ইতিহাসের চোখে বঙ্গবন্ধু হত্যকান্ড

Uncategorized
শেয়ার করুন

১৫ আগষ্ট ইতিহাসের নিষ্টুরতম হত্যাযজ্ঞের ভয়ংকর দিন। বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্য গভীর মর্মস্পর্শী শোকের দিন, কান্নার দিন। ১৫ আগষ্টের সেই শোক এখন হয়ে গেছে চির দিনের। নদী স্রোতের মতো চির বহমান এ শোক প্রবাহ। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্টতম সেই পুরুষ, যিনি একটি স্বাধীন জাতি, রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিষ্টাতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বদেশের মাটি আর মানুষকে গভীর ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে ৫৫ বছর বয়সে মানুষের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়ে ছিলেন। সেই মহান নেতার সপরিবারের হত্যার আজ ৪৪তম মৃত্যু বাষির্কী।
১৯৭৫ সালের ১৪ আগষ্ট ছিল বৃহস্পতিবার। ফজরের আযানের সময় কাকডাকা ভোরে ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় ঘটনা। শিশু রাসেল সহ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রচিত করা হয় এক কলঙ্কিত ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে সীমাহীন ক্ষতি করা হয়, সংগ্রামি বাঙালি জাতির। যে বঙ্গবন্ধুর কারনে বিশ্বে বাঙালি বীরের আসনে প্রতিষ্টিত হয়েছিল, সেই বাঙালিকে বিশ্বাস ঘাতক বলে চিহ্নিত করা হল কতিপয় দেশি বিদেশি চক্রান্তকারিদের কারণে। আরো কলঙ্ককিত করা হয়, ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, সরকার পরিবর্তনের সময় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা নিশিদ্ধ। কি বর্বর, নির্লজ্জ অসভ্য মানব কান্ডহীন সিদ্ধান্ত! ১৯৯৬ সনের ১২ নভেম্বর রাত ১০টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশে মহান জাতীয় সংসদে সেই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অডিন্যান্স বাতিল করা হয়। এসময় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের দিকে তাকিয়ে শিশুর মত কাঁদতে ছিলেন। শুধু শেখ হাসিনা নয় সেদিন বাঙালি জাতি ও দেশ বিদেশে থাকা কোটি কোটি বাঙালি ও বিশ্ববাসি রাতভর আনন্দে কেঁদেছিল। বিএনপি জামাতের সদস্যগণ বিল পাশে কোন সহযোগিতা করেনি বরং তারা সংসদ ভবন ত্যাগ করে। আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ সহ ১৭০ জন সংসদ সদস্য এসময় উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাব উদ্দিন আহমদ বিলের সম্মতি প্রদান করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর অবদান সবকিছুই বিকৃত ভাবে উপস্থাপনের ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু ইতিহাস থেমে থাকেনি। বঙ্গবন্ধকে তাঁর আপন মহিমায় ইতিহাস পর্বতসম মূল্যায়ন করেছে।
১৫ আগষ্ট রক্তাক্ত ঘটনার পর তৎকালিন ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ডেভিড বোস্টার বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর ঘন্টায় ঘন্টায় স্টেট ডির্পাটমেন্টে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বেশ অজানা কাহিনী ছিল। ১৫-১৬ আগষ্ট বোস্টারের সেইসব রিপোটের কিছু কিছু অংশ সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো- ‘বাংলাদেশ এন্ড আনফিনিশড, গ্রন্থের প্রনেতা, লরেন্স লিফসুলজ ১৯৭৯ সারের ১৫ আগষ্ট লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার এক নিবন্ধে লিখেছেন, শেখ মুজিবকে উৎখাতের পরিকল্পনার সাথে খন্দকার মোস্তাক ও তার রাজনৈতিক বন্ধুরা এক বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত ছিল। অভ্যূথান ও মুজিব হত্যার ৬ মাস পূর্বে ষড়যন্তযুক্ত ব্যক্তিদের সংঙ্গে মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড বহিবিশ্বে সর্ব প্রথম আমেরিকাই জানতে পেরেছিল। সে দিন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত একটি গাড়িতে করে সারা ঢাকা শহর ঘুরে ছিলেন পরিস্থিতি দেখা ও বুঝার জন্য। বেলা ১১ টার পর থেকে বোস্টার রিপোর্ট পাঠাতেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকেও নির্দেশনা মূলক বার্তা আসতো। প্রথম রিপোটের শিরোনাম ছিল-‘বাংলাদেশের অভ্যূত্থান, এতে বলা হয় পরিস্থিতি দৃষ্টে মনে হয় (১৫ আগষ্ট সময় ১১টা)। অভ্যূত্থান সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। কোথাও কোন গুলযোগ হয়নি। প্রতিরোধের সম্ভাবনা নাকচ করে দিতে আমরা এখনো প্রস্তুত নই। তবে বর্তমান লক্ষণদৃষ্ট্রে বলা যায় অভ্যুত্থান এ পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে। দ্বিতীয় রিপোর্টের একাংশে বলা হয় (১৫ আগষ্ট বিকাল ৪টা) সাফল্যের বিষয়টি আগের মতোই, সক্রিয় কোন প্রতিরোধ চোখে পড়েনি। দূতাবাসে গাড়ি গুলো বিনা বাঁধায় চলাচল করতে পারছে। ধানমন্ডির ৩২ নং রোডের শেখ মুজিবের বাস ভবন সংলগ্ন এলাকায় সামরিক ট্রাক ও সৈন্যরা অবস্থান নিয়েছে, বাড়ির ছাদেও সৈন্যরা আছে। বিমান বন্দর বন্ধ আছে। সেকানে বিপুল সংখ্যক সৈন্যের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তৃতীয় রিপোটে বলা হয় প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট একজন করে ১০ জন মন্ত্রী ও ৬ জন উপমন্ত্রী শপথ করিয়েছেন। রিপোর্টে বাংলাদেশে বেতারের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ এই সংকটময় সন্ধিক্ষনে জাতিকে রক্ষার জন্য খন্দকার মোস্তাক আহমদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহনের সাহসী পদক্ষেপের ভুয়সী প্রশংসা করছে। ঢাকা বিমানবন্দর ১৬ আগষ্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ পর্যন্ত নগরি অত্যন্ত শান্ত বলে মনে হচ্ছে। আরেকটি রিপোটে বলা হয়-শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরাচারি শাসনের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বোস্টার যখন পর পর রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলেন ওয়াশিংটন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপত্র প্রেসব্রিফিংয়ে বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট বাংলাদেশের নয়া সরকারের সঙ্গে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। তারা মোস্তাক সরকারের প্রতি সমর্থনের এই ইঙ্গিত দেয়। তার পর বোস্টার নয়া প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোস্তাকের পরিচিতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে তোলে ধরে বলেন, মোস্তাক বরাবর নিজের অবিচল মার্কিন পন্থি হিসেবে প্রতিভাত করেছেন। যে কারনে ভারত ও সোভিয়েত বিরুধী হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। মোস্তাক বড় বেশি মার্কিন পন্থি হিসেবে বিবেচিত। স্টেট ডিপার্টমেন্টের অন্য এক জরুরী বার্তায় নয়া দিল্লির মার্কিন দুতাবাসকে জানানো হয়, বাংলাদেশের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার কোন প্রয়োজন আমেরিকার নেই। পাকিস্থান বাংলাদেশকে কুটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতে সম্ভাব্য যেকোন সামরিক পদক্ষেপ নিরুৎসাহিত করার দিকে দৃষ্টি রেখেই দৃশ্যত পাকিস্তান এমন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। বোস্টার বার্তায় আরো বলেন মোস্তাক জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনে মুজিব সরকারের দূনীতি, স্বজন প্রীতি এবং জনগনের জীবন মান উন্নয়নে ব্যর্থতাকে কারন হিসেবে দেখিয়ে মুজিব বিরুধী অভ্যূত্থানের যৌক্তিকত প্রমান করেছেন। তখন বাংলাদেশ ইস্যুতে পাক-মার্কিন আতাঁত গড়ে উঠে ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত ও ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষায় পাকিস্তান দৃঢ় ভাবে পাশে দাঁড়াবে এমন অঙ্গিকার ব্যক্ত করে পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী জুলফিকর আলী ভুট্টু খন্দকার মোস্তাকের নিকঠ ব্যক্তিগত ভাবে চিঠি দিয়েছিন বলে স্টেট ডিপার্টমেন্টে বার্তায় উল্লেখ ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে খন্দকার মোস্তাকের সাথে মার্কিন কর্মকর্তাদের গোপন যোগাযোগের ঘটনা মার্কিন সিক্রেট ডকোমেন্টে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। হেনরি কিসিঞ্জার আওয়ামীলীগের সরকারের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরী ও ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টাও করেছিল। ভারত সরকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ অবগত হয়ে খন্দকার মোস্তাককে বিদেশ মন্ত্রী (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতির আশংকায় মোস্তাককে নাম মাত্র মন্ত্রী রাখেন আর প্রকৃত দায়িত্ব পালন করেন আব্দুস সামাদ আজাদ।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক সহযোগি রজার মরিচ তাঁর লিখিত ‘আনসার্টেন গ্রেটনেস, বইতে কিসিঞ্জার যুগের মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ৩টি প্রতিশোধের ঘটনা উল্লেখ করেন। চিলির আলেন্দে ছিলেন আমেরিকার জন্ম শত্রু। ভিয়েতনামের থিউ ছিলেন, উত্তর ভিয়েতনামের সঙ্গে সমঝোতায় আমেরিকার প্রতিবন্ধক। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার নীতি বাস্তবায়নের কন্টক। কিসিঞ্জার স্থীর সিদ্ধান্তের উপনীত হন যে, মুজিব তাদের লোক নন, তাই শেখ মুজিবকে উৎখাদ করতে হবে। ১৯৭৪ সালে কিসিঞ্জার বাংলাদেশে এসে মোস্তাক গোষ্টির সাথে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেন। বাংলাদেশকে ‘ বটমলেস বাস্কেট, বাসন্তি নাটক এসব তাদের সাজানো কু-কর্ম ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধি বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন।
মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুল্টজ তাঁর বাংলাদেশ ‘আনফিনিশিড রেভলিউশান, গ্রন্থে বহু তথ্য সমাবেশ করে প্রমান করেছেন, মার্কিন গ্রপ্তচর সংস্থা সিআইএর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারিদের ঘণিষ্ট যোগাযোগ ছিল। তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের প্রভাব বলয় থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে নেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হত্যাকারিদের সমর্থন দেয়। লিফসুল্টজ তাঁর কার্নোগী রিপোর্ট শীষক একটি দলিলে উল্লেখ করেন, মুজিবনগর আমল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছিল। ১৯৭৬ সালের জুন মাসে মোস্তাক ভারতের কলকাতায় অবস্থানকালে লরেন্স লিফসুল্টজ এর সঙ্গে স্বাক্ষাত কল্পে আমেরিকার সাথে তার যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছিল। আমেরিকার সাথে কি ধরনের বোঝাপড়া হয়েছিল এমন প্রশ্নে উত্তরে মোস্তাক লিফসুল্টজকে বলেন, আপনি যদি জানতে চান তাহলে নিক্সনকে জিজ্ঞাসা করুন। আমি অপনাকে বলব না।
১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের সাবেক প্রধান অনুস্টান সংগঠক শামসুল হুদা চৌধুরীর সাথে এক স্বাক্ষাতকারে ১৯৭০ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজি জহিরুল কাইয়ুম ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তান জেলে বন্দি বঙ্গবন্ধুর খবর সংগ্রহের জন্য কলকাতার আমেরিকান কন্স্যাল জেনারেল হার্বাট গর্ডনের সঙ্গে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধু যদি জীবিত থাকেন তাহলে আমেরিকার সাহায্যে তাঁকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে তিনি নিজের দায়িত্বে এ যোগাযোগ স্থাপন করেন। সামসুল হুদাকে জহিরুল কাইয়ুম বলেন মোস্তাকের নির্দেশে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনের তৎকালীন প্রধান হোসেন আলী আমেরিকান কন্স্যালের সঙ্গে লিয়াজোঁ স্থাপন করেন। এখবর মোস্তাক নিজে তাঁকে দিয়েছেন বলে জহিরুল কাইয়ুম উল্লেখ করেন। ১৯৭৬ সালে ৩০ মে লন্ডনের ‘দি সান্ডে টাইম্স, পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কর্ণেল ফারুক বলেছিলেন, ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য শেখ মুজিবকে মৃত্যু বরণ করতে হয়। ফারুক দম্ভ করে বলেছিলেন শেখ মুজিবকে হত্যার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইচ্ছা করলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন! এই হত্যা জাতীয় মুক্তির পক্ষে একটি সক্রিয় পদক্ষেপ। ১৯৭৮ সালে ১৮ জুলাই লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলার ডাক পত্রিকায় প্রকাশিত বিবৃতিতে ফারুক দাবি করেন, শেখ মুজিবকে ধ্বংস করার জন্য সে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ কতৃক ‘আদিষ্ট, হয়েছিলেন।
১৯৭৯ সালের আগষ্ট মাসে লন্ডন থেকে প্রকাশিত আরব দেশ সমুহের ‘এইট ডেজ’ (৮ উঅণঝ) নামের একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ঘাতক মেজর রশিদের একটি স্বাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয় শেখ মুজিব সরকারের পতন ঘটিয়ে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে গ্রীষ্মকাল থেকে ফারুক ও রশিদ তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে। ১৯৯৩ সালে ৪ মার্চ ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আজকের সর্যোদয়কে এক স্বাক্ষাতকালে কর্ণেল ফারুক বলেছিল আমিতো (শেখ মুজিবকে) হত্যা করিনি প্লানও ছিলনা। আমরা ঠিক করেছিলাম মুজিবকে ক্যান্টনমেন্টে আটক করে বাকশালটা বাতিল করবো মাত্র। কিন্তু মোস্তাক-রশিদ ক্ষমতার লোভে সিআই এর গোপন চক্রান্তে শেখ মুজিবকে স্ব-পরিবারে খুন করলো। এ ঘটনা শোনার পর আমি আতংকিত হয়েছি। কম করে ৭ রাত ঘুমাতে পারিনি। মোস্তাক স্বীকার করেছে সেই এসবের জন্য দায়ি। আসলে আমি মরলে মুজিব হত্যার বিচার হবেনা। কেউ আর স্বাক্ষী ও থাকবেনা।
মার্কিন অধ্যাপক স্ট্যানলি ঔলপাট ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত এক বইতে বলেন, ‘দুই বছর যাবৎ ভুট্টো কয়েকটা মুজিব বিরুধী উপদলকে তার গোপন ‘সেচ্ছাধীন তহবিল, থেকে অর্থ সাহায্য অব্যাহত রাখেন। ১৯৭৫ সালের আগষ্ট মাস শেষ হওয়ার আগেই তিনি তার বিনিয়োগের ফল লাভ করেন।
১৯৭৬ সালের ১৬ আগষ্ট টাইম্স অব লন্ডন সংখ্যায় বলা হয়, ‘সবকিছু সত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হব্ েকারন তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্থিত নেই। বঙ্গবন্ধু আজ মিশে আছেন নির্মোহ দানে, বাংলার প্রকৃতিতে, আকাশে-বাতাসে, আলো-ছায়াতে, নদী-গিরি-বনে বাংলার অবারিত মাঠ জুড়ে। তিনি মিশে আছেন লক্ষ শহিদের রক্তে, বাঙালির হৃদয়ে। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী অমর। ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব লাভ করে বেঁচে আছেন একজন সুদক্ষ রাষ্ট্র নায়ক, আদর্শবাদি মহা নায়ক রূপে।

এ এইচ এম ফিরোজ আলী
লেখক, কলামিষ্ট ও সমাজ বিশ্লেষক


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *