হাইকোর্টের রায় আছে জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ : ঢাকায় নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা

জাতীয় রাজনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন

ডাক ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই, চুরির প্রয়োজন হয় না। তারা (জিয়া-এরশাদ) ভোট চুরি করে, এটা আমার কথা না। হাইকোর্টের রায় আছে জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। যাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ, তারাই ভোট চুরি করে। তারা ভোট চুরি ছাড়া জিততে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেটি প্রমাণিত সত্য। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বিকেল সোয়া ৩টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কলাবাগান মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় পৌঁছান শেখ হাসিনা। এ সময় স্লোগান স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশের পতাকা হাতে স্লোগানের জবাব দেন তিনি। পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এর পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর চলে বক্তব্যের পালা। এতে ঢাকার আসনগুলোর নৌকার প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, নির্বাচন বন্ধ করার সাহস বিএনপি-জামায়াতের নেই এমন উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তবে বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম এবং আছি। আমাদের সময় যেহেতু ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে, যেহেতু মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, ওই অগ্নিসন্ত্রাসের সময় ছাড়া। বাকি সময় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা মানুষের শিক্ষা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সবকিছুর জন্য কাজ করে মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই। আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না। তিনি আরো বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, এটা আমার কথা না হাইকোর্টের আদেশ আছে হাইকোর্টের রায় আছে যে, ওই বিএনপি জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। তারাই ভোট চুরি করে, তারাই ভোট চুরি ছাড়া জিততে পারে না। ২০০৮ এর নির্বাচনে সেটা প্রমাণিত সত্য। এখন আবার তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, কেন নির্বাচন বানচাল করবে ?

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, দুুর্নীতির কারণে ২০০৮ সালে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা ২৩৩ আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছি। ২০১৩-১৪ সালে আগুনে মানুষ পুড়িয়েছে, কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন, গুলশান থেকে ফখরুল দেয় নমিনেশন, পল্টন অফিস থেকে রিজভী দেয়। ওইভাবে নমিনেশন বিক্রির ফলে তাদের নির্বাচন ভেস্তে যায়। দোষ দেয় আমাদের ওপর।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে নির্বাচন বর্জন করছে, বর্জন করাটা খুব স্বাভাবিক। ভোট চুুরি করতে পারে না, নির্বাচন করবে না। কারণ এর আগে তো ভোট চুুরি করে অভ্যস্ত, চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের সৃষ্টি। ক্ষমতা দখল, ক্ষমতা চুরি, ভোট চুরি এছাড়া তো তারা আর কিছু পারে না। সে জন্য নির্বাচন করতে চায় না, নির্বাচন বানচাল করবে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি, সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে এত সাহস তাদের নাই, তারা পারবে না। তারা আগুন দিয়ে পোড়ায় বাস, গাড়ি, ট্রেন। আপনারা দেখেছেন ফিসপ্লেট খুলে দিয়ে রেলে এক্সিডেন্ট ঘটায়, যেন এক্সিডেন্ট হয়ে মানুুষ মারা যায়, তারা লাশ চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, ওরা এ দেশের সর্বনাশ করতে চায়। আগামী নির্বাচনে আপনাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, ওই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। আর আপনারা তার জবাব দেবেন কীভাবে? প্রত্যেকে, প্রতিটি ভোটার পরিবার-পরিজন নিয়ে সকালে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, আপনার ভোট আপনি দেবেন কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। তাদের উপযুক্ত জবাব দেবেন, অগ্নিসন্ত্রাসের জবাব দেবেন।

নিজ বক্তব্যের শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, নতুন বছরে (২০২৪) পদার্পণ করলাম। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্রহাতে নিয়ে। মানুষের ভাগ্য গড়েনি। এই দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। যে জয় বাংলা স্লোগানে দেশের মানুষ তাজা রক্ত দিয়েছিল, সেটিও নিষিদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, যে দিন বাংলাদেশে ফিরে আসি, আমার ফেলে রাখা আপনজনদের পাইনি। পেয়েছি, হাজার হাজার মানুষ। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের মধ্যেই আমি খুঁজে পাবো, বাবা-মা ভাইবোনের স্নেহ। হ্যাঁ, এটা পেয়েছি। একটা প্রত্যয় ছিল, সবার মুখে খাদ্য তুলে দেবো। কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে উন্নত জীবন দেবো। ক্ষমতায় এসে সেই কাজ শুরুও করেছিলাম। কিন্তু গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অথচ আওয়ামী লীগ ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আমাদের নেতা-কর্মীরা অত্যাচার সয়েছে, জেল খেটেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, কেন নির্বাচন বানচাল করবে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে উন্নয়ন হয়েছে। ৭৫’-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্র হাতে নিয়ে ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা মানুষের ভাগ্য গড়েনি।

তিনি বলেন, তাদের আমলে ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিষিদ্ধ, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলতেও ভয় পেতেন। সে সময় অনেকে লুকাতেন, ভয় পেতেন তারা (বিএনপি) ঠিক সেই অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া, তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, পাশাপাশি এ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের যে গতিটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করেছিলেন, সেটিও থেমে যায়। সেই যে ২৭৭ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় জিয়ার আমলে ও এরশাদের আমলে কোনো আমলেই সেই মাথা-পিছু আয় আর বৃদ্ধি পায়নি। বরং জিয়ার আমলে প্রতি বছর তা মাইনাস হতে থাকে। তারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য না গড়লেও ক্ষমতাসীনদের ভাগ্য গড়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।

ঢাকায় ১৫টি নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি এই ১৫টা রত্ন আপনাদের সামনে তুলে দিলাম। এই ১৫টা রত্ন আপনাদের হাতে দিলাম, যারা আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করবে। আপনাদের সেবা করবে, ঢাকার মানুষের সেবা করবে।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। এতে আরো বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-১০ আসনের নৌকার প্রার্থী নায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নুর তাপস।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *