বিশ্বনাথ দশঘর ইউপি নির্বাচনে নৌকা ঠেকিয়ে ধানের শীষ জয়ের যেসব কারন

Uncategorized
শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের দীর্ঘ ১৭ বছর পর গেল ২৯ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছে। এ নির্বাচনে অকল্পনীয় ভাবে নৌকাকে ঠেকিয়ে ধানের শীর্ষের জয়ে সমগ্র উপজেলায় কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। কেন কি কারনে নৌকার তীরে এসে ডুবে গেল তার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের অন্তরে রক্তকরণ হচ্ছে। নিরব বিএনপি একটি ইউনিয়ন নির্বাচনে জয়ী হয়ে সমগ্র উপজেলায় এখন সরব অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫জন চেয়ারম্যান বিএনপি ও ৩জন আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান রয়েছেন। নির্বাচনের পর ভিন্নভাবে আওয়ামীলীগ বিএনপি উভয়ই জয় পরাজয়ের হিসাব কষছে। নৌকার পরাজয়ে জামাতপন্থিরা সব চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের দুই বড় নেতা ও হাইব্রিডদের কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটার সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মনুষের কথাবার্তা ও নির্বাচনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে নৌকার পরাজয় ও ধানের শীষের জয়ের নেপথ্যে কারনগুলো তোলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
দশঘর ইউনিয়ন নির্বাচনের ব্যাপারে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে যৌথ কোন বৈঠক হয়নি বা কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির জন্য কোন দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করা হয়নি। যে কারনে কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চায়নি। এটা ছিল প্রার্থীর সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। কিছু নেতাকর্মী নিজের প্রচারের জন্য দশঘর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এমন প্রচারনায় তারা খুব খুশি ছিলেন। জেলা, উপজেলার কেউ কেউ আবার পদ পদবি রক্ষায় বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকতেন। দলীয় নেতা কর্মীদের অভিযোগ, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী নির্বাচনী মিটিংএ প্রধান বক্তা থাকলেও নিজের এলাকায় ও নিজ কেন্দ্রে নৌকায় ভোট দিতে কাউকে বলেননি। বরং নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসু মিয়া লয়লুছকে নির্বাচনে তিনি দাঁড় করিয়ে ছিলেন। ঘোড়ার প্রর্তীকের প্রার্থী সমসু মিয়া লয়লুছ নির্বাচনী বিভিন্ন উঠান বৈঠকে শফিকুর রহমান চৌধুরীর সমর্থন তার পক্ষে রয়েছে বলেও বক্তব্য দিয়েছেন। এ ধরনের কথাবার্তা নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটারদের মুখে মুখে ও প্রচার হচ্ছিল।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া অতি কৌশলে তাঁর গ্রামের ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীর সাথে অদৃশ্যভাবে সমর্থন জানিয়ে ছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। জবেদুর রহমানের পরাজয়ে সৌদি প্রবাসি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নুর আছকির ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় সরাসরি শফিকুর রহমান চৌধুরী, এস এম নুনু মিয়া ও আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরীকে দায়ি করেছেন।
নির্বাচনের শুরু থেকে বিএনপির বেশকিছু কর্মী কৌশলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়ার সাথে থাকলেও নির্বাচনের দু’দিন আগে নিজ নিজ কেন্দ্রে ধানের পক্ষে অবস্থান নেয়। যা কেউ বুঝতে পারেনি। এভাবে সিলেট সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি কর্মীরা এমন কৌশল অবলম্বন করেছিল। এদিকে জামাত বিএনপির সমর্থকদের সকল ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা হলেও আওয়ামীলীগ পরিবারের অধিকাংশ মহিলা ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়নি। বিএনপির কর্মীরা অসুস্থ, বয়বৃদ্ধ ভোটারদের কাঁধে ও মাথায় বহন করে এনে ভোট দিতে দেখা যায়।
স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী জবেদুর রহমান একটি বলয়ের খপ্পরে পড়ে নিজের ইচ্ছায় নির্বাচনী কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি। জবেদুর রহমান বিভিন্ন সভায় বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষন বা মুগ্ধ করতে পারেনি। প্রার্থীর বাড়ি বিশ্বনাথের পশ্চিম সীমান্তে থাকায় নির্বাচনে তার পরাজয়ের একটি কারন বলে অনেকেই মনে করছেন। নির্বাচনের প্রথম দিকে নৌকা, ঘোড়া এবং আনারসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতার আভাস পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি কর্মীরা অতি গোপনে ঐক্য হয়ে পিছনে থাকা প্রার্থী এমাদ উদ্দিন খানকে সামনে নিয়ে আসে। বিএনপির জেলা এবং ঢাকার নেতারা কর্মীদের পরিশ্রম ও নির্বাচনী কৌশলে খুবই খুশি। এ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এমাদ উদ্দিন পেয়েছেন ৩ হাজার ১৬৬টি ভোট, নৌকা প্রতীকের জবেদুর রহমান পেয়েছেন ২ হাজার ৭৮১টি ভোট। মাত্র ৩৮৫ ভোটের ব্যবধানে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী জবেদুর রহমানকে পরাজিত হন। ‘ঘোড়া’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) সামছু মিয়া লয়লুছ পেয়েছেন ২ হাজার ৭৪১ ভোট, ‘আনারস’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপির বিদ্রোহী) আবুল হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ৫০৬ ভোট ও ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে জাতীয় পার্টির মনোনীত আবদুল মন্নান পেয়েছেন ১২২ ভোট। ইউনিয়নের ১৪ হাজার ১১৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১০ হাজার ৫২৫ জন ভোটার। এর মধ্যে বাতিল ভোটের সংখ্যা ২০৯। শতকরা ভোট প্রয়োগের হার ৭৪.৫৫%।

দশঘন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের কারন জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ জানান, শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকার প্রার্থী ছিলেন, জবেদুর রহমান। কিন্তু কৌশলে বিদ্রোহী প্রার্থী সমসু মিয়া লয়লুচ (ঘোড়া প্রতীককে) দাঁড় করানোর কারনে নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের মূল কারন। আমরা জেলা আওয়ামীলীগের সাথে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগকে বিষয়টি অবহিত করব।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জবেদুর রহমান, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও তার অনুসারিদের দায়ি করে বলেন, শফিকুর রহমানের নিজ কেন্দ্রে নৌকার বিপুল ভোট থাকা সত্তেয় তিনি নৌকায় ভোট না দেয়ার জন্য ভোটারদের বাঁধা নিষেধ করেন এবং ইউনিয়ন ওয়াডের্র তার বলয়ের নেতাকর্মীরা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নেীকাকে পরাজিত করেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *