ডেক্স রিপোর্ট : বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলোচিত সমালোচিত অনুপ্রবেশকারি পংকি খান নিরুপায় হয়ে নিরবে চলে গেলেন যুক্তরাজ্যে। যাওয়ার বেলা তিনি অনেকের নিকট ক্ষমা ও দোয়া চেয়ে গেছেন। তার ঘনিষ্টজনদের মতে, তিনি হয়তো দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে থাকবেন। রাজনীতির মাঠে হয়তো তাকে আর নাও দেখা যেতে পারে। এ কথাটি অনেকেই মানতে নারাজ। কারন পংকি খান ছিলেন একজন সুবিধাভোগী লোক। সুবিধা যেখানে পংকি খানের উপস্থিতি সেখানে। পংকি কানের বিরুদ্ধে সিলেটের একটি আদালতে দূনীতির মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তাঁর বলয়ের নেতারা কমিটি থেকে ছিটকে পড়ায় পংকি খানের এই বিদেশ যাত্রা বলে অনেকেই মনে করছেন। এরশাদ সরকারের আমলে পংকি খান জাতীয় পার্টি করতেন। তার পর তিনি ইলিয়াস আলীর হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর চেয়ে বেশি ক্ষতার দাপট দেখিয়েছেন পংকি খান। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী, বঙ্গবন্ধুর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পুড়ানো, মরহুম স্পীকার হুমায়ুন রশীদকে লাঞ্চনা, শেখ হাসিনার গাড়ি বহর আটক, গুলি করে আওয়ামীলীগের ৭০ জন নেতাকর্মীদের আহত, মরহুম আনম শফিকুল হক ইফতেখার হোসেন শামিমকে মিথা মামলায় আসামি করা সবই ছিল পংকি খানের কাজ। ২০০৯ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে নিখোঁজ ইলিয়াস আলী পরাজিত হওয়ায় লেবাস পাল্টে দেন পংকি খান। তিনি নিজেকে আওয়ামীলীগ দাবি করে নেতাদের বাসায় বাসায় ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি নির্বাচিত সিলেট ২ আসনের সাংসদের সেল্টার পেয়ে যান। কোনঠাসা করতে থাকেন আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের।
২০১৫ সালের ৮ জুন উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদটি ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে কিনে নেন পংকি খান। এদিনের পর থেকে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগ। অভিযোগ চলে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তাতে ক্ষুদ্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের বৈঠকে পংকি খানকে সভাপতি করে প্রস্তাবিত কমিটি স্থাগিত ঘোষনা করেন শেখ হাসিনা। তার পর কিছু দিন চলে যায় এভাবেই। শুরু হয় আবার অর্থ লেনদেন। সিলেটের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের বাসায় আসা যাওয়া শুরু করেন পংকি খান। তার পর সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ পংকি খানকে সভাপতি রেখেই কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। শক্ত অবস্থানে চলে যান বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীরা। তারা আবারও অভিযোগ দায়ের করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট। দলের হাই কমান্ড একাধিকবার বিএনপি জামাত শিবির থেকে আসা অনুপ্রবেশকারিদের দল থেকে বার বার নির্দেশ দিলেও কেই যেন এ নির্দেশ শুনছেনা। যে কারনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বিশ্বনাথের বেলা কার্যকর হচ্ছেনা। বিগত কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে পংকি খানকে সভাপতি করার দায়িত্ব প্রাপ্তদের পতন ঘটে। দুর্বল হয়ে পড়েন পংকি খান। হয়তো তাই তিনি এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
বিশেষ করে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর সিলেট নজরুল অডিটরিয়ামে জেলা আওয়ামীলীগে বিশেষ বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য ডাকসুর সাবেক ভিপি বর্ষীয়ান জননেতা তোফায়েল আহমদ ও মাহবুবুল আলম হানিফের হাতে তারেক রহমান ও ইলিয়াস আলীর সাথে পংকি খানের একত্রিত ছবি দেখালে সভায় উপস্থিত পংকি খান মারাত্বক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে নানা কটুক্তি করেন। এক পর্যায়ে পংকি খান ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কেন্দ্রীয় নেতারা অনুপ্রবেশকারিদের দলে যোগদানের বিষয়ে তাদের বক্তব্যে তিরস্কারও করেন। কিন্তু কোন কিছুই যেন বিশ্বনাথে অনুপ্রবেশকারিদের হঠাতে পারছেনা। পংকি খান যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর নতুন করে আবার নানা কলা কৌশল শুরু হয়েছে। এখন পংকি খান আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবেন নাকি আবার ফিরে এসে সেই পদ পাওয়ার চেষ্টা তদবির করবেন সেটা দেখার জন্য আরও কিছুদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের দাবি পংকি খানসহ যত অনুপ্রবেশকারি বিভিন্ন কমিটিতে পদ পদবি গ্রহণ করে আছেন তাদের বহিস্কারের জন্য সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয়া একান্ত জরুরী।