ডাক ডেস্ক : সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি ধীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ-বাণিজ্যসহ অনিয়মের সিন্ডিকেট গড়ে তুলে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ভুয়া বিল–ভাউচারে টাকা আত্মসাৎ
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের অধীনে একটি সরকারি ল্যাপটপ রয়েছে। অথচ তিনি চারটি ল্যাপটপ মেরামতের বিল নিয়েছেন। এই মেমোতে আরও দুটি পিসি মেরামত, দুটি ক্যাচিং, চারটি প্রিন্টার, স্ক্যানার ও ইউপিএস ক্রয় করার বিল নিয়েছেন। অথচ পুরো অফিসে এসব যন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। চলতি বছরের ৩ মার্চ সুনামগঞ্জের স্টেশন রোডের নেজা প্লাজার এস কে কম্পিউটারের মেমোতে ২০ হাজার টাকার এই বিল নেন। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি একই দোকানের অন্য মেমোতে একটি ডিভিডি, পাঁচটি কি-বোর্ড ও মাউস এবং একটি স্ক্যানার (ক্যানন) কিনেছেন ১০ হাজার টাকায়। একইভাবে ৫ জানুয়ারি একই দোকানের আরেক মেমোতে একটি এইচপি মনিটর এবং একটি প্রিন্টার কিনেছেন ২০ হাজার টাকায়।
এস কে কম্পিউটারের মালিক শাহ মো. জিল্লুল হক রিপনকে হোয়াটসঅ্যাপে মেমোগুলো পাঠানো হলে তিনি বলেন, ‘মেমোগুলো আমার দোকানের ঠিক আছে। তবে লেখা বিল ও স্বাক্ষর আমাদের না।’
শহরের হাছননগরের মেসার্স শিমলা ফার্নিচার মার্ট থেকে ৪ ও ২৫ এপ্রিল দুটি মেমোতে ২০টি চেয়ার ও ৮টি আলমারি মেরামত, কাঠ, রং, মজুরিসহ অন্যান্য খরচের জন্য ৪০ হাজার টাকা বিল দেখানো হয়েছে। অথচ অফিসে ১০-১২টি চেয়ার ও ৩-৪টি আলমারি রয়েছে।
মেসার্স শিমলা ফার্নিচার মার্টের প্রোপ্রাইটর মো. ওয়াহিদ আলী বলেন, ‘শিক্ষা অফিসে কাজ করেছি বলে মনে হচ্ছে না। অনেকে বিল করার জন্য খালি মেমো নিয়ে থাকেন।’
ষোলঘর কলোনি রোডের মেসার্স জান্নাত ফার্নিচার মার্টের মেমোতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাঠের দুটি চেয়ার ও টেবিল কিনেছেন ১৫ হাজার টাকায়। মেসার্স জান্নাত ফার্নিচার মার্টের মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা অফিসে কোনো মালপত্র বিক্রি করিনি। যে মুকিতের স্বাক্ষরের মেমো, এই নামে আমার দোকানে কেউ নাই।’
৬ জানুয়ারি পৌর বিপণির কাগজ ঘর অ্যান্ড স্টেশনারি থেকে কাগজ, ফাইল বোর্ড, স্ট্যাপলার মেশিন, স্ট্যাম্প প্যাড ও রেজিস্টার খাতা কিনেছেন ১৬ হাজার ২৪০ টাকার। কাগজ ঘর অ্যান্ড স্টেশনারির মালিক আবুল হায়াত বলেন, ‘মেমো ও স্বাক্ষর আমার, কিন্তু বিবরণ আমার লেখা না। এটা তারা আমাদের কাছ থেকে খালি মেমো নিয়ে লিখে বিল করে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো স্কুলের বিল, শিক্ষা অফিসের নয়।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফাঁসানো
২০২২ সালের ১৭ মে ধর্মপাশার জয়শ্রী উচ্চবিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে তিনজনকে নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্টরা। স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতির মাধ্যমে এই নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের মো. কামরুল হাসান। তিনি মাউশি সিলেটের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এই নিয়োগ বাতিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর মাউশি সিলেটের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদ অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেন অভিযুক্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীরকে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত তিন কর্মচারীর এমপিও দেওয়ার সুপারিশ করেন। অভিযোগকারী নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন না। পরে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে স্বাক্ষর ও সিল দিয়েছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদন দেন জাহাঙ্গীর।
১১ এপ্রিল মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘মাউশি সিলেটের পরিচালক ও উপপরিচালক নিয়োগপ্রাপ্তদের কাগজপত্র ও তথ্যাদি সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে মতামতসহ প্রতিবেদন দিয়েছেন। এতে তাঁরা বলেন, তিন কর্মচারী নিয়োগকালে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকলেও নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল শিটে (সিএস) এবং নিয়োগসংক্রান্ত রেজল্যুশনে তাঁর স্বাক্ষর আছে। ২০ হাজার টাকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’