বিশ্বনাথে নদী খননের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব

Uncategorized
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর সীমান্তে সুরমা নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া খাজাঞ্চী-মাকুন্দা-কাপনা নদীতে খননের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। লামাকাজী ইউনিয়নের বাংলাবাজার ও নোয়াগাঁও এবং রামপাশা ইউনিয়নের জমশেরপুর থেকে রামাপাশা গ্রাম পর্যন্ত নদীর দুই তীরে ঘর বাড়ী ও দোকানের মালিকদের নিকট থেকে গণহারে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। নদী খননের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দায়িত্বে নিয়োজিত কাজের লোকদের সাথে স্থানীয় কতিপয় লোক মিলে বাড়ী-ঘর, দোকানপাট খনন করে নদী গর্ভে ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। চার-পাঁচ হাজার, দশ হাজার এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকার করে ইতিমধ্যে প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকার মতো হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এলাকার বৈরাগীবাজার, বাংলাবাজারের নদীর তীরে দেড় শতাধিকের মতো দোকান ও কয়েক শতাধিক ঘর বাড়ী রয়েছে।
বিষয়টি জানার পর কয়েকজন সাংবাদিক সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে জমশেরপুর নোয়াগাঁও, আমতৈল, বৈরাগীবাজার, ধলিয়াপাড়া এলাকার হুমায়ুন আহমদ, আব্দুর রহিম, লিলু মিয়া, এমাদ উদ্দিন, আলাই মিয়া, সুরুজ আলী, নুরুল হক, মোহাম্মদ আলী সহ অর্ধশতাধিক লোকজন চাঁদা তোলার এই মহোৎসবের কথা জানান। ঠিকাদারের ভেকু মেশিনটি নদীর তলদেশ খনন না করে নদীর তীরের পাশে যত সামান্য মাটি কেটে বিভিন্ন দোকানও বাড়ীর কাছে গিয়ে দোকান ও ঘর-বাড়ী কেটে নেয়ার হুমকি দেয় এবং স্থানীয় কতিপয় লোকগণ প্ররোচিত করে চাঁদা দিতে বাধ্য করে। অথচ নদীর মূল অংশতে কোন মাটি কাটা হচ্ছে না। আমতৈল, জমশেরপুর এলাকার মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের গরীব লোকজন টাকা দিতে না পারায় তাদের ভাঙ্গনকৃত নদীর তীরও খনন করে ফেলা হয়েছে। যেকোন সময় নদীতে পানি আসলে জমশেরপুরের শতাধিক ঘর-বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে।
একটি সূত্রে মতে ২৮ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ১৩ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ করা হয়। উত্তর ঢাকা, গুলশান প্লট নং-২, দর্পন কমপ্লেক্সের এসএ, এসআই ইসরাত এন্টারপ্রাইজ জেবী প্রথম ১৫ কিলোমিটার এবং পূবালী এন্টারপ্রাইজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৩ কিলোমিটার নদী খননের কার্যাদেশ পায়। মরা সুরমায় ২.২ কিলোমিটার থেকে খাজাঞ্চী নদী ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রথম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ঘনমিটার মাটি নদীর তল দেশ থেকে কাটার কথা রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। পূবলী এন্টারপ্রাইজ দ্বিতীয় অংশে ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি কাটার কথা এবং এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। মাটি কাটার পর খননকৃত মাটি দিয়ে নদীর তীর সংরক্ষণ তথা বেড়ী বাধের মতো রাস্তা করার কথা এবং বৃষ্টির পানিতে মাটি যাতে নদীতে না পড়ে সেজন্য ঘাস ও গাছ লাগানোর কথা, কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদী খনন করছেই না, বরং নদীর তীরের কিছু মাটি কেটে নদী ভাঙনের পথ সুগম করে দিচ্ছে। সরকারের নিদের্শনা মতে, ২৮ কিলোমিটার নদী খননের স্থানে ১০ মিটার থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত খননস্থান গভীর হতে হবে। যেখানে খনন হবে না, সে স্থান খননের আওতায় হিসাবও ধরা যাবে না। ২০১৭ সালের ৩ মার্চ স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় “নদী এখন মরা গাঙ, পানি সংকটে বিশ্বনাথ” শিরোনামে একটি নিবন্ধন প্রকাশিত হওয়ার পর সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড পত্রিকাটি সহ একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হলে, তা অনুমোদন এবং কার্যদেশের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর হোসেন জানান, চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ পাইনি। তবে ঠিকাদার নদীর চর খনন করে নদীর তীরে মাটি দিচেছ না। সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য দাবী করছি।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের আসিফ নামের এক কর্মকর্তা জানান, টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঠিকাদারকে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য কঠোর নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে। কাজের তদারকি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখবো।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *