স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের কুখ্যাত ইয়াবা চোরাচালানি মাদক সম্রাট তবারক আলী (উরফে ইয়াবা সুমন) সিন্ডিকেটের খালেদ আহমদ (২৩) নামের আরেক যুবক ৯০লাখ টাকা মূল্যের ইয়াবাসহ সিলেটের ডিবি পুলিশের জালে আটকা পড়েছে। গত বুধবার (২২ জুলাই) রাত ১১টার দিকে বিশ^নাথ উপজেলার অলংকারি ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। খালেদকে আটকের সময় তার ঘরের একটি স্টিলের আলমিরার ড্রয়ারে কাপড়ে মোড়ানো প্যাকেটে থাকা ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। খালেদের পিতার নাম মৃত ফজর আলী। সে তবারকের সম্পর্কে ভাগ্না হয় এবং বিশ্বনাথে আল-হেরা শপিং সিটির ৩য় তলায় তবারকের দুইটি কাপড়ের দোকান পরিচালনা করে আসছিল খালেদ। উদ্ধারকৃত ৩০ হাজার ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৯০লাখ টাকা হবে বলে গোয়েন্ধা পুলিশ জানিয়েছেন। অভিযানের পূরো বিষয়ের নেতৃত্বে ছিলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম।
আজ (২৩ জুলাই) বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের পুলিশ সুপার জানান, গোপন সংবাদে তারা জানতে পারেন যে, বিশ্বনাথ উপজেলায় ইয়াবার একটি বড় চালান আনা হয়েছে এবং এই চালানের সাথে খালেদের ভাই মাদক ব্যবসায়ী দুলু জড়িত। কিন্তু দুলু ২২ জুলাই অন্য মামলায় জেল হাজতে যাওয়ার কারনে এই মজুদকৃত ইয়াবা খালেদ তার নিজ হেফাজতে নিয়ে বাড়িতে ষ্টীলের আলমিরাতে রেখে দেয়। এমন তথ্য নিশ্চিত হয়ে গোয়েন্ধা পুলিশ খালেদের ঘরে অভিযান চালায়
উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত আলকাছ আলীর পুত্র তবারক গ্রামের একজন দিন মজুর ছিল। এক পর্যায়ে সে সেএনজি সহ বিভিন্ন চুরি ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। তার স্ত্রী সাবিনাকে বিবাহের পর স্ত্রী ও তার শাশুর বাড়ির আত্নীয় স্বজনের পথ অনুস্বরণ করে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং তারিখে হবিগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তবারক সিন্ডিকেটের ‘নাহিদা ও শাহিনা’ নামের দুজন মহিলা ১কোটি ৮১লাখ টাকা মূল্যের ৬১হাজার পিছ ইয়াবাসহ আটক হয়। আটককৃত নাহিদা বেগমের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার লক্ষীপুর গাবতলী বাজারের আসালত পেয়াদা ও সোহেদা বেগম দম্পতির কন্যা (এ/পি নায়ারণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পাগলা) এবং শাহিনা খাতুন হচ্ছে বাগেরঘাট জেলার মড়েলগঞ্জ থানার ভাইজোরা গ্রামের মৃত আবদুল কাদের ও হাজেরা বানু দম্পতির কন্যা (এ/পি খুলনার সোনাডাঙ্গ থানার বসুপাড়া মেইন রোড়)। ঐদিন তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তবারকের স্ত্রী সাবিনা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনার পর তবারক সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য আত্নগোপনে চলে যায়। এক পর্যায়ে (১৩মার্চ ২০২০ইং) শুক্রবার রাতে ১হাজার ৮০পিস ইয়াবাসহ তবারক ও তার ৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করে সিলেটের গোয়েন্ধা পুলিশ। আটককৃতরা হলো, বিশ্বনাথে রামপাশা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে ওয়াহিদ মিয়া (২২), বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার সাহেবগঞ্জের আবুল হোসেনের ছেলে সাগর হাওলাদার (২০) ও একই থানার বড়পাশার ফিরোজ জমাদ্দারের ছেলে ইমন জমাদ্দার (১৮)। জব্দকৃত ইয়াবার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩লাখ ২৪হাজার টাকা ছিল। গত রমজান মাসে তবারকের স্ত্রী সাবিনা জামিনে মুক্তি পেয়ে পূণরায় তাদের সিন্ডিকেটদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে।
গত (২৯জুন) সোমবার ভোর রাতে তবারক সিন্ডিকেটের আরো ৪ জনকে ৮১লাখ টাকা মূল্যের ২৭হাজার পিচ ইয়াবা, ৭টি মোবাইল সেট ও একটি নোহা গাড়িসহ ৪জন আটক করে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, তবারকের গাড়ীর ড্রাইভার সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত জবেদ আলীর পুত্র আজির উদ্দিন (২৭) ও তার ঘনিষ্ট সহকারী বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের মুফতিরগাও গ্রামের সাইকেল মিকার শানুর আলীর পুত্র মিনার (২১), নোহা গাড়ির ড্রাইভার সিলেটের মোগলা বাজার থানার মাইজভাগ গ্রামের নুর মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়া (৩৪) ও অপর সহযোগী শেখ পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে নুমান আহমদ বকুল (৩৪)।
তবারক জেল হাজতে আটকা থাকলেও ইয়াবা ব্যবসা যেমন চলছে, তেমনি ইয়াবার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ির সংখ্যাও বাড়ছে। বিশ্বনাথ থানা সদরের দক্ষিণে যে স্থানে তবারক জমি কিনে বিলাস বহুল বাসা তৈরী করেছে সেই এলাকায় ১০/১২ জনের উঠতি বয়সি তরুণদের নতুন একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা এখও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তবারকের বাসার জমি কেনায় সহায়তাকারি ব্যক্তি এই এলাকার ইয়াবা ক্রয় বিক্রয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কয়েকমাস পূর্বে এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে এই ইয়াবা কারবারিরা এলাকা থেকে ছটকে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে তারা পূরোদমে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বনাথ একটি ঐতিহ্যবাহি ও সমৃদ্ধশালি উপজেলা। দীর্ঘ ইতিহাসে এধরনের মাদক চোরাচালানের কোন নজির নেই। তবারকের ইয়াবা উত্থানের পর বিশ্বনাথের মান সম্মান ভুলন্টিত হয়েছে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক মাদক চোরাচালান ও সেবন হচ্ছে। তবারক সিন্ডিকেটের নিকট থেকে যারা লাখ লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে রক্ষা ও সহায়তা করছেন তাদেরকেও তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে। মাদকের মত মামলায় জামিন হওয়ায় বিশ্বনাথে মাদক পাচার ব্যাপকহারে বেড়ে যাচ্ছে। সচেতন মহলের অভিমত, ইয়াবা সিন্ডিকেটের গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ না হলে ইয়াবা রোধ মোটেই সম্ভব নয়।