আব্দুস সালাম ও আবু সুফিযান, বিদ্যুৎ এখন মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন চলেনা। অক্সিজেনের মতো বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার না জানলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দূর্ঘটনা। বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারনে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে দূর্ঘটনা। এমনি ধরনের একটি ঘটনাস্থল হচ্ছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের মির্জারগাঁও এলাকা। এখানে যে কোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ বিদ্যুৎ দূর্ঘটনা। ঘটতে পারে প্রাণহানির মত ঘটনা আর সম্পদের ক্ষয়কতি।
বিদ্যুৎ বিভাগের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারিরা অর্থের বিনিময়ে বিদ্যুৎ লাইন প্রদানের নামে মানুষ হত্যার ফাঁদ বসিয়ে দিয়েছে। লামাকাজি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মির্জারগাঁও থেকে পূর্ব বীরেরগাঁও পর্যন্ত বাঁশের খুটি, গাছের ডালে ঘরের পালায়, বন জঙ্গলে ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এভাবে প্রায় ৭০০ গ্রাহক কে বিদ্যু লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের সুনিদিষ্ট খুটি না থাকায় এসব লাইন নুইয়ে পড়ে মাটি থেকে প্রায় ৫/৬ ফুট উপরে রয়েছে। বিদ্যুতের লাইন ঘরের চাল ঘরের বেড়ার সাথে ঝুলিয়ে লাইন টানা হয়েছে। এসব লাইনের নীচ দিয়ে আবার প্রতিনিয়ত শিশু সহ অনেক লোকজন চলাফেরা করছেন। এর মধ্যে কেবল তার বা উন্নতমানের তার না দিয়ে এক ঘরনের হালকা তার দিয়ে খুটি ছাড়াই অনেক দুর পর্যন্ত লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বাংলাদেশের কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নেই।
সরেজমিনে গিয়ে লোক জনের সাথে আলাপ করে জানাযায়, অনেক বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মিটার নেই। মেইন লাইন থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত ড্রপ লাইন টেনে মিটার দেয়ার নাকি নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখানে প্রায় ৫০০ ফুট দুরত্ব পর্যন্ত ড্রপ লাইন টেনে সংযোগ দেখা গেছে। এই এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগ টাকার খনিও পেয়েছে। সহজ-সরল গরিব নিরিহ মৎসজীবি গ্রামবাসির নিকট থেকে নানা কৌশলে ওয়াবদার কর্মকর্তা কর্মচারিদের নির্দিষ্ট হারে মাসিক মাসুহারা নিয়ে থাকেন।
মজার বিষয় হচ্ছে, বিদ্যুতের প্রয়োজনে একজন গ্রাহক ৪০/৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ১টি লাইন অলিখিত অনুমতি নিয়ে লাইন বাড়িতে সংযোগ দেন। এই লাইন থেকে অন্য কাউকে কোন সংযোগ দেয়া হয়না। এটা ওয়াবদার কর্মচারিরা কৌশল অবলম্বন করেছেন। ফলে প্রত্যেক গ্রাহক এক একটি করে টাকার বিনিময়ে লাইন সংগ্রহ করছেন। একটি লাইনের সাথে ১৫ থেকে ২০টি লাইন সংযুক্ত করে টানানো হয়েছে। অনেক গরিব অর্থাভাবে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে না পেরে অন্ধকারে রয়েছে। কোন কারনে লাইনে ধাক্কা বা আঘাত প্রাপ্ত হলে এ অঞ্চলে ভয়াবহ বিদ্যুৎ দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই এলাকাটি মৎসজীবি সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করেন। ফলে তাদের মধ্যে বিদ্যুৎ দূর্ঘটনা সম্পর্কে তেমন সচেতনতা আছে বলে মনে হয়না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল কালাম বিদ্যুতের এলাপাতাড়ি লাইন পরিবর্তন করে শক্তিশালি ক্যাবল ও খুটি দাবি করে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাঁর কথা কেউ কর্ণপাত করছেন না। আবুল কালামের অভিযোগ বিদ্যুতের লাইন বাংলাদেশের কোথাও এভাবে টানা হয়নি। অনেক দুর দুর বিদ্যুতের খুটি দিয়ে মাটির সামান্য উপরে লাইন টানার কারনে বর্জপাত কিংবা লাইনে মানুষের আঘাতে আগুন লেগে এলাকায় ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমি মানুষের জীবনমাল রক্ষায় সরকারি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। কিন্তু আমার অভিযোগ তারা আমলে নিচ্ছেন না। কোন দূর্ঘটনা ঘটলে সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের সব দায় দায়িত্ব বহন করতে হবে।
সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ৪ কুমার গাঁও আখালিয়াস্থ অফিসের সহকারি উপ-প্রকৌশলি তানভির আহমদ জানান, সরকারি বিধান মতে মেইন লাইন থেকে ১০০ ফুটের ভেতর মিটার স্থাপন করতে হবে। কিন্তু এক হাজার ফুট পর্যন্ত কি ভাবে মিটারের লাইন টানা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন, সিলেট এসে এই প্রতিনিধিকে নিয়ে আরো বিস্তারিত আলাপ করবেন। এ অফিসের প্রকৌশলি জয়নাল আবেদীন জানান, প্রকল্পের মাধ্যমে এই এলাকায় খুটি দিয়ে সংযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার আবুল কালাম লিখিত ভাবে জানিয়েছেন দুএক দিনের মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। উপরের ছবিতে মাটির উপরে, টিনের ঘরের বেড়ায়, এবং বাঁশের খুটিতে বাঁধা বিদ্যুতের লাইন দেখানো হয়েছে।