কাজলকে রাতে থাইল্যান্ড নেওয়া হচ্ছে, বিদায় জানাবেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

জাতীয় সারাদেশ
শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক : কাজল মিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ বিভাগের ছাত্র। জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনে যোগদান করেন তিনি। পুরো জুলাই মাস ও আগস্টের শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। কাজলের বড় ভাই রুবেলের বাসা যাত্রাবাড়ীতে। ৪ আগস্ট বড় ভাইয়ের বিয়ের বর্ষপূর্তিতে অংশগ্রহণের জন্য তার বাসায় আসেন তিনি। পরের দিন ডাক আসে ‘লংমার্চ ফর ঢাকা’। ৫ আগস্ট ভোরেই আন্দোলনে যোগদানের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি।

আন্দোলনের জন্য যাত্রাবাড়ীতেই যান। সেখানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলির মুখে সবাই রাস্তা ছেড়ে দিলেও সাহসিকতার সাথে দাঁড়িয়ে থাকেন কাজল। রংপুরের আবু সাঈদের মত দুই হাত ছড়িয়ে দেন তিনি। পুলিশ তার মাথায় গুলি চালায়। লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। পরে লোকজন উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার মাথায় অপারেশন হয়। গত প্রায় ৩ মাস ধরে এইচডিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।

ধীরে ধীরে তার উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু বাম হাত-পা পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। তার জন্য প্রয়োজন রোবটিক ফিজিওথেরাপি। কিন্তু দেশে সে ব্যবস্থা নেই। সেজন্য মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বিদেশে নেওয়ার।

কাজলকে বিদেশে নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তার আগেই খারাপ হয়ে যায় তার অবস্থা। গত দুদিন আগে হঠাৎ করে ইনফেকশন হয়। বেশ কয়েকবার তার ডায়রিয়া হয়। এতে করে তার রক্তচাপ কমে গিয়ে শকে চলে যান। পরে নিনসে বোর্ড করে চিকিৎসা দেওয়া হতে থাকে। গতকাল সকাল থেকে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বোর্ড মিটিং বসে। তার অবস্থা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হয়। কাজলের অবস্থা জানার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেন তিনি। তাকে দ্রুত থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। গতকাল শনিবার ছুটির দিন হলেও কাজলকে বিদেশে নেওয়ার সব ব্যবস্থা করেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে থাই এম্বেসিতে যোগাযোগ করা হয়। আজ রবিবার দুপুরের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা করা হয়।

এয়ার এম্বুলেন্সের জন্য ৩১ হাজার ডলারের ব্যবস্থা করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। আজকে দুপুরের মধ্যে সে টাকা সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে এয়ার এম্বুলেন্স নিশ্চিত করেন। সন্ধ্যা ৭ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করবে এয়ার এম্বুলেন্স। পরে কাজলকে নিয়ে রাত ১২ টার দিকে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। কাজলের সাথে যাবে তার স্ত্রী সিনথিয়া।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর আমার প্রধান কাজ হলো আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এজন্য আহতদের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশি চিকিৎসক দল আনার ব্যবস্থা করেছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য চায়না, নেপাল, ফ্রান্স থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। থাইল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। ৫০ জনের চোখের কর্নিয়া নেপাল রেডি করে রেখেছে, যাদের কর্নিয়া স্থাপন প্রয়োজন হবে তাদের জন্য। ইতোমধ্যে দুইজনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় যুক্তরাজ্য থেকে চিকিৎসকদের একটি টিম বাংলাদেশে এসেছে। গত ৫ নভেম্বর থেকে দুইজনের একটা মেডিকেল টিম ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) আন্দোলনে আহত ভর্তি রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেন। তারা ১৮ তারিখ পর্যন্ত ২৫টির বেশি আপারেশন করেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়েছি। আর আজকে কাজলকে পাঠানো হচ্ছে। আরও ১০-১২ জনকে দেশের বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জাতীয় নাগরিক কমিটির ডা. আহাদসহ আরও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কাজলকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *