লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের

আন্তর্জাতিক জাতীয়
শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহ’র মধ্যকার যুদ্ধ ক্রমশ বাড়তে থাকায় লেবাননে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের অন্যান্য মিত্র দেশগুলো।

১১ টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সমস্যার ‘কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য সুযোগ করে দিতে’ অবিলম্বে ২১ দিন লড়াই বন্ধ রাখা এবং গাজায়ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।

একটি যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছে যে এই ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ অসহনীয় এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, এর কোনোটিই ইসরায়েল বা লেবাননের জনগণের স্বার্থে নয়।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এমন সময়ে এল, যখন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান তার সৈন্যদেরকে বলেছিলেন যে হেজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা তাদের জন্য ‘শত্রুদের এলাকায় প্রবেশের’ পথ তৈরি করে দিতে পারে।

আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হালেভির মন্তব্যটি এটাই ইঙ্গিত করে যে লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দ্বারা একটি স্থল অভিযান হয়তো আসন্ন।

যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও কাতার।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব নেতাদের বৈঠকের পরে এটি হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, এই সমস্যা নিষ্পত্তি করার সময় এখনই যা “বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে বাড়ি ফিরতে দিবে।”

বর্তমান শত্রুতা “অনেক বড় এলাকাজুড়ে সংঘাত ও বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির” বার্তা দেয়।

“তাই আমরা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কূটনীতির মাধ্যমে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছি। যাতে করে সীমান্ত জুড়ে আরও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়।”

প্রেসিডেন্ট বাইডেন গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলেন। তখন তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের জন্য “উল্লেখযোগ্য সমর্থন” রয়েছে।

এর আগে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন ও বলেছিলেন যে সেখানে “নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে”।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজব মিকাতি বলেছেন যে তার দেশ “ইসরায়েলি শত্রুদের নৃশংস আচরণের কারণে সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘনের সম্মুখীন” হয়েছে।

তিনি যোগ করেছেন যে তিনি আশা করছেন, একটি “যথাযথ সমাধান” পেয়ে তিনি জাতিসংঘের অধিবেশন ছেড়ে যেতে পারবেন।

তিনি “অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি” করার কথাও বলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স তার কাছে জানতে চেয়েছিলো যে শীঘ্রই যুদ্ধবিরতি হতে পারে কি না, উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আশা করি, হ্যাঁ।”

এর আগে কথা বলেছিলেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত ড্যানি ড্যানন। তিনি বলেছিলেন যে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি এড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু “আমাদের লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সমস্ত উপায় বের করতে হবে।”

তিনি বলেন, “ইসরায়েল পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ চায় না” এবং তারা তাদের শান্তির আকাঙ্খাকে “স্পষ্ট” করেছে।

তিনি আরও যোগ করেন যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে এসে পৌঁছাবেন। তারপর তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। পরদিন সকালে তিনি সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দিবেন।

বিস্ফোরিত ওয়াকিটকিতে ‘আইসিওএম-ভি৮২’ লেখা দেখা গেছে

যে কারণে এবারের যুদ্ধ

গত ১৭ই সেপ্টেম্বর লেবাননজুড়ে একযোগে পেজার (যোগাযোগযন্ত্র) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তারপর আবার রেডিও ডিভাইস বা ওয়াকিটকি বিস্ফোরিত হয়।

এই দুই আলাদা ঘটনায় লেবাননে কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ এই ঘটনার পেছনে ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছে। যদিও ইসরাইল এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

তবে এই ঘটনা পর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছেই।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, লেবাননে ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় অন্তত ৪৯২ জন নিহত হয়েছে।

তারা বলছে এটি গত বিশ বছরের মধ্যে প্রাণহানির দিক থেকে সবচেয়ে সংঘাতময় দিন।

হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে হেজবুল্লাহ’র গড়ে তোলা অবকাঠামো ধ্বংস করতে তারা তেরশ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।

অন্যদিকে, হেজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে দুশো রকেট ছুড়েছে বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। এতে দু’জন আহত হয়েছে। সুত্র-বিবিসি নিউজ বাংলা


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *