নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সংবাদ শিরোনাম দেখে অবাক-বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। এমন বাক্য বা শব্দের আবিস্কার করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলার প্রয়াগমহল তপশীল অফিস। গাছ কাটার মামলা হত্যা মামলার চেয়ে আরো ভয়ংকর। এমন ভয় দেখিয়ে ঘুষ চেয়ে না পেয়ে গাছ কাটার একটি মামলা দায়ের করা হয় যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইন্তাজ আলীর নামে। ইন্তাজ আলীর বাড়ী বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের দ্বীপবন্দ বিলপার গ্রামে।
জানা যায়, ইন্তাজ আলী ছোট বেলা যুক্তরাজ্য চলে গিয়েছিলেন। বাড়ীতে তাঁর বড় বোন সত্তর বছর বয়স্ক সোনাবান বিবি বসবাস করতেন। প্রায় ২০/২৫বছর পূর্বে সোনাবান বিবি বাপ-দাদার ও ইন্তাজ আলীর খরিদা ভূমিতে নিজেই ছোট ছোট গাছ রোপন করেছিলেন। গত বছর জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে ইন্তাজ আলী অসুস্থ্য বোনকে দেখতে বাড়ীতে এসেছিলেন। সোনাবান বিবি তাঁর রোপনকৃত কয়েকটি গাছ লাকড়ীর জন্য কাঠেন। ইন্তাজ আলী গাছ কাটার বিষয়টি জানতেন না। গাছ কাটার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে নিয়ে তফশীল অফিসের ভূমি উপ সহকারি খালেদ আহমদ ইন্তাজ আলীর বাড়ীতে গিয়ে বলেন, গাছ কাটার মামলা খুনের মামলার চেয়ে ভয়ংকর!। তাই ২লক্ষ টাকা দিলে আপনাকে গাছ সমজিয়া দেয়া হবে এবং কোন মামলা হবে না। ধর্মভিরু ইন্তাজ আলী জানান, গাছ কাটার কথা আমি জানিনা, সরকারি জায়গায় গাছ হলে আপনারা নিয়ে নিবেন, না হয় ক্ষতিপূরণের টাকা সরকারের ঘরে জমা দেব। কিন্তু ঘুষ দিতে পারবো না। পরদিন বিশ^নাথ সহকারি কমিশনার ভূমির কার্যালয়ে যান। সেখানে তাঁকে একই আচরন করে অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়। তারপর সহকারি কমিশনার ভূমি থানায় অভিযোগ পাঠালে, ইন্তাজ আলীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৪৪৭/৩৭৯/৪২৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-২২, তাং-২৭-০২-২০২২ইং)। মামলায় অভিযোগ করা হয়, পুসনি মৌজার বিএস খতিয়ানের ৮৩৮দাগের ভূমি থেকে গাছ কাটা হয়, অথচ ৮৩৮নং দাগটি নদীর জলপ্রবাহ রয়েছে। বিশ্বনাথ থানা পুলিশ তদন্ত করে হাস্যকর এ মামলাটি আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে।
বাদী খালেদ আহমদ ফাইনাল রির্পোটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দাখিল করলে আদালত সিলেট পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই তদন্ত শেষে ইন্তাজ আলীকে মামলা হতে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর বোন সোনাবান বিবি’র বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। ২০ মার্চ সোমবার সোনাবান বিবি বিশ্বনাথ আমলগ্রহণকারী আদালত-৩ এর ম্যাজিষ্ট্যাট ফারজানা সাকিলা সমু এর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। ৩জন মহিলা সোনাবানকে হাত ধরে নিয়ে আদালতে হাজির করেন। সোনাবান হৃদরোগ, ডায়েবেটিকসসহ বিভিন্ন রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভোগছিলেন। সোনাবান বিবির আইনজীবি এএসএম গফুর জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদালত প্রাঙ্গণে এমন একজন বয়স্ক ও অসুস্থ্য মহিলার বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করায় অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করেছেন। মামলাটির বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনের অপেক্ষা করুন।