উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) এর জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার শবেকদর

Uncategorized
শেয়ার করুন

শবেকদর এক মহিমান্বিত রাত বা রজণী। শবেকদর একমাত্র উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) এর জন্য মহান আল্লাহর দান। অন্যান্য নবী ও রাসুলগণের উপর রমজান ফরজ করা হলেও অন্য কোন নবীর উম্মতকে শবেকদর দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতের জন্য সৌভাগ্যের রজণী শবেকদর দান করেছেন মহান আল্লাহ। শবেকদর বছরের নির্দিষ্ট একটি রাত যা রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে বেজোড় রাতে হতে পারে। শবেকদরের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে একটি হাদিস বিষেশভাবে প্রণীধান যোগ্য। হযরত আয়শা (রা.) বর্ননা করেছেন, ‘রাসুলেপাক (সা.) শবেকদরকে পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশরাতের যে কোন বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ রাতটি হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে ও শ্রেষ্ঠ। যে কারনে রোজাদাররা শবেকদরের রাতকে তালাশ করেন বেশি। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের রমজান মাসের সাতাশ রমজান মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঐতিহাসিক হেরা গুহায় ধ্যানে মগ্ন থাকাবস্হায় প্রথম কোরআন নাযিল হয়। তারপর দীর্ঘ তেইশ বছরে সম্পূর্ণ কোরআন নাযিল শেষ হয়। মহানবী (সা.) কে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি কোরআন নাযিল করেছি খন্ড খন্ড ভাবে যাতে আপনি তা মানুষের নিকট পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায় ক্রমে (সূরা বনী ইসরাইল আয়াত ১০৬)। ৩০পারায় বিন্যাসিত কোরআন মজিদে মোট সূরা সংখ্যা ১১৪, শব্দের সংখ্যা ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৭১। অধিকাংশের মতে আয়াত সংখ্যা ৬ হাজার ৬ শত ৬৬। মহানবী (সা.) কোরআন তেলাওয়াত কে সর্বোত্তম নফল ইবাদত বলেছেন। কেউ কোরআনের একটি হরফ পাঠ করলে অন্য মাসে নেকি হয় দশটি (তিরমিযি শরীফ)। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত করলে অন্য মাসের চেয়ে ৭০গুণের ও বেশি নেকি হয়। এ জন্য রমজান মাসে পৃথিবীতে কোরআন পাঠ হয় বেশি। এবছর করোনা ভাইরাস নামক ব্যাধি থেকে মুক্তির আশায় বিশ্বে লাখ লাখ মুসলমান অসংখ্য কোরআনের খতম পূরণ করেছেন। বাংলাদেশে প্রতিটি মুসলিম পরিবারে জনপ্রতি একাধিক কোরআন খতম পূরণ করার কথা ও জানা গেছে। বিদায় হজ্জের ভাষনে বিশ্বের সেরা মহামানব আখেরী জামানার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য দুটি আমানত রেখে যাচ্ছি, একটি আল্লাহর কিতাব আর অপরটি তাঁর রাসূলের সুন্নাহ, তোমরা যদি তা দূঢভাবে অবলম্বন করো তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

পৃথিবীতে কোন ধর্মগ্রন্থ কেউ পুরা মুখস্হ করতে সক্ষম হয়নি হবে ও না। কিন্তু একমাত্র কোরআন ই মুহাম্মদী উম্মত মুখস্থ করছেন। যারা না দেখে কোরআন পড়তে পারেন তাদের কোরআনে হাফেজ বলা হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘হাফেজরা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বন্ধু। হাদিসে আছে, সবচেয়ে বেশি ধনী ব্যক্তি সে, যে কোরআন মুখস্হ করে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। কোরআনে হাফেজদের পিতা-মাতার কবরের আজাব হালকা করে দেয়া হবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সাথে আখিরাতের মুক্তির আশায় শবেকদরের রাতটি ইবাদতে কাটাবে, আল্লাহ তাঁর পূর্ববর্তী সব গুণাহ মাফ করে দেবেন। তাই নবী করিম (সা.) এরাতে তাঁর পরিবারের লোকজনকে জাগিয়ে তুলতেন আর কবর জিয়ারত করতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) তাঁর অনুসরণ করতেন। হযরত আয়শা (রা.) বর্ননা করেন, ‘একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যখন লাইলাতুল কদর পাবো তখন কী দোয়া করব? নবী করিম (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘আল্লাহ হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফুআন্নী’ অথাৎ হে আল্লাহ! তুমি মহিয়ান, ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাটা তুমি ভালোবাস, তাই তুমি আমাকে ক্ষমা করো।

রমজান মাসকে রহমত, মাগফেরাতও  নাযাতের মাস ঘোষনা করে নবী করিম (সা.) বলেছেন, প্রথম ভাগ আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগ গোণাহের মাগফেরাত, শেষ ভাগ দোযখের আগুণ থেকে মুক্তি লাভ করা (মিশকাত)। শেষ দশদিনে ইতিকাফ, শবেকদর ও জমাতুলবিদা রয়েছে। এখানে একটা কথা বলা আবশ্যক যে, রমজান মাসের শেষ শুক্রবার নবী হযরত দাউদ (আঃ) এর পুত্র হযরত সোলায়মান (আঃ) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্টা করেন এবং সেখানে গড়ে তুলেন মসজিদুল আকসা। জেরুজালেম নগরী তিন ধর্মের মানুষের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, মুসলমান, ইহুদী ও খ্রিষ্টান। কাবাশরীফ বা বায়তুল্লাহ ও মদিনার মসজিদে নববীর পর মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্হান হচ্ছে মসজিদুল আকসা। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব মুসলিম আলকুদস দিবস পালন করেন। এ পবিত্র স্হানটি ইহুদিবাদী চক্র দখল করে আছে। ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের কবল থেকে জেরুজালেম নগর মুক্ত করে ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব মুসলিম রমজানের শেষ শুক্রবার শপথ গ্রহন করেন এবং ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা ও নিন্দা জানান। পরিশেষে বলি ইসলামে লোক দেখানো ইবাদতের কোন মূল্য নেই। বান্দা তাঁর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে খুশি আর রাজি করতে অন্তর দিয়ে রমজান মাসে ইবাদত করলে মুক্তি লাভের আশা করা যায়। রমজান মাসের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, ওজনে কম দেয়া, এবং মুনাফার আশায় দ্রব্য মজুদ করে রোজাদারদের অধিক মূল্য আদায়ের মাধ্যমে হয়রানি করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। আমরা যে শবেকদরের রাতে পাপমুক্ত হতে পারি সেই নিয়তে ইবাদত করব- আমিন।

এ এইচ এম ফিরোজ আলী

লেখত কলামিষ্ট ও সমাজ বিশ্লেষক


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *