নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে গত ২৮জানুয়ারী ছরকুম আলী দয়াল ও ১লা মে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যাকারীদের ফাঁসি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, হাওরের লীজ বাতিল, মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ভূইয়া, সমবায় কর্মকর্তা কৃষ্ণা রাণী তালুকদার, প্রাক্তণ ওসি শামীম মূসা ও এসআই ফজলুর রহমানের অপসারন দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চাউলধনী হাওর রক্ষা ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটি।
৬ অক্টোবর বুধবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত জণার্কীণ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও আন্দোলন কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চাউলধনী হাওরে ১৭৮.৯৮ একর খাস খতিয়ান ভূমি দশঘর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ ভূয়া ও জ্বাল কাগজপত্র দিয়ে লীজ নিয়ে কৃষকের কয়েক হাজার জমিতে জোরপূর্বক মাছ ধরে হাওরকে পানি শুন্য করে দেয়। এতে বৎসরে প্রায় শতকোটি টাকার কৃষকদের ক্ষতি হয়। লীজের শর্তে ভাসমান মাছ ধরার কথা থাকলেও সেচ দিয়ে মাছের প্রজনন ধ্বংস, পাখি শিকার ও খামারীদের হাস জোরপূর্বক ধরে নিয়ে নেন। এভাবে গত ১০ বছরে হাওরটিতে লুটপাট চালানো হচ্ছে। সাবলীজ প্রদান করা বেআইনি হলেও সাইফুল ও তার অস্ত্রবাজ বাহিনীর নিকট সাবলীজ প্রদান করে দশঘর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। এ জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ভূইয়া ও সমবায় কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী তালুকদার, বিশ্বনাথ থানার প্রাক্তন ওসি শামীম মূসা, এসআই ফজলুকে ডাবল মার্ডারের জন্য দায়ী করে তাদের অপসারন দাবী করা হয়। দয়াল হত্যা মামলার পর খুনিদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য এলাকাবাসী লিখিতভাবে ওসিকে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে, সাইফুল বাহিনী স্কুলছাত্র সুমেলকে খুন করে। চাউলধনী হাওর উন্নয়নের নামে ৬৪ লাখ বরাদ্ধ করা হলে খুনি সাইফুল হাওরের নির্ধারিত স্থানে মাটি না কেটে জোরপূর্বক নজির মিয়ার বাড়ি ও জমিতে মাটি কাটাতে থাকে। এতে বাধা দেয়ায় সুমেলকে হত্যা করা হয়। সুমেল হত্যার পর ওসি শামীম মূসা, এসআই ফজলু খুনীদের গ্রেফতার না করে ঘটনাস্থলে ত্যাগে আসামীদের সহায়তা করেন এবং রক্তের আলামত মুছে ফেলেন। ঘটনার পর পুলিশের অন্য একটি দল সাইফুলের পাসপোর্ট দুটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসলে খুনি সাইফুল থানায় এসে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা তদবির করেন। তাতেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। সাইফুলকে সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ডাবল মার্ডারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলেও ৮ মাসে খুনিরা ধরা পড়েনি, অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, সাইফুলের বন্দুকের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়নি। খুনিরা দীর্ঘ ৮মাস সিলেট ও ঢাকায় অবস্থান করে গত ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর মহামান্য হাইকোর্টে আর্ত্মসম্পন করে। মহামান্য হাইকোর্ট সাইফুল, নজরুল, সদরুল , সিরাজ ও আছকিরকে ২৮দিনের মধ্যে নি¤œ আদালতে সালেন্ডার ও ১৫জনকে ৪২দিনের জামিন মঞ্জুর করেন। আসামীরা জামিন পেয়ে বাদী স্বাক্ষীদের মামলা তুলে নিতে প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। মামলার বাদী ইব্রাহিম আলী সিজিল ও স্বাক্ষী নজির উদ্দিন বিশ্বনাথ থানায় জান মালের নিরাপত্তায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। ওসি শামীম মূসা ও সাইফুল হত্যা মামলা দুটি ভিন্ন খ্যাতে প্রভাবিত করতে বর্তমান ওসি গাজী আতাউর রহমান ও তদন্তকারীদের বিরু্দ্ধে নামে বে নামে অভিযোগ দাখিল করছে। যাতে আসামীরা খুনের মামলা থেকে পার পেয়ে যায়। এতে বিভিন্ন জায়গা লাখ লাখ টাকার লেনদেন হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
চাউলধনী হাওর উন্নয়নের নামে ৬৪লাখ লুটপাটের বিষয়ে তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী জানানো হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নজির উদ্দিন, আহমদ আলী, মানিক মিয়া, সামছুদ্দিন মেম্বার, মাওলানা ছমির উদ্দিন, আব্দুল মালিক, হোসেন আহমদ, আলা উদ্দিন প্রমুখ।