দুদকের জালে বিএফআইইউ’র সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস

অপরাধ সারাদেশ
শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক :: বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এস আলম গ্রুপ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সুবিধা দিয়েছেন। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। বুধবার সংস্থাটির এক কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) শিরীন আখতারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০শে নভেম্বর ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদায় দুই বছরের জন্য বিএফআইইউ’র প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান মাসুদ বিশ্বাস। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে সহায়তা ছাড়াও নানাভাবে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

মাসুদ বিশ্বাস বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর পদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইন্স লিমিটেডের বিমান ক্রয়ে সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি ঘুষের বিনিময়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে পরিসমাপ্তি করেছেন। এ ছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজ ব্যাংক থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর আওতায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন না দিয়ে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হিসেবে পাঠিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনিয়ম ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিমিদ্রী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। ওই স্থগিতাদেশ মাসুদ বিশ্বাস আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। তানাকা গ্রুপ, এস.এ. গ্রুপ এবং আনোয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, অর্থ পাচার সংক্রান্ত সুনিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও ওই মামলাগুলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে নিজে হস্তক্ষেপ করেন মাসুদ বিশ্বাস।  এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের সঙ্গে যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ উত্তোলনের নামে বিদেশে পাচার; আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারসহ ঘুষের বিনিময়ে জিনাত এন্টারপ্রাইজের বিদেশে অর্থ পাচারের মামলা ধামাচাপা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

অন্যদিকে আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিরীন আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম ও প্রথম নারী উপাচার্য। ২০১৯ সালের ৩রা নভেম্বর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তিনি দায়িত্ব ছাড়েন। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। শিরীন আখতারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে গত জুনে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ইউজিসি’র গঠিত তদন্ত কমিটি।

জানা যায়, অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ ভবন উদ্বোধন, তার শেষ কর্মদিবসে বিনা বিজ্ঞাপনে অর্ধশতাধিক কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করছে ইউজিসি’র তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিরীন আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, সংবিধি ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রায় শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেন।

২০২৩ সালের ৪ঠা জুন ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। চবি’র মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও একইদিনে অন্য একটি সভায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *