের ১২ জুন মুক্তি লাভ করে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ২৬৪টি আসন লাভ করেন এবং বর্তমানে তিনি চতুর্থ বারের মত বিশ্বে এক সফল ও অর্থনৈতিক প্রধানমন্ত্রীর খাতি অর্জন করেন।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিচক্ষনতা ও তার রাষ্ট্র পরিচালনা, উন্নয়নের মাধমত্তার কাছে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষী সুনাক রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, সরকারি টাকায় গৃহহীনদের বাড়ীঘর নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তাকে সফল অর্থনৈতিক নেতা হিসেবে অবহিত করেন। শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারে প্রেরণা বলে বিশে^ ঢোল পিঠিয়ে দিয়েছেন। আর নেট দুনিয়ায় এ নিয়ে রীতিমতো তুলপাড় উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেখ হাসিনাকে মানবিক প্রধানমন্ত্রীর আখ্যা দিয়ে তাঁর ভূয়শী প্রশংসা করেন।
এমন বিশ্ব জুড়ে। ৯৬ সালের নির্বাচনে ২১ বছর পর বাংলা বা গরিবট বা অর্জন করে বঙ্গবন্ধু ও মানবতা বিরোধীদের কি সংসদে ইনতেম নিফাজিল বাতিল করে দুঃসাহসী যাত্রা শুরু করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক সাফল্য বিশ্বে নজর কাড়ে জোয়। সে ক্যান্টনার যোগ্য নেতৃত্ব দশ ফুটচোতা ইবপর তার ২০১২ ধসধ বাংলাদেশ মিয়ানমার ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যেকার সমুদ্র সীমানা সামলা বিধি করে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সার্বভৌমর পাতা ২০০৯ সালে ৪১% মানুষের দারিদ্রতা কমিয়ে ৭৪% আনা বিশ্ব বিষয় নেকও। বাদায় খানি বুদ্ধি ছিউসাহস বিনিময়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সান্তি স্বাক্ষী পদ্মা। মুমুনা সেতু। রাজধানী উড়াল সেন, মেট্রোরেল নির্মান। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অবকাঠামোগত উননয়ন । কিনা সূল্যে বই বিতরন। পর্যটন মিশেদের উপনয়ন। বিদ্যুৎ উৎপাদন সামাজিক বিরাজ মাতে মাধু মেঘে সিহ অসংখ্য এই ভাষা প্রণয়ন, কররণার সময়। কিনা দশে টিকা ৎ সাদ্য বিতরণ ছিল লোম
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের মতে, ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পারিণত হবে। কাতার, ওমান, ভিয়েতনাম, নিউজল্যান্ড, মিশর সহ ১৫টি দেশকে টপকে গেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে জিডিপি স্থিত ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৬ শত কেটি টাকা। ২০৩৩ সালে হবে ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৩শত কোটি টাকা। যুক্তরাজ্যের প্রাইস ওয়াটার হাউস কোপাস বলেছে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে একটি হবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদুত পিটার হাস বলেছেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর বিস্ময়কর। দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সবচেয়ে বেশি অবদানকারী দেশের নাম বাংলাদেশ। যে কারনে বাংলাদেশের সফলতার গল্প এখন বিশ^জুড়ে। ইতিহাসবিদদের মতে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য জীবনের প্রায় ১৩টি বছর জেলে বন্ধি ছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করলেও পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে না আসলে ইতিহাস অন্যরকম হয়েযেত। ঠিক তেমনিভাবে ১৫ই আগষ্টের কালরাতে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা মানুষের টানে দেশে ফিরে বাংলাদেশকে একটি উন্নত মর্যাদাশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছেন।
পরিশেষে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, ধ্বংসযঙ্গের মধ্যে যে পাখিটি টিকে থাকার সক্ষমতায় দেখায়, ভস্মের মধ্য থেকে উড়াল দেয়ার রূপকথার পিনিক্স পাখির মতো আমাদের দেশরত্ম শেখ হাসিনা জীবন মৃত্যুর মুখামুখি দাঁিড়য়ে সকল সমালোচনা বেধ করে আজ তিনি বাংলাদেশের এক সফল রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর হাতেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা পাবে।

লেখক,
কলামিষ্ট ও সমাজ বিশ্লেষক


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *