অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারন

Uncategorized
শেয়ার করুন

আজ ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ১৯৯০ সালে প্রথম বারের মত পৃথিবীর ৯০টি দেশে এ দিবস উদযাপিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪৫/২১৬ নং প্রস্তাবে দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৬৮ সালে তেহরান ঘোষনায় বলা হয়েছিল, পিতা-মাতা সন্তান সংখ্যা দুইয়ের মাঝে বিরতি দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে, যা মুক্ত ও স্বাধীন। ১৯৯৪ সালে মিশরের কায়রোতে অনুষ্টিত জনসংখ্যা উন্নয়ন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১৭৯টি দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থে নারীর ক্ষমতায়ন এবং জনগণের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও প্রজনন সংক্রান্ত তথ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ৫০ বছর আগে তেহরানে অনুষ্টিত মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রথম সভায় পরিবার পরিকল্পনাকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ দিবসে পৃথিবীর উন্নত-অনুন্নত দেশ জনসংখ্যার হৃাস-বৃদ্ধি সাফল্য পর্যালোচনা করে। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
সাধারণত: যদি কোন পরিবারে বাসস্থানের চেয়ে লোক সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে সেই পরিবারের থাকা খাওয়ার অসুবিধা হয়-কৃষি জমি কম থাকলে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, আয় রোজগার কম হলে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। অনরূপভাবে দেশের আয়তন ও সম্পদ যদি জনসংখ্যার চেয়ে কম হয়, তাহলে সে দেশের জনসংখ্যাকে সম্পদ বলা কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে, জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রধান ও অন্যতম একটি সমস্যা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামজিক উন্নয়নে অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের জন্য বড় বাঁধা। দেশের মোট আয়তন ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বহুমুখি সমস্যার কবলে আমাদের দেশ। কেউ কেউ বলছেন, জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলে জনসংখ্যা সমস্যা নয়, সম্পদেই পরিণত হবে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এক সময় আমাদের দেশে প্রতিটি গ্রামের প্রতি পরিবারের ১ বিঘা থেকে ৫ বিঘা বা তার অধিক জমির মধ্যে বসতবাড়ি ছিল। সঙ্গে ছিল পুকুর, উঠান, ক্ষেতের জমি সহ অনেক খালি জায়গা। প্রতি পরিবারে প্রচুর কৃষি জমি ছিল। মাঠে গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগলসহ গৃহ পালিত পশুর জন্য গোচারণ ভুমি। সরকারি খাস জমি ছিল প্রচুর। বড় বড় খাল বিল, ঝিল নালা ছিল। জমিতে ফলানো ফসল সারা বছর খাওয়ার পরও মজুদ থাকতো প্রতিটি পরিবারের। ২/৩ বছরের পুরানো ধান, চাউল, আলু, ভুট্টা, সরিষা বাজরে বিক্রি করতেন কৃষক। তখন একেবারে গরিব লোকও খাদ্য শস্য কিনতে হতো না। অধিকাংশ পরিবার বাজারে যেতেন শুধু কেরোসিন, লবন, চা-চিনি ও ভোজ্য তেল কেনার জন্য। ৪ দশক আগেও যে পবিারের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ থেকে ১০জন, সেই পরিবার ভেঙ্গে এখন হয়েছে ১০ থেকে ১২ পরিবার এবং সব পরিবার মিলে জনসংখ্যা হবে ৫০-৬০ জন এর অধিক। এসব পরিবারের ঘরে স্থান সাংকুলান না হওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি তৈরী করছেন। এতে কৃষি জমি কমছে, আবার খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। গত ৪ দশক ধরে বড় বড় হাওর গুলোতে ঘরবাড়ি তৈরী হওয়ায় হাওর এখন গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখন একান্নবর্তী পরিবার নেই। গ্রাম, শহর কোথাও যেন মানুষের স্থান সাংকুলান হচ্ছেনা। দেশের আয়তনের চেয়ে জনসংখ্যা হচ্ছে বেশি।

অষ্ঠাদশ শতাব্দিতে ইংল্যান্ডের অধিবাসি জনসংখ্যা তথ্যের জনক ম্যালথাস (সধষঃযঁং) লিখেন, বৈষম্য মূলক আর্থসামাজিক ব্যবস্থা নয়, জন্ম হার বৃদ্ধি দারিদ্রের কারন। ম্যলথাসের এ তথ্য অনেক ক্ষেত্রে ভুল প্রমানিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দূর্ভিক্ষ সম্পর্কে অর্মত্য সেনের গবেষনায় বলা হয়েছিল, দেশের প্রচুর খাদ্য মজুদ থাকা সত্তেও বৈষম্যমুলক সমাজ ব্যবস্তায় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকায় প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। ম্যলথাস জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা কমার ক্ষেত্রে দুই ধরনের নিরোধের কথা বলেছেন, যা পাপ এবং দূর্দশা তৈরী করে, তাকে তিনি প্রাকৃতিক নিরোধ বা ঢ়ড়ংরঃরাব পযবপশং যেমন যুদ্ধ মহামারি দূর্ভিক্ষ হচ্ছে প্রকৃতিক নিরোধের প্রধান রূপ। আর নৈতিক সংযম, যার মাধ্যমে মানুষ দেরিতে বিয়ে করে বা দেরিতে সন্তান জন্ম দেয় তা নিবারন মুলক নিরোধ বা ঢ়ৎবাবহঃরাব পযবপশং আখ্যা দেন। জনসংখ্যা কমাতে নৈতিক সংযম, তেমন কোন ভুমিকা রাখেনা বলে তিনি মনে করতেন। কিন্তু দেরিতে বিবাহ এবং দেরিতে সন্তান গ্রহণ জনসংখ্যা হৃাসের বড় একটি উপায়। তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, সিডর, আইলা এবং মানব সৃষ্ট বিভিন্ন দূর্যোগে প্রতিদিন অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দূর্ঘটনায় শত শত লোক মারা যাচ্ছেন। ম্যালথাস প্রাকৃতিক নিরোধে যে ঈঙ্গিত দিয়েছেন তা বাংলাদেশেই ঘটছে। ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারনে আশ্রয় দেয়ায় এখন বিপদে আছে বাংলাদেশ। তারা জন্ম নিরোধের কথা শুনতেই চায়না। প্রতিদিন প্রচুর সন্তান জন্ম গ্রহন করছে। এ যেন বাংলাদেশের মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর এক প্রকাশিত তথ্য মতে, বর্তমান জুলাই মাস পর্যন্ত প্রক্ষেপণ অনুযায়ি মুল জনসংখ্যা হবে ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজার। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে, মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার। বিবিএস এর মতে, দেশে এখন প্রতি সেকেন্ডে ১জন শিশু জন্ম হচ্ছে, আর প্রতি ১৪৪ সেকেন্ডে ১ জনের মৃত্যু হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ১১জন জন্মের বিপরিতে ১ জনের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতি আড়াই মিনিটে ১০ জন করে শিশু বাড়লে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার শিশু বাড়ছে এবং বছরে বাড়ছে ২১ লাখ ৯০ হাজার। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৬৬.৬৯ ভাগ অর্থাৎ ১১ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার কর্মক্ষম। এর মধ্যে নারী ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার, পুরুষ ৫ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার। অর্থনীতিবিদদের মতে, কর্মক্ষম জনসংখ্যার কারনে বাংলাদেশ বর্তমানে স্বর্ণযোগে অবস্থান করছে। জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি কর্মক্ষম হলে ডেমোগ্রাফিক বোনাসকালে অবস্থান করছে দেশ। কর্মক্ষম জনসংখ্যা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে জিডিপিতে অবদান রাখে। কর্মক্ষম লোকের মধ্যে কর্মে নিয়োজিত আছেন, ৬ কোটি ১৬ লাখ। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাস বেকার ছিলেন ২৯ লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১৪ লাখ পুরুষ ও ১৩ লাখ নারী বেকার ছিলেন। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, মোট জনসংখ্যার ৫ ভাগ বেকার। বিশ্বব্যাংক বিবিএস এর এ হিসেবে সন্তুষ্ট নয় (বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৬ মে ২০১৯ইং)। লন্ডনের ইকোনমিষ্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বলেছে, বাংদেশে ¯œাতক ডিগ্রিধারী ১০০ জনের মধ্যে ৪৭ জন বেকার। সরকারের মতে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দেশে ২৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরী হয়েছে। প্রতি বছর ২০ লাখ নতুন মুখ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষনার মাধ্যমে কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। বিদেশে ১ কোটি লোক কর্মরত আছেন।

বিবিএসের হিসেবে ১৯৭৪ সালে এদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। জরিপে বলা হয়েছে ৫ বছরের ব্যবধানে ৪ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যু কমেছে ২২ ভাগ। গড় আয়ু ৭১.৬ বছর, স্বাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ। ২০১২ সালে মাতৃমৃত্যু ২.০৩ থেকে ২০১৬ সালে ১.৭৮ জন। এ বছর পুরুষের গড় বিবাহ ছিল ২৪.৭ বছর, ২০১৬ সালে বেড়ে হয় ২৫.৩ বছর এবং মেয়েদের বিবাহ হয় গড়ে ১৯ বছর। ২০১৪ সালের মোট প্রজনন হার ছিল ২.৩ অর্থাৎ একজন নারী ১৫ থেকে ৪৯ বছর পর্যন্ত প্রজনন বয়সে ২.৩টি সন্তান জন্মদান করতেন। বাংলাদেশের প্রচলিত মূল্যবোধ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের পক্ষে না থাকায় দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মুল কারন। অপর দিকে এক সময় নারী শিশুর প্রতি আমাদের চরম অবহেলার কারনে এক বছরে প্রতি হাজারে ১০৫ থেকে ১২৫ জন শিশু মারা যেত। সন্তান জন্মদানকালে ৩০ হাজার নারী গর্ভজটিলতায় মারা যেতেন। এসব ঘটনা ছিল সেসময় স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এমন অবস্থা আর নেই।

পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হচ্ছে, চীন ও ভারত। চীনের আয়তন ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১৩৮ কোটি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ১৪২ জন মাত্র। চীনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল গত ৫ বছরে ০.৪৯%, ০.৪৪%, ০৫৭% এবং ২০২০ সালে হবে ০.৩৯%। ভারতের আয়তন ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৪০ বর্গকিলোমিটার। তাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৩১ কোটি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছেন ৩৬২ জন। সুইজারল্যান্ড ১৬৫, জার্মানিতে ২২৫, ব্রাজিলে ১৮, কেনিয়ায় ৪৩ জন, নেদারল্যান্ডে ৯৩১জন। বাংলাদেশের আয়তন ১লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছেন ১ হাজার ২৫০ জন। বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার বলে ধারনা করা হচ্ছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মধ্যপ্রা”্যে সবচেয়ে বেশি। তাদের প্রচুর সম্পদ আছে, অনেক ভুমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। তাই তাঁদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজন। কানাডা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করছে। তারপরও কোন কোন দেশ জনসংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে। গোটা বিশ্বের মধ্যে কাতারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। কুয়েতে ২০১৪ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৪.৯৩ শতাংশ, ২০১৭ সালে এ হার কমিয়ে আনা হয় ৬.৬৫ শতাংশে। কুয়েত ২০২০ সালে ২.৩৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির হার ছিল ১১.৮২ শতাংশ। ২০১৮ সালে কমিয়ে আনা হয় ২.০৩ শতাংশ। ২০২০ সালে ১.৩৯ শতাংশে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে দেশটি। যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট সহ উন্নত বিশ্বের দেশ গুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে। বুলগেরিয়া, বসনিয়া, আলজেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরী, ইতালি, জার্মান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলডোবা, পোল্যান্ড, পর্তুগাল রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন সহ অনেক দেশের জনসংখ্যা মাইনাসে আছে। দেশের স্বার্থে আমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে চীনের নীতিকে অনুসরন করতে পারি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ভারতের চেয়ে তিন গুণ এবং চীনের চেয়ে সাড়ে ৮ গুণ বেশি।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে পরিবার পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। ২০১৮ সালে বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করে। বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে কার্যক্রম বিশ্বের একটি অনুস্বরণীয় উদাহরণ। ১৯৯৪ সালের জাতি সংঘের জনসংখ্যা তহবিলের এক রিপোর্টে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নাটকীয় অগ্রগতি সাধন করেছে, জন্ম শাসনে বিপ্লব ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয়। গত বছর ১১ জুলায়ের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে এক বছরে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৩২ জন মহিলা পুরুষকে স্থায়ী পদ্ধতি, ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৪ জন মহিলাকে দীর্ঘ মেয়াদি সেবা দেয়া হয়েছে। ১৯৭৫ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৩৪, ২০১৭ সালে দাঁড়ায় ২.০৫ । এসময়ে গড়ে ৪ সন্তানের জন্ম রোধ করা হয়েছে। এত কিছু প্রচেষ্টার পরও জনসংখ্যা বাড়তেই আছে। কোথায় যেন হিসাবে গড়মিল। ১৯৮৯ সাল থেকে চীন ১ সন্তার জন্মের আইন চালু করার পর কর্মক্ষম কমে যাওয়ায় ২০১৬ সালে এসে আবার ২ সন্তানের নীতি চালু করে। আমাদের মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ ০.০৫ একর বা মাত্র ৫ শতক (২০১৪ সাল) এ পরিমাণ জমিতে একজন লোকের থাকা খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি দেশের সকল লোক কর্মক্ষম হয় এবং আর্থিক উন্নতি বাড়ে তবুও বাসস্থান সাংকোলান করা যাবেনা। বিজ্ঞজন দেশের সামাজিক নৈতিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় ঘটছে-এজন্য অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে দায়ি করছেন। যে কারনে দেশের স্বার্থে চীনের এক সন্তানের নীতি চালু করা জরুরী। বিষয়টি সরকার প্রধান সহ সকল সচেতন নাগরিককে ভেবে দেখতে হবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মধ্যপ্রা”্যে সবচেয়ে বেশি। তাদের প্রচুর সম্পদ আছে, অনেক ভুমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। তাই তাঁদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজন। কানাডা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করছে। তারপরও কোন কোন দেশ জনসংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে। গোটা বিশ্বের মধ্যে কাতারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। কুয়েতে ২০১৪ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৪.৯৩ শতাংশ, ২০১৭ সালে এ হার কমিয়ে আনা হয় ৬.৬৫ শতাংশে। কুয়েত ২০২০ সালে ২.৩৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির হার ছিল ১১.৮২ শতাংশ। ২০১৮ সালে কমিয়ে আনা হয় ২.০৩ শতাংশ। ২০২০ সালে ১.৩৯ শতাংশে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে দেশটি। যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট সহ উন্নত বিশ্বের দেশ গুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে। বুলগেরিয়া, বসনিয়া, আলজেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরী, ইতালি, জার্মান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলডোবা, পোল্যান্ড, পর্তুগাল রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন সহ অনেক দেশের জনসংখ্যা মাইনাসে আছে। দেশের স্বার্থে আমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে চীনের নীতিকে অনুসরন করতে পারি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ভারতের চেয়ে তিন গুণ এবং চীনের চেয়ে সাড়ে ৮ গুণ বেশি।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে পরিবার পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। ২০১৮ সালে বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করে। বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে কার্যক্রম বিশ্বের একটি অনুস্বরণীয় উদাহরণ। ১৯৯৪ সালের জাতি সংঘের জনসংখ্যা তহবিলের এক রিপোর্টে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নাটকীয় অগ্রগতি সাধন করেছে, জন্ম শাসনে বিপ্লব ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয়। গত বছর ১১ জুলায়ের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে এক বছরে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৩২ জন মহিলা পুরুষকে স্থায়ী পদ্ধতি, ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৪ জন মহিলাকে দীর্ঘ মেয়াদি সেবা দেয়া হয়েছে। ১৯৭৫ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৩৪, ২০১৭ সালে দাঁড়ায় ২.০৫ । এসময়ে গড়ে ৪ সন্তানের জন্ম রোধ করা হয়েছে। এত কিছু প্রচেষ্টার পরও জনসংখ্যা বাড়তেই আছে। কোথায় যেন হিসাবে গড়মিল। ১৯৮৯ সাল থেকে চীন ১ সন্তার জন্মের আইন চালু করার পর কর্মক্ষম কমে যাওয়ায় ২০১৬ সালে এসে আবার ২ সন্তানের নীতি চালু করে। আমাদের মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ ০.০৫ একর বা মাত্র ৫ শতক (২০১৪ সাল) এ পরিমাণ জমিতে একজন লোকের থাকা খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি দেশের সকল লোক কর্মক্ষম হয় এবং আর্থিক উন্নতি বাড়ে তবুও বাসস্থান সাংকোলান করা যাবেনা। বিজ্ঞজন দেশের সামাজিক নৈতিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় ঘটছে-এজন্য অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে দায়ি করছেন। যে কারনে দেশের স্বার্থে চীনের এক সন্তানের নীতি চালু করা জরুরী। বিষয়টি সরকার প্রধান সহ সকল সচেতন নাগরিককে ভেবে দেখতে হবে।

এ এইচ এম ফিরোজ আলী
লেখক, কলামিষ্ট ও সমাজ বিশ্লেষক


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *