বিশ্বনাথ চাউলধনী হাওরের লীজ বাতিলের দাবিতে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

Uncategorized
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার প্রখ্যাত চাউলধনী হাওরের লীজ গ্রহীতা কর্তৃক কৃষকদের অত্যাচার নির্যাতন এবং সেচের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে হাওর শুকিয়ে ইরি বোরো ফসল উৎপাদনে বাঁধার সৃষ্টি করার অভিযোগে হাজার হাজার কৃষক অভিনব পন্থায় হাওরের মধ্যে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কৃষকরা। চাউলধনী হাওরের পূর্বপারে লম্বারটেক নামক বোরো জমিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। হাওরের চর্তুদিকে ২০ থেকে ২২টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক খন্ড খন্ড ভাবে জমিনের আইল দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন, কৃষি উপকরণ হাতে নিয়ে মিছিল সহকারে হাওরে জমায়েত হতে থাকেন। প্রচন্ড রোধ উপেক্ষা করে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হাওরের চর্তুদিকে প্রায় ৪কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে তারা যোগদেন। স্থানীয় সাংবাদিক ও সিলেটের কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা কৃষকদের এমন অভিনব সমাবেশ দেখতে তারাও সমাবেশে যোগদেন। ‘আর কোন দাবি নাই জলাশয়ের লীজ বাতিল চাই, চাউলধনী হাওরের কৃষক বাঁচাও ক্ষতি পূরণ দাও, জলাশয় ভূমির সীমানা নির্ধারণ চাই, জীব বৈচিত্র্য রক্ষাকর, বেড়ি বাঁধ ও স্লুইস গেইট নির্মান চাই ইত্যাতি শ্লোগানে পূরো হাওর এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। হাওরের শ্লোগানে পাশের গ্রামের নারী পূরুষরা দাঁড়িয়ে সভাটি প্রত্যক্ষ করেন। হাওর শুকিয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক সমাবেশস্থলে আবেক আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা লীজ বাতিল ও ইজারাদারের শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেন।

চাউলধনী হাওরের কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আবুল কালামের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত প্রতিবাদ সমাবেশে পবিত্র কোনআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা ছমির উদ্দিন। আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব মাষ্টার বাবুল মিয়ার পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক ২বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এ অঞ্চলের অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব জননেতা মুহিবুর রহমান। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট লেখক ও সমাজ বিশ্লেষক এ এইচ এম ফিরোজ আলী।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আমির আলী, দৌলতপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আরিফ উল্লাহ সিতাব, আয়ারল্যান্ড আ’লীগের সহ-সভাপতি ডা: বদরুল ইসলাম, ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন, ওয়াব আলী, আযম আলী মেম্বার, সামসুদ্দিন মেম্বার, নজির আহমদ, হাফিজ আরব খান, আশিকুর রহমান আব্দুল গনি, নজরুল ইসলাম হামদু, মো: সাজ্জাদ আলী, মো: লাল মিয়া, আলতাব হোসেন, নজির আহমদ, মনোয়র হোসেন, দৌলতপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমদ, আবু তাহের, রুহেল আহমদ কালু, আফজাল হোসেন, আহমদ আলী। সভা পরিচালনা করেন, দৌলতপুর ইউনিয় আ;লীগের সাধারণ সম্পদক আব্দুল আজিজ প্রমুখ।

এসম উপস্থিত ছিলেন, সদস্য ইরন মিয়া, আব্দুল মজিদ, শাহীন আহমদ তালুকদার।

মুহিবুর রহমান বলেন, দশঘর সমবায় সমিতির নামে ভূয়া সদস্য দেখিয়ে দূর্ণীতির মাধ্যমে ১.৭৮ একর জমি ভাসমান মাছ ধরার জন্য ইজারা দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ইজরাদার সাবলিজ দিয়ে কৃষকের নিজস্ব ভূমিতে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের হাঁস ধরে নিয়ে খাচ্ছে। নিরীহ লোকজন বাঁধা আপত্তি করলে তাদেরকে মারপিট করে এলাকায় আতংকের সৃষ্টি করে। কিন্তু তার সাথে প্রশাসনের যোগসাজস থাকায় এবং বন্দুক দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখালেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। লীজ বাতিল করে সরকারি জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণ এবং হাওরের ছোট ছোট খাল, পুকুর-নালা খনন করে ২৫/৩০ হাজার কৃষককে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি জানান। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সীমানা নির্ধারনের আগে কোন কৃষকের পুকুর-নালা সেচ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে মাছ ধরার চেষ্টা করলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। কোন মতেই ভাসমান জলাশয় লীজ নিয়ে সাবলীজ দেয়ার আইনগত কোন অধিকার নেই লীজ গ্রহীতার।

বিশিষ্ট লেখক ও সমাজ বিশ্লেষক এ এইচ এম ফিরোজ আলী তার বক্তব্যে বলেন, চাউলধনী হাওরে স্লুইস গেইট নির্মাণের জন্য ১৯৭৭ সালে জাতীয় একটি জনপ্রিয় দৈনিকে সম্পাদকীয় লেখার পর একটি দাতা সংস্থা স্লুইস গেইট নির্মাণে আগ্রহী হয় এবং তারা সরেজমিনে হাওরটি এসে জরিপ করে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে আর গেইটটি নির্মাণ করা হয়নি। চাউলধনী হাওরে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার একরের মতো জমি রয়েছে। পানির অভাবে প্রতি বছর শত কোটি টাকার ধান কম উৎপাদন হয়। তিনি বলেন, চাউলধনী হাওরের মিটা পানির মাছ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার দুবাইসহ পৃথীবির বিভিন্ন দেশে একসময় রপ্তানী করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতো। কিন্তু প্রশাসনের দূর্নীতিবাজ কমৃকর্তাদের কুপরামর্শে অতি কৌশলে মৎসজীবির নামে সমিতি গঠন করে জলাশয় লীজ এনে কৃষকের জমি দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতি বছর হাওরটি সংকোতিচ হচ্ছে, অনেক কৃষক অত্যাচারের ভয়ে জমি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কৃষকদের রক্ষায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে চাউলধনী হাওর উদ্ধারের জন্য দেশি বিদেশি সকল মহলের প্রতি তিনি আহবান জানান।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *