বিশ্বনাথে চাঞ্চল্যকর সুমেল হত্যাকান্ডঃ মহামান্য হাইকোর্টে ১৩জনের জামিন, ৫জন সালেন্ডারের নিদের্শ

Uncategorized
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের চাঞ্চল্যকর ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী স্কুলছাত্র সুমেল হত্যাকান্ডের ১৩ আসামীকে ৬ সপ্তাহের (৪২দিন) আগাম জামিন দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট এবং ৫জনকে ৪ সপ্তাহের (২৮দিনের) মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন ও আতাউর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করারও নির্দেশ দেন আদালত । বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ও বাদীসহ বিভিন্ন সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বনাথ থানায় দাখিলকৃত আসামী পক্ষের জালাল উদ্দিন নামক একজন আইনজীবীর প্রদত্ত সনদে বলা হয়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর টেন্ডার নং-৩৬৪১১ এবং লিষ্ট নং-৮৫মূলে সুমেল হত্যা মামলার ১নং আসামী সাইফুল আলম, তার ভাই ২নং আসামী নজরুল আলম, অপর ভাই ৩নং আসামী সদরুল আলম এবং একই দিন এজাহার নামীয় ৬নং আসামী সিরাজ উদ্দিন, ৮নং আসামী আসকির মিয়া ও ১২নং আসামী মামুনুর রশীদ টেন্ডার নং ৩৬৪৫১ (লিস্ট নং-১১) মতে আদালতে জামিনের প্রার্থনা করেন। শুনানী শেষে আদালত মামুনুর রশীদকে ৬ সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর ও অপর ৫জন কে ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে হাজির হওয়া নির্দেশ দেন।
পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর একই মামলায় টেন্ডার নং-৩৬৪৫১, লিস্ট নং-১১ মুলে আসামী সিরাজ উদ্দিন, আসকির মিয়াকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে হাজির হওয়ার নিদের্শ এবং আসামী মামুনুর রশীদকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। একই দিন টেন্ডার নং-৩৬৪৫৩, লিস্ট নং-১২ মুলে ২২নং আসামী আকবর মিয়া, ২৩নং আসামী আজাদ মিয়া, ২৪নং আসামী মুক্তার মিয়াকেও ৬ সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেন। টেন্ডার নং ৩৬৪৪৯ লিস্ট নং-১০ মুলে ১৬নং আসামী ওয়াহিদ মিয়া, ১৭নং আসামী জামাল আহমদ, ১৮নং আসামী শাহিন মিয়া, টেন্ডার নং ৩৬৪৫৫, ১৩নং আসামী কাওসার রশিদ, ১৪নং আসামী দিলাফর আলী, ২১নং আসামী ফরিদ মিয়া, টেন্ডার নং ৩৬৪৪৭, লিষ্ট নং ৯ মুলে আসামী লুৎফুর রহমান, ময়ুর মিয়া, দিলোয়ার মিয়াকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামীন মঞ্জুর করে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
বিশ্বনাথ উপজেলার প্রখ্যাত চাউলধনী হাওরটি দশঘর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে একটি অমৎসজীবী সংগঠন লীজ নিয়ে সাইফুল নামক একজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সহ তার বাহিনীর নিকট সাবলীজ প্রদান করে। মৎস্য আইনে সাবলীজ দেওয়া সম্পুর্ন নিষিদ্ধ এবং জেলা প্রশাসন লীজ বাতিল করার কথা। কিন্তু গত ১০ বছর যাবৎ সাইফুল বাহিনী এ অঞ্চলের মৎসজীবী ও কৃষকদের জলাভূমির পুকুর-খাল দখল করে এলাকায় অরাজকতার সৃষ্টি করেছে।
চলতি বছর ২৮ জানুয়ারী কৃষক ছরকুম আলী দয়ালকে হত্যা করে সাইফুল আলম ও তার বাহিনী। তাদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার না করায় গত ১লা মে বৈধ-অবৈধ অস্ত্র দিয়ে স্কুলছাত্র সুমেলকে খুন করে এবং অপর ৫ জনকে গুরুতর জখম করা হয়। গত ৩ মে সুমেলের চাচা ইব্রাহিম আলী সিজিল বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-০৪, তারিখ-০৩/০৫/২০২১ইং, বিশ্বনাথ জিআর-১৩১/২০২১), ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪/৫০৬/৩৪ দ:বি। )
এ ঘটনায় সিলেটসহ সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাড়িতে রায়হানকে হত্যার পর সিলেট যেভাবে উত্তপ্ত হয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে সুমেল হত্যার পর দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উধ্বর্তন কর্মকর্তারা দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও খুনি সাইফুল সহ তার বাহিনীকে গ্রেফতার করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ৫মাসেও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বা খুনিরাও গ্রেফতার হয়নি। এমতাবস্থায় সুমেল হত্যার খুনিরা হাইকোর্টে সালেন্ডার করে।
মামলার বাদী ইব্রাহিম আলী সিজিল বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এখন আমি, আমার পরিবার ও মামলা স্বাক্ষীগণ দারুন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। আসামীরা যেকোন ধরনের অঘটন ঘঠিয়ে আমাদের বিপদ ফেলার আশংকা করছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ থানা ওসি (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী জামিনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমরা যেকোন বিশৃঙ্খলা রোধে তৎপর রয়েছে পুলিশ।
বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান আসামীদের আগাম জামিনের কথা স্বীকার করে বলেছেন, চাউলধনী হাওরের দিকে পুলিশের কড়া নজরদারী রয়েছে। কোনক্রমে কাউকে বিশৃঙ্খলার সুযোগ দেয়া হবে না।

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *