বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাফল্য ও ব্যর্থতার ৭২বছর

Uncategorized
শেয়ার করুন

এএইচএম ফিরোজ আলী:: ১৭৫৭ সালের ২৩জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। বিশ্বাষ ঘাতক মীর্জাফরের ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজদৌলা বৃটিশ বেনিয়াদের হাতে পরাজিত হন। আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতাগণ দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে ২৩জুন তারিখটি ঐতিহাসিক কারনেই বেঁচে নিয়ে ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক দল। দলটির পর্বতসম সাফল্য ও বেশকিছু ব্যর্থতা নিয়ে ৭২ বছর পূর্ণ করেছে। আওয়ামীলীগের ইতিহাস আন্দোলন- সংগ্রামের ইতিহাস। আওয়ামীলীগ হচ্ছে, বাংলার মানুষের ভালবাসায় সিক্ত সবচাইতে পরীক্ষিত, বিশ্বস্ত প্রাচীনতম একটি রাজনৈতিক দল। লাখ লাখ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধায়ীর অবর্ণনীয় দুঃখভোগ, ত্যাগ তিতিক্ষা ও অকাতরে আত্মত্যাগের ভেতর দিয়ে শত প্রতিকূলতার মধ্যে ঠিকে আছে দলটি। উপ-মহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন অনেক দলের মধ্যে অন্যতম দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জন্ম হয়েছিল।
১৯৪৭ সালে বৃটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণার পর দেশভাগ যখন অর্নিবার্য হয়ে উঠে, তখন নিখিল বঙ্গীয় মুসলিমলীগ পার্লামেন্টারী পার্টি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমুদ্দিনকে দলের নেতা নির্বাচন করে। ১৪ আগষ্ট (১৯৪৭) আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিয়োজিত হন খাজা নাজিমুদ্দিন। বঙ্গীয় মুসলিমলীগের নেতৃত্বে ছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাসেম গ্রুপের হাতে। কিন্তু দেশ ভাগের পর মুসলিম লীগের ক্ষমতা চলে যায়, খাজা নাজিমুদ্দিন ও মাওলানা আকরাম খা গ্রুপের হাতে। ঐতিহ্যগতভাবে খাজা নাজিমুদ্দিন গ্রুপ ছিল, বাঙালি মুসলমান অভিজাত শ্রেণী ও উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্টির প্রতিনিধি। এই দলে ছিল, মুসলমান জমিদার, জোতদার নবাব, খান বাহাদুর, খান সাহেব, ধর্নাঢ্য এলিট শ্রেণী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি মুসলমান ছিল, ধর্মীয় ভাবাবেগ, স্বাতন্ত্র্যবোধের চেতনা, শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে একটি সুন্দর গনতান্ত্রিক দেশ গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু মাত্র ১ বছরের মধ্যে খাজা নাজিমুদ্দিন ও মাওলানা আকরম খার নেতৃত্বে সেই মুসলিমলীগ মানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবিভূত হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাসেম অনুসারীদের সে সময় কোনভাবেই দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়নি এবং পুলিশি নির্যাতন বেড়ে গিয়েছিল। একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে নাজিমুদ্দিন গ্রুপ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় গণবিরোধী ভূমিকা এবং বাংলা ভাষার দাবীর বিরোধীতা করতে গিয়ে মুসলিমলীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয়, বড় ধরণের রাজনৈতি শূণ্যতা। এই শুণ্যতা পূরণের মতো কোন রাজনৈতিক দল সে সময় ছিল না। তখর শেখ মুজিব, সামছুল হক ও তাদের তরুণ অনুসারীরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা করেন। মুসলিমলীগের প্রগতিশীল সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাসেম অনুসারীরা ১৫০ মোগলটুলী অফিসকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে ছাত্রলীগের প্রাণপুরুষ তরুণ শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামের সংগঠনের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য টাঙ্গাইলের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খা পদত্যাগ করলে আসনটি শুন্য হয় এবং মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নিকে পরাজিত করে মওলানা ভাসানী উপনির্বাচনে জয়লাভ করেন। কিন্তু নির্বাচনী হিসাব দাখিল না করার অজুহাতে ভাসানীর নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পূর্ণরায় আসনটি শুন্য হলে ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল উপনির্বাচনে সামছুল হক নির্বাচিত হন। মওলানা ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী -আবুল হাসেম গ্রুপের কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে দল গঠনের উদ্যোগী হন এবং ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন সম্মেলনের তারিখ নির্ধারন করেন। সম্মেলনে মওলানা ভাসানীকে সভাপতি ও ইয়ার মোহাম্মদ খানকে সম্পাদক করে একটি অভ্যর্থনা কমিটিও গঠন করা হয়। ২৩ জুন ১৯৪৯ সালের সেই মহেন্দ্রক্ষণ। বেলা ৩টায় আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ২৫০ থেকে ৩০০জন নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মওলানা ভাসানী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সামছুল হক, আব্দুল জব্বার খদ্দর, খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমেদ খান, খন্দকার মোশতাক, শওকত আলী, ফজলুল কাদের চৌধুরী, সামসুদ্দিন (কুষ্টিয়া), আব্দুর রশীদ তর্কবাগীস, আলী আমজাদ খান, ইয়ার মোহাম্মদ খান। এছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী, পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামে ইসলামের সহ সভাপতি মাওলানা সামছুল হক, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা ইয়াকুব আলী, ঢাকা প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরীর মালিক আব্দুর রশিদ এবং রেল সংগঠন, ছাত্র সংগঠন সহ অন্যান্য প্রতিষ্টানের প্রতিনিধিরা। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কিছুক্ষণ অবস্থান করে সম্মেলনে ভাষণ দিয়ে চলে যান। আওয়ামীলীগ সংগটনের নামের সাথে মুসলিম শব্দটি যুক্ত হওয়ার কথা শুনে, কামরুদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা,অলি আহমদ, তাজ উদ্দিন আহমদ, সম্মেলনে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। প্রথম অধিবেশনেই দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর বৃহত্তম এই দলের নাম করন করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগ’। খাজা নাজিমুদ্দিন, মাওলানা আকরাম খা, চৌধুরী খালেকুজ্জামান প্রমুখের দল সরকারি মুসলিমলীগ এবং গঠন করা হল আওয়ামী মুসলিমলীগ। পশ্চিম পাকিস্তানের মানকি শরীফের পীর সাহেব আওয়ামী শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। আওয়ামী মানে হচ্ছে, আম জনতার দল।
সম্মেলনে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, সহ সভাপতি আতাউর রহমান খান, এডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন খান, আলী আহমদ খান এমএলএ, এডভোকেট আলী আমজাদ খান ও এডভোকেট আব্দুস সালাম খান, সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক (টাঙ্গাইল), যুগ্ম সম্পাদক জেলে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ, একেএম রফিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ ইয়ার মোহাম্মদ খানসহ ৪০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৪ জুন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ইতিহাসে আরমানিটুলা মাঠে নবনির্বাচিত সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খানের সভাপতিত্বে প্রথম জনসভা অনুষ্টিত হয়। কমিটি গঠনের তিনদিন পর ২৬জুন কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহা উদ্দিন কে জেল থেকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান সরকার। এ বছর ১৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগের মূখপত্র ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ প্রকাশিত হয়। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মওলানা ভাসানী। পরে অবশ্যই সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তফাজ্জুল হোসেন মানিক মিয়া।
১৯৪৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মারাত্মকভাবে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। জিনিসপত্রের দাম ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এ অঞ্চলে ছিল দুর্ভিক্ষাবস্থা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২০ অক্টোবর খাদ্যের দাবীতে জনসভা শুরু হলে পুলিশ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করে। এ অবস্থায় অধিকাংশ নেতাকর্মী জেলে বন্দি করে আওয়ামীলীগকে বিভক্তি করার চেষ্টা করা হয়। ১৯৫৩ সালে কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করলে খন্দকার মোশতাকসহ ৫৫সদস্যের ওয়ার্কি কমিটির ২৭সদস্যই বিরোধীতা করেন। অবশেষে ১৯৫৫সালে কাউন্সিল অধিবেশনে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ নামে আত্মপ্রকাশ করে। দীর্ঘ এ সময়ে পূর্ব বাংলার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। শতকরা ৮০-৯০ভাগ মানুষ ছিলেন দরিদ্র ও অতি দরিদ্র। এ ভুখন্ডের উৎপাদিত পাট, চা সহ উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হতো, সেই সব অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হতো। শুধু মাত্র ধর্মের নাম নিয়ে যে, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেই রাষ্ট্রের পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত মরুভূমিতে কিছুই উৎপাদিত হতো না। পূর্ব পাকিস্তানের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ বিলাস বহুল জীবন যাত্রা শুরু করলে বাঙালির ক্ষোভ ক্রমেই বাড়তে থাকে। বিষয়টি বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে পেরেই ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে সম্মলিত বিরোধী দল সমূহের এক কনভেনশনে বাংলার মানুষের আর্থ নিয়ন্ত্রনের অধিকার, বাঙালির মুক্তিরসনদ নামে খ্যাত ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন। কিন্তু ৬ দফা আলোচনায় অস্বীকৃতি জানালে ১১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিমানবন্দরে এসে সংবাদ সম্মেলন করে দেশের মানুষকে বিস্তারিত অবহিত করেন এবং ২০ ফেব্রুয়ারী আওয়ামীলীগের ওয়ার্কি কমিটির সভায় ঘোষিত ৬দফা কর্মসূচী অনুমোদন করা হয়। তারপর ১৯৬৬ সালের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু সভাপতি ও তাজ উদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ কাউন্সিল ছিল, ইতিহাসের বাক পরিবর্তন। বঙ্গবন্ধুসহ ৩৪জনকে আসামী করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হলে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠে। মানুষের ঔক্য দেখে ভীত হয়ে পড়ে পাক সরকার। ফলে ১৯৬৯সালের গণঅভ্যত্থান, ৭০সালের সাধারন নির্বাচন সর্বোপরি ৭১সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরী হয়েছিল। ৬ দফার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সাঁকো দিলাম, এই সাঁকো দিয়েই আমরা একদিন স্বাধীনতায় পৌছাবো’।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ইতিহাস অবিরাম পরিবর্তন ও বিপ্লবের ইতিহাস। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯মাস এক কঠিন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ৭২বছর গৌরবময় পথ চলার সবচেয়ে বড় সাফল্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। অগনিত ত্যাগী, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নেতা-কর্মী, সমর্থক, যাদের ঘাম জড়ানো শ্রম ও কর্তব্য নিষ্টায় শত সংকটেও আজ অবধি অগ্রসমান আওয়ামীলীগ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফাঁিসর মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধুকে ফিরেই আনা ছিল ইতিহাসে বিরল। আওয়ামীলীগের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল, বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষা করা যায়নি। স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও জোরালোভাবে কোন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। নিরাপদ স্থান জেলে থাকাবস্থায় মুক্তি যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তাতেও প্রতিবাদে রাস্তায় আওয়ামীলীগকে দেখা যায়। এমন স্বাক্ষ্যপ্রমাণ ইতিহাসে নিহিত। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান শাসক গোষ্টি তাঁর শরীরে হাত তুলতে সাহস পায়নি। সেই বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে স্বপরিবারে জীবন দিতে হলো। ১৯৭৫সালের ১৫ আগষ্ট এটা বিশ্বের ইতিহাসে কলংকজনক একটি অধ্যায়। আওয়ামীলীগের আরও একটি বড় সাফল্য হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৬ বছরের মাথায় নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করে দেশে ফিরিয়ে আনা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ছিল কল্পনা মাত্র। তেমনিভাবে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উগ্র, জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাসবাদ শক্তহাতে দমন করে ইতিহাস সৃষ্টি করছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে বাংলাদেশে প্রশংসা এখন বিশ্বে। দারিদ্র বিমোচনে সাফল্য জনক অধ্যায়ে এখন বাংলাদেশ। বিদেশী দাতা সংস্থাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে ২১হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সমুদ্র বিজয়, ছিট মহল বিনিময়, চট্টগ্রাম কর্নফূলী নদীতে সুরঙ্গ পথ নির্মাণ, পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, ইশ্বদিতে পরমাণু বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন, মাথার বাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, মানুষের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি ও এসবই আওয়ামীলীগের সাফল্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেখানো শেখ হাসিনার নৈতিকতা ও মানবতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠায় টুঙ্গী পাড়ার যুবক শেখ মুজিব আঞ্চলিক নেতা থেকে জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ব বন্ধু হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার কারনে শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের মানবিক প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামীলীগের আরেকটি বড় ব্যর্থতা হচ্ছে গত ১০ বছরে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে পারেনি। দলের সুবিধাভোগীরা, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক দলটিকে নীতি আদর্শ থেকে বিচ্যুতি করার চেষ্টা করছে। সর্বক্ষেত্রে এখন খাই খাই অবস্থা। এটি আওয়ামীলীগের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত। অনুপ্রবেশকারীদেরকে দল থেকে বের করে ত্যাগীদের নিয়ে দল গঠনে প্রধানমন্ত্রী ২০০৯সালে থেকে একাধিক বার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। হয়তো এক সময় আওয়ামীলীগকে এর মূল্য দিতেই হবে। শেখ হাসিনার জীবনে ১৯বার হামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু শক্তিশালী প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। খাই খাই নেতাদের কারনে।
পরিশেষে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ইতিহাসের পথপরিক্রমায় অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে ৭২বছর পুর্ণ করেছে। প্রতিষ্ঠাকালিন এ দিনে সশ্রদ্ধে চিত্তে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী , মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সামছুল হক সহ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে ৩০লাখ শহীদ ও ২ লাখ ইজ্জত হারানো মা-বোন ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ সকল গণতান্ত্রীক আন্দোলনে অকুতবয় আওয়ামীলীগের জীবন দানকারী দলীয় নেতাকর্মীদের। এবং যাদের রক্ত শ্রম ও মেধার বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে, তাদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

লেখক: কলামিষ্ট ও সদস্য সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *