স্টাফ রির্পোটারঃ দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত ও বিশ্বনাথের চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা মামলার বিচার হবে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে। ১৮ জুলাই সোমবার সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এই আদেশ দেন। এসময় আদালতের কাঠগড়ায় সুমেল হত্যা মামলায় জড়িত ৩২জন আসামী উপস্থিত ছিলেন। বাদী পক্ষের শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন সিনিয়র আইনজীবি এএসএম গফুর ও সামিউল ইসলাম। প্রধান আসামী সাইফুলকে জেল থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালতের প্রবেশের আগে আসামীদের মধ্যে হাসিখুশি দেখা গেলেও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা স্থানান্তরের আদেশ শুনে আসামীগণ হতভম্ব ও চেহারা মলিন দেখা যায়। ৩২জন আসামীদের মধ্যে ৩১জন আসামী জামিনে রয়েছেন এবং প্রধান আসামী সাইফুল ৪ বার মহামান্য হাইকোর্ট ও জেলা জজ আদালতে কয়েকদফা জামিনের আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের খুনিদের ফাঁিস দাবী করে সিলেট ও বিশ্বনাথে মানববন্ধন, মিছিল, মিটিং ও প্রতিবাদ সভায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য দাবী জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী।
বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ও দৌলতপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তীস্থানে সিলেটের প্রখ্যাত চাউলধনী হাওরের অবস্থান। দশঘর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি নামে একটি ভূয়া সংগঠন যুক্তরাজ্য প্রবাসী হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী সাইফুল বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ করে গত ১ যুগ ধরে চাউলধনী হাওরে অসহায় গরিব কৃষকদের খাল, বিল, পুকুর, নালা, জলাশয়, জমি জোরপূর্বক দখল করে লাখ লাখ টাকার মাছ ধরে নিয়ে যায়। এ নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমণ করে রাখে।
বিশ্বনাথ থানা পুলিশের সহায়তায় থানা ও গ্রাম এলাকায় একাধিক বৈঠক করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাইফুল ও তার অস্ত্রবাজ বাহিনী ২০২১সালের ১লা মে চৈতননগর গ্রামের নজির উদ্দিন ও মনির উদ্দিনের ভূমি জোরপূর্বক দখল করতে যায়। এর আগের রাতে সাইফুলের বাড়ীতে আসামীরা বৈঠক করে এবং হত্যাকান্ডের মাস দেড়েক পূর্ব থেকে থানা পুলিশের সাথে সাইফুল একাধিক বৈঠক করে যে কোন হত্যাকান্ড ঘটলে তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখতে পুলিশ তাকে সহয়তা করার অলিখিত সিদ্ধান্ত হয় । হত্যাকান্ডের সময় ঝাটা, সুলফি, লাঠি, বল্লম ব্যবহার করা হলেও সাইফুল তার নিজের লাইসেন্সকৃত বন্দুক দিয়ে ও আরও কয়েকটি অবৈধ পিস্তল পাইপগান দিয়ে মূহমূহ গুলি করলে সুমেলের মুখে, চোখে ও শরীরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শরীর ঝাঝরা হয়ে যায়। এসময় তার বাবা, চাচা সহ আরও ৪জন গুলিবিদ্ধ হন। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেয়ার পর সুমেল মৃত্যুবরন করে।
গুলাগুলির পর এলাকাবাসী জড়ো হয়ে সাইফুলসহ আসামীদের আটক করতে চাইলে পুলিশ গ্রামবাসীকে তাড়িয়ে দেয় এবং সাইফুলকে নিরাপদে তার বাড়ীতে পৌছে দেয়। সাইফুলের ঘর থেকে দুটি পাসপোর্ট নিয়ে আসে পুলিশ। খুনিদের রক্ষার জন্য পুলিশ রক্তমাখা আলামত কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ফেলে দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে সাইফুল থানার গেইটে এসে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ওসির নিকট থেকে পাসপোর্ট ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা তদবির করে। কিন্তু টাকার পরিমাণে গড়মিল হওয়ায় পাসপোর্ট পেতে কিছুটা বিলম্ব হলে মুহুর্তের মধ্যে এমন খবর চলে যায় সাংবাদিকদের কাছে। কিছু সময়ের মধ্যে স্থানীয় একটি অনলাইলে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় সাইফুল পাসপোর্ট না নিয়ে বিশ্বনাথ থানা সদর থেকে পালিয়ে যায়। এসময় বিশ্বনাথ থানার ওসি ছিলেন শামীম মূসা। খুনি সাইফুল সহ আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও তাদেরকে গ্রেফতার করেনি কেউ। অবশেষে ২১ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী ইব্ররাহিম আলী সিজিল সহ বাদী পক্ষের লোক ঢাকার রমনা থানা এলাকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে সাইফুলকে আটক করে সিলেটে নিয়ে আসে। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সাইফুল জেল হাজতে রয়েছে।
হত্যাকান্ডের পর সিলেটের ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাগণ সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চাউলধনী হাওরে সাইফুল বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের বর্ণনা এলাকাবাসীর থেকে শুনেন। কিন্তু নানা তদবিরের কারনে সাইফুলকে আটক করা হয়নি। অবশেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি রমাপ্রসাদ চক্রবর্তী গত মার্চ মাসে আদালতে ৩২জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করলে, বিশ্বনাথ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে নথিটি জেলা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। ১৮ জুলাই উভয় পক্ষের শুনানী শেষে জেলা জজ মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন। এসময় বাদী ও বিবাদী পক্ষের অনেক লোক আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।