নিজস্ব প্রতিবেদক : পানি ছাড়া জীবন চলেনা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়না। পৃথিবীর ৪ভাগের ৩ভাগ পানি, মানুষের শরীরেও ৪ভাগের ৩ভাগ পানি। অতএব পানিই জীবন পানিই মরন। পানির উৎস সাগর মহা-সাগর নদ-নদী। এসব ভরে গেলে মরে গেলে মানুষ ও প্রকৃতির বিপর্যয় ঘটে। ভাসিয়া একটি নদীর নাম, একটি জীবনের নাম। নদীর জীবন ও যৌবন আছে। মানুষের মত নদীর হাঁসি, কান্না, বেদনা নিয়ে জীবন। বিশ^নাথের প্রাণ রক্ষাকারি নদী ভাসিয়ার দুঃখ, বেদনা, কান্না কেউ শুনছে না। যৌবনের সময় ভাসিয়ার পানি দুই তীর প্লাবিত করে পুরো অঞ্চলকে ভাসিয়ে দেয়ায় তার নামকরণই হয়েছে ভাসিয়া। কিন্তু অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ভোটনীতিতে ভাসিয়ার নাম লাখো বার উচ্চারিত হয় সুবিধাবাদিদের মুখে। নির্বাচনে ভোটের আগে ভাসিয়া নিয়ে কত আবেগ, কত প্রতিশ্রুতি দেয় সুবিধাবাদিরা। নির্বাচনের পর নদী বাঁচানোর কথা বেমালুম ভুলে যায় তারা ঐ ফটকাবাজরা। ময়লা আবর্জনা, পলিথিন, প্লাস্টিক ও মলমুত্রে ভরপুর ভাসিয়া নদী। মশা মাছির স্থায়ী ঠিকানা, পরিবেশ বিপর্যয়ের মুল উৎস এ বাসিয়া। প্রশাসনের নাকের ডগায় ভাসিয়াকে আহত বা খুন করা হচ্ছে। কিন্তু এ নদী রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছেনা।
সিলেটের টুকের বাজারের দক্ষিণে মাসুক বাজার নামকস্থানে সুরমা নদীতে জন্ম ভাসিয়ার। নদীটি কামাল বাজার, লালা বাজার হয়ে বিশ্বনাথ উপজেলাকে দ্বিখন্ডিত করে কালিগঞ্জ ও কাহির ঘাট বাজার হয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে। ভাসিয়ার যৌবনের সময় জাহাজ, লঞ্চ, ইস্টিমার, বড় বড় বালূ-পাথর বাহী ইঞ্জিল নৌকা চলাচল করেছে। নদীর সাথে সংযোগকারি খালগুলো পলিমাটি বহন করে জমির উর্বরাশক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরো বছরই ভাসিয়া তীরের মানুষ দেশীয় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। শীত মৌসুমে ইরি বোর ফসল ও রবিশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা স্বাবলম্বি হয়েছেন। ভাসিয়ার মাছ ও তীরের ফসল বিদেশে রপ্তানীও হয়েছে। কিন্তু ৮০দশকের পর থেকে এক শ্রেণীর নদী খেকো এই খরস্রোতা নদীটিকে ঘ্রাস করছে। কামাল বাজার, লালা বাজার, মুনসির বাজার, বিশ^নাথ বাজার, কালিগঞ্জ বাজার, খাইয়াখাইড় বাজারসহ অনেক এলাকায় নদীটিকে ভরাট করে সরুখাল বানানো হয়েছে। বিশেষ করে বিশ^নাথ থানা সদরে ভাসিয়া নদী এখন ডাস্টবিন ও বাথরুম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিদিন পলিথিন, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রিকের বজ্য, কাচা মালের বজ্য ফেলে নদীটিকে দুগন্ধময় করে তুলা হয়েছে। নদীর তীর দিয়ে বা বাজারে চলা ফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কয়েক বছর পূর্বে গণমাধ্যমে নদীটি খননের অনেক লেখা লেখির পর অর্থ বরাদ্ধ করা হলে একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে নদী তীরের ঘাস পরিস্কার করে নদী খনন না করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় ঠিকাদার। বিশ্বনাথ থানা সদরে নদীর দুই তীরে অবৈধ দলখদাররা নদীটিকে তাদের বাপ দাদার সম্পত্তি ভেবে দখল করে বসে আছে। গত পৌর নির্বাচনে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও নদী উদ্ধারে অনেকেই বড় বড় কথা বললেও এখন আর ভাসিয়ার কথা সরণ হচ্ছেনা। বর্তমান সরকার পরিবেশ রক্ষা ও মরা নদী, খাল-বিল খননের ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহণ করেছেন। তাই বিশ্বনাথ উপজেলাকে মরুভুমির হাত থেকে রক্ষা ও পরিবেশ বিপর্য রোধে সেনাবাহীনির তথ্যাবধানে নদীটি খননের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি।