নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান শুধু একজন ব্যক্তি নন। তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের সব মানুষের একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু লোভ ও অতিকথনের কারনে গত ৭জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর ভুমিধস পরাজয় হয়েছে। এ নিয়ে সর্ব মহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। আগামি কোনও নির্বাচনে তিনি দাঁড়াবেন, না কি এটাই ছিল তাঁর শেষ নির্বাচন এ নিয়ে জনমনে কৌতুহলের সৃস্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এটাই তার জীবনের শেষ নির্বাচন। যদি তাঁর ইচ্ছা হয় তাহলে ইউনিয়ন পরিষদেও দাঁড়াতে পারেন।
১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যুক্তরাজ্য থেকে এসে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসময় তিনি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বড় বড় কাচা রাস্তা, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দিরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাঁর পিতা হাজি কলমদর আলী ছিলেন মাথার ছায়া। পিতা দুই হাতে এ অঞ্চলের অসহায় গরিব, দু:খি মানুষের সহায়তা করে নজির স্থাপন করেছিলেন। হাজি কলমদর আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে অধ্যাপক আবু সাইদ চৌধুরীর সাথে অস্ত্র কেনার অর্থ সংগ্রহ করে সহযোগীতা করেন। পরবর্তীতে কলকাতায় এসে মুজিব নগর সরকারের নিকট বিপুল অর্থ দান করলে, মুজিব নগর সরকার এক পত্রের মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। মুহিবুর রহমানের দুই ভাই হাবিবুর রহমান ও সাইদুর রহমান সবসময় ভাইয়ের পিছনে অতন্ত্র প্রহরীর মত কাজ করেছিলেন। পরবর্তিতে হাসন রাজার দৌহিত্র দেওয়ান তৈমুর রাজার পুত্র শমসের রাজা চৌধুরীর নিকট পরাজিত হন। তিনি পরবর্তিতে আরেক বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও কোন উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি। তিনি পর পর ৪বার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। তাঁর কপালে সংসদ সদস্য হওয়ার ভাগ্য জোটেনি।
গত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি সাগর তুল্য ওয়াদা করলেও ১বছরের মধ্যে কিছুই করতে পারেননি। বিশ্বনাথ বাজারে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও বাসিয়া নদী খনন করা ছিল তাঁর প্রধান প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কোন উন্নয়ন না করে নিজ বাসায় সালিশ বোর্ড গঠন করে স্বামী-স্ত্রী ও পারিবারিক বিচার করে অশালিন কথা-বার্তা ও ছোট বড় সকল শ্রেণীর মানুষকে কটুক্তি করা ছিল প্রতিপক্ষের নির্বাচনের মুল হাতিয়ার। পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও গোপন থাকেনি। যা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে। পৌর নির্বাচনের সময় কতিপয় অসৎ ব্যক্তি, টোকাই, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে কথাবার্তা বললেও নির্বাচনের পর তাদেরকে নিয়ে তিনি নানা কর্মকান্ড শুরু করেন। এতে স্থানীয় জনমনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পৌর নির্বাচন সহ বিভিন্ন নির্বাচনে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর নাম ভাঙ্গিয়ে ইলিয়াস আলীর নিরব সমর্থকদের ভোট সংগ্রহ করতে পারলেও গত সংসদ নির্বাচনে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুসদীর লুনা ও ভাই আছকির আলীর ভিডিও বার্তার বক্তব্য চরম বিপদে ফেলে দেয় মুহিবুর রহমানকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান নির্বাচিত হলে এলাকার কোন উন্নয়ন করতে পারবেন না। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর এমন বক্তব্যের কারনে মুহিবুর রহমান কোনঠাসা হয়ে পড়েন। ফলে প্রথম দিকে মুহিবুর রহমানের ট্রাক ও নৌকা প্রতীকের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারনা করা হলেও ৩দিনের মধ্যে মুহিবুর রহমানের ভোট উধাও হয়ে যায়। অনেক কেন্দ্রে মুহিবুর রহমান এজেন্টই দিতে পারেননি। ৭জানুয়ারি রবিবার দুপুর ২টায় মুহিবুর রহমানসহ ৪জন প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করলে নির্বাচনী এলাকা জুড়ে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়ে যায়। ভোটার ও অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন সন্ত্রাসী লালন-পালন, ওয়াদা পুরনে ব্যর্থ ও সালিশ বিচারে অতিকথনের কারনে মুহিবুর রহমানকে সুচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
মুহিবুর রহমানের বক্তব্য জানতে তাঁর ০১৭১৩৩০০১২৭ নম্বর মোবাইলে একাধিকবার কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।