বকেয়া পরিশোধের পরও স্থিতিশীল রিজার্ভ : দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন

অর্থণীতি জাতীয়
শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক :: টানা তিন মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় প্রবাসী আয়। আমদানিসহ নিত্য দরকারে হাত দিতে হচ্ছে না বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে। একই সঙ্গে এই সময়ে সার, বিদ্যুৎ এবং আদানি-শেভরনের বকেয়াও পরিশোধ করা হয়েছে। এরপরও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারায় আইএমএফ’র হিসাব পদ্ধতিতে দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস ধরেই রিজার্ভ স্থিতিশীল ২০ বিলিয়নের ঘরে। অথচ পরিশোধ করলেও এই সময়ে কোন ঋণ নেয়নি বাংলাদেশ। সবশেষ গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়নে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গত বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যাংকে রক্ষিত বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সামান্য বেড়ে ১৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এদিকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে প্রতিশ্রুত অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হচ্ছে রিজার্ভে। এটা যোগ হলে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের উপরে পৌঁছাবে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সপ্তাহ খানেক আগে গত ২৩ অক্টোবর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশি। এ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগের সপ্তাহেও রিজার্ভ তার পূর্ববর্তী তিন সপ্তাহের চেয়ে সাড়ে চার কোটি বাড়ার তথ্য দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ওই অবস্থান ছুঁতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসে (গত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত) বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, এবং মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৮ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাইয়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের নির্বিচারে গুলি, খুন ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদে রেমিট্যান্স পাঠায়নি প্রবাসীরা। তাই জুলাই মাস ছাড়া এপ্রিল থেকে প্রবাসীরা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।

শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা স্বস্তির জায়গা তৈরি করবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাবে। বিআইবিএম’র সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ডলারের দর বাজারমুখী করাসহ নতুন গভর্নরের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ভালো ফল দিচ্ছে। তিনি বলেন, ডলারের মূল্য বাজারমুখী করাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলোর ইতিবাচক ফল অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের বাইরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার রয়েছে ৪শ’ মিলিয়ন ডলার।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং স্থিতিশীল হচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগের সরকারের সময়ে রিজার্ভ প্রতি মাসে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১৩০ কোটি) ডলার কমছিল, কিন্তু এখন তা ইতিবাচক দিকে ফিরছে। তিনি জানান, সার, বিদ্যুৎ এবং আদানি-শেভরনের বকেয়া পাওনার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন (১৮০ কোটি) ডলার পরিশোধ করে অপরিশোধিত বিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন (২৫০ কোটি) ডলার থেকে ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ডলারে নামিয়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে বাকি ঋণ পরিশোধ করে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণমুক্ত হওয়া। এটি সম্ভব হলে, বাজারে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, এই বকেয়া পরিশোধ করলে অর্থনীতির ওপর চাপ কমবে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে গভর্নর দেশের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা এখন ১০৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বর্তমান ঋণের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে, তাই ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র মতে, মাস কয়েক আগেও এক বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো ডলার সংকট। আমদানির ব্যয় মেটাতে ডলার বিক্রির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ নামে তলানিতে। পরিস্থিতি আরও টালমাটাল করে তুলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একের পর এক নড়বড়ে সিদ্ধান্ত। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রিজার্ভ বাড়াতে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয় নতুন গভর্নর। যাতে গুরুত্ব পায় ডলার বিক্রি না করা ও ডলারের দর বাজারের কাছাকাছিতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। এতে কিছুটা সুফলও মিলতে শুরু করেছে। ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে আসা ১৮ বিলিয়ন এখন ২০ বিলিয়নে ছুঁইছুঁই। দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুতি দেয়া অর্থ আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পাওয়ার কথা, পেলে দেশের রিজার্ভ শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল থাকায় এবং রিজার্ভ থেকে অন্য কোনো দায় না মেটানোর কারণে এটা ইনক্রিমেন্টাল হারে বাড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি বা যারা অর্থ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে যখন প্রতিশ্রুত অর্থ আনা যাবে তখন রিজার্ভের অবস্থান আরও সুসংহত হবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *