স্টাফ রির্পোটারঃ বর্তমান সময়ে মাদকাসক্তরা পরিবার ও সমাজের মূল অশান্তির কারন। অসৎ সঙ্গে বা সখে অনেকেই মাদক সেবন করে থাকেন। এক সময় মাদকাসক্তদের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। যে কারনে মাদক সেবনকারীরা নেশাগ্রস্ত হয়ে খুন খারাবি, ধর্ষন সহ অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। অনেক নামীদামি পরিবারের সন্তানরা মাদকাসক্ত হয়ে জীবন ধ্বংস করছে। বিশ্বনাথে কোন সময়ে মাদক ব্যবসার নাম গন্ধও ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছরে হাতে গোনা কিছু মাদক ব্যবসায়ীর কারনে এখন পুরো একটি জেনারেশন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
বিশ্বনাথে সু-দূর অতীতে বিভিন্ন মাজারে ওরসের নামে মদ ও গাঁজা সেবন করতো এক শ্রেণীর লোক। সময়ের ব্যবধানে অত্যাধুনিক ইয়াবা, হিরোইনসহ বিভিন্ন মাদক এখন বিশ্বনাথে প্রবেশ করছে। সিলেট তথা বাংলাদেশের সেরা মাদক সম্রাট তবারকের নাম এখন সবার মূখে মূখে। কিন্তু কয়েকজন কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ী এখনও ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। দীর্ঘ সময়ের অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব ব্যবসায়ীরা সবদিক ম্যানেজ করে নিরাপদে মাদকের ব্যবসা চালিয়া যাচ্ছেন।
লামাকাজী ব্রিজের পূর্বপাড়ে সুরমা নদীর তীর এলাকায় বাশির আহমদ নামে একজন বড় ধরনের মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। সে প্রথমে নাসির উদ্দিন বিড়ির ব্যবসা করলেও গত কয়েক বছর ধরে গাজা মদ ইয়াবা ও হিরোইনের পাইকারী ব্যবসার সাথে জড়িত। তার দু’পুত্র লিয়াকত ও কাওছার সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় ও সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুচরা ডিলার নিয়োগ করে মাদক সরবরাহ করে থাকে। লামাকাজী বাজারে তার কয়েকটি দোকান রয়েছে। সে ইয়াবা গাজার বড় বড় চালান জল ও সড়ক পথে পরিবহন করে থাকে। কিন্তু এ পর্যন্ত সে ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের একটি এলাকায় এফজেড সুমন নামে একজন তরুন আর্ন্তজাতিক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। ৪/৫ বছর পূর্বে সে নরসিংদী এলাকায় ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তদবির করে তাকে ছাড়িয়ে নেন। মূলত সে এলাকায় পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকে। এলাকায় মাস দুয়েকের মধ্যে তাকে দেখা যায় না। রাতের বেলা মাঝে মধ্যে ঘুরাফেরা করে থাকে। কম্পিউটারের মাধ্যমে সে মাদকের চালান সরবরাহ ও পার্টি পরিচালনা করে। এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে টুশব্দ পর্যন্ত করতে পারে না। সে ইয়াবা ব্যবসায় ‘তেরেনাম’ ব্যবহার করে থাকে। দৌলতপুর ইউনিয়নের চাউলধনী হাওরের দক্ষিণ পাড়ে ইরান, তুহিন, ছমিরুন নামে এই তিনজন গাজার পাইকারী ডিলার হিসেবে ব্যবসা করছে। উত্তরপাড়ের এক গ্রামে আজাদ নামে এবং পূর্বপাড়ে ইছহাক নামে একজন ভয়ংকর ইয়াবা ও হিরোইন ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদ প্রতিরোধ করলেও কোন কিছু করতে পারেননি। কেউ কেউ মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হলেও ইয়াবা সিন্ডিকেটরা তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। এক সময় তুহিন, ছমিরুন বালাগঞ্জ ওসমানীনগর সহ বিভিন্ন উপজেলায় ঝুপরি ঘরে গোপনে মাদক ব্যবসা করতেন। কিন্তু তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এখন তারা এই এলাকায় ব্যবসা করছে। খাজাঞ্চী ইউনিয়নের মুফতির বাজারের পাশ্ববর্তী একটি গ্রামে আজগর আলী নামে একজন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সদর উপজেলার পুটামারা গ্রামে তার এক মেয়ের জামাই তাদেরকে ইয়াবা, মদ, গাজা সরবরাহ করে থাকেন। কাদিপুরের লামারচক এলাকায় সন্ধার পর মাদকের হাট বসে। সেখানে নামীদামি গাড়ী নিয়ে অনেকেই মাদক সেবনে যায়। বিষয়টি অনেকে জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ পুলিশের সোর্স পরিচয়ে ও পাতী নেতাদের সেল্টারে মরণ নেশা মাদকের ব্যবসা করছে।
এভাবে বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন বড় বড় বাজার ও চিহ্নিত কিছু এলাকায় ইয়াবা, মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। এতে অনেক তরুণ মাদক কাছে পেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। হাতে গোনা কয়েক মাদক ব্যবসায়ী কোটিপতি হলেও বিশ্বনাথের একটি জেনারেশনকে ধ্বংস করছে তারা। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন সহ স্থানীয় জনতা প্রতিরোধ গড়ে না তুললে সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংশ হয়ে যাবে।