বিশ্বনাথের ডাক ডেক্স: আজ ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ওজন দিবস। প্রতিবছর গণসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ দিবসটি পালিত হয়। বায়ুমন্ডলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে যে স্তর, সেটি হচ্ছে ওজন স্তর। ওজন স্তরের ক্ষয়ের ফলে অতি বেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে। এতে উদ্ভিব জগত, সমুদ্র, পরিবেশ এবং মানুষের ত্বক, ক্যান্সার, চোখের ছানীসহ অনেক ক্ষতি করে এই ওজন স্তর। ওজন স্তর পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের এমন একটা অংশ, যেখানে সাধারনত পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তুলনায় খুব ঘন এবং তুলনামূলক ভাবে বেশি মাত্রায় ওজন গ্যাস থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুমন্ডলের ওজন স্তরে প্রতিনিয়ত ক্লোরো, ফ্লোরো কার্বন (সিএফসি) গ্যাসসহ অন্য ওজন স্তর ক্ষয়কারী গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে ওজন স্তর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যে কারনে বায়ুমন্ডল চরম উষ্ণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ওজন স্তর ধ্বংস মানেই পৃথিবীর পরিবেশ ও মানব জাতির মারাত্মক বির্পযয় ডেকে আনা।
বাংলাদেশে ওজন স্তরের কারনে পরিবেশের ক্ষতি বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা এবং পরিবেশ দূষণ জনিত কারনে বিশ্বে প্রতি বছর ৮০ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করেন। ওজন স্তর ধংসের প্রধান কারনে বজ্যপাত, আলোক রশ্মির বিক্রিয়া, অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাব, ক্লোরো, ফ্লোরো, কার্বন, নাইট্রেইন্স অক্সাইড, ক্রোমিন পরমাণু, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফারের কণা ইত্যাদি ওজন স্তর ধ্বংস করে। পৃথিবীর শিল্প উন্নত দেশগুলো প্রতিনিয়ত সিএফসি গ্যাস মাত্রাত্রিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন করে বির্পযয় ডেকে আনছে।
১৯৮৭সালে ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমন্ডলের ওজন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিব্ধ বা সীমিত করার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজন স্তর ধংসকারী পর্দাথের উপর মন্ট্রির প্রটোকল গৃহিত হয়। ২০৪০সাল নাগাদ এসব গ্যাস বন্ধের কথা। ১৯৯০সালে মন্ট্রিরল প্রটোকলে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশে গণসচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু এই দিবসটির ব্যাপারে অধিকাংশ লোকের কোন ধ্যান-ধারনা নেই। মানুষ বন জঙ্গল উজাড় করছে, খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট হচ্ছে। বায়ু মন্ডলও উতপ্ত হচ্ছে। বাড়ী ঘর, রাস্তা ঘাট, পাকা হওয়ায় দিন দিন গরম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে যে হারে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এয়ারকন্ডিশন বা এসি লাগানো হচ্ছে, সে কারনে সিএফসি গ্যাস বৃদ্ধি পেয়ে বায়ুমন্ডলের ওজন স্তর আরও বেশি ক্ষতি করছে। তাই বাংলাদেশের চরম পরিবেশের বির্পযয় ঘটছে।
একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ভাগ বনভূমি থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে কাগজে কলমে ১২-১৩ভাগ ভূমি রয়েছে বলে বলা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে বন জঙ্গল বিহীন হয়ে পড়ছে দেশ। এতে ওজন স্তর ক্ষতি হওয়ায় সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি সম্পদ, বন সম্পদ ধংসের দ্বারপ্রান্তে। ষড়ঋতুর অস্থিত এখন বিলীন। শীতকালেও গরম থাকে। প্রাণী জগতের অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত। নানা রোগব্যাধীতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই জলবায়ু পরিবর্তন এবং ওজন স্তর ধংসের হাত থেকে রক্ষায় গণসচেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক হারে সবুজায়ন করে আমাদের সবুজ-শ্যামল বাংলাকে পুণঃরায় তার চেহেরায় ফিরিয়ে দিতে হবে।