নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বনাথ উপজেলার ৪নং রামপাশা ইউনিয়নের ‘আমতৈল পঞ্চগ্রাম মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদরাসাটি’ ১৯৯৯সনে প্রতিষ্টিত হলে ২০১৯সালে এমপিও ভুক্তি করণ করা হয়। খুব অল্প সময়ে মাদরাসাটি দুর্নীতির আখড়া বা ‘খনি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ প্রতিষ্টানটির ঘুষ, দুর্নীতি ও জ¦াল জালিয়াতির ঘটনা শুনে যে কেউ বিস্মিত হবেন। প্রতিষ্টানটির চরম অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও জ¦াল-জ¦ালিয়াতির ঘটনা লেখতে যেন হাত কাঁপছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার স্থানীয় একদল সাংবাদিক সরজমিনে মাদরাসার দুর্নীতির বিষয়ে জানতে ঘটনাস্থলে গেলে খবর পেয়ে সুপার মাদরাসায় উপস্থিত হননি।
মাদরাসার দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ৪নং রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় মাদরাসা সুপার রায়হান উদ্দিন, বর্তমান সভাপতি আলা উদ্দিন ও বিশ্বনাথ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দে কে অভিযুক্ত করে বিশ^নাথ থানায় একটি এজহার দায়ের করেছেন। ইতিপূর্বে এ মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির ও এমপিও ভুক্তি শিক্ষকদের বকেয়া বেতনের টাকা জ¦াল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্নসাতের অভিযোগ দেয়া হলে কোন প্রতিকার নেয়া হয়নি।
থানায় দাখিলকৃত এজহারে আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করে সরল বিশ^াসে জমশেরপুর গ্রামের মাওলানা রায়হানকে ইবতেদায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিছুদিন পর মাওলানা রায়হান উদ্দিন সভাপতি আজিজুর রহমান, ইউএনওসহ শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সকলের স্বাক্ষর জ¦াল করে নিজেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সুপার হিসেবে নিয়োগের কাগজপত্র জ¦াল-জ¦ালিয়াতি করে দাখিল করেন। তখন সভাপতি আজিজুর রহমানের স্বাক্ষর জ¦াল করে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে আজিজুল হক নামের একজনকে কম্পিউটার অপারেটরকে নিয়োগ প্রদান করেন। প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত যে সকল শিক্ষক সরকারি চাকুরীর আশায় পরিশ্রম করেছেন, তাদেরকে বাদ দিয়ে ১৫/১৬ জনের নিকট থেকে ৪ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নিয়ে তাদের নামের তালিকা শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করেন মাদ্রাসার সুপার রায়হান উদ্দিন। শুধু তাই নয়, এমপিও ভুক্তি প্রাপ্ত শিক্ষকদের সরকার প্রদত্ত ১৭ মাসের বকেয়া বেতন প্রায় ৪০ লাখ টাকাসহ মোট প্রায় ১ কোটি টাকা জ¦াল জালিয়াতি ও প্রতারনার মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন বলে এজহারে উল্লেখ করা হয়।
ছাতক উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের মিয়াজান আলীর পুত্র নুর উদ্দিনকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ৪ লক্ষ টাকার চুক্তিকরে ১ লক্ষ টাকা নগদ গ্রহণ করেন রায়হান উদ্দিন। বাকী ৩ লক্ষ টাকা প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় পাবনার শহিদুল ইসলাম নামের আরেক জনের নিকট থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। টেলিফোনে নুরুদ্দিন এ প্রতিনিধির নিকট ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও জ¦ালিয়াতির ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছেন, প্রতিষ্টানটির বর্তমান সভাপতি আলা উদ্দিন। ঘুষ, দুর্নীতির মুল নায়ক সুপার রায়হান উদ্দিন হলেও নেপথ্যে নায়ক হচ্ছেন, মাধ্যমিক কর্মকর্তা সমীর কান্তি দে।
মাদরাসা সুপার অভিযুক্ত রায়হান উদ্দিন সাংবাদিকদের টেলিফোনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জানান, ঘুষ, দুর্নীতির সবগুলো অভিযোগ সত্য নহে।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে, প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলাকাবাসীসহ আমতৈল গ্রামের হুমায়ুন রশিদ ও মাফতাব উদ্দিন মাদরাসার জ¦াল-জ¦ালিয়াতির ও কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবী জানিয়েছেন।