বিশ্বনাথে ভুমি খেকো শামিমের ওকালতি সনদ বাতিলের দাবিতে তেঘরী গ্রামবাসীর সংবাদ সম্মেলন

বিশ্বনাথ সিলেট
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথে ‘সরকারি ভূ-সম্পত্তি রক্ষা, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রামবাসীকে হয়রাণী বন্ধ ও ভূমি খেকো শামীম আহমদের ওকালতি সনদ বাতিলসহ সন্ত্রাসীদে গ্রেফতার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামবাসী।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্বনাথ বাজারস্থ একটি কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে তেঘরী গ্রামের আঙ্গুর মিয়া বলেন, তেঘরী মৌজার জেএল-৪৪, এসএ দাগ ৯, ১১০, ১৫২, ১৭৭দাগসহ অন্যান্য দাগে প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি সিলেট শহরের খাজাঞ্চি বাড়ির জমিদার কালিপ্রসাদ চক্রবর্তিসহ ১১জন জমিদার রেকডীয় মালিক ছিলেন। গ্রামবাসীরা জমিদারগণের অনুমতি নিয়ে ৯ ও ১১০নং দাগের ভুমিসহ অন্যান্য ভুমিতে গোচারণ ও খেলার মাঠ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন।

মাঠ জরিপের সময় দূর্নীতিবাজ সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৯ ও ১১০নং দাগের ভুমি জমিদার গণের নামে রেকর্ডভুক্ত হলেও ঘুষের মাধ্যমে মন্তব্য কলামে আয়াত উল্লার নাম লিখিয়ে নেয়। এ সুযোগে ২০০৩সালে তেঘরী গ্রামের আপ্তাব মিয়া জাল দুটি দলিল সৃষ্টি করে সরকারকে প্রথম বিবাদী করে স্বত্ব ১৫০/২০০৩ইং মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বর্ণিত ভুমি দলিলের মাধ্যমে জমিদারগণের নিকট থেকে খরিদ করেছে মর্মে উল্লেখ করেন এবং এ মামলায় চান মিয়া ও তার ৩ভাই পক্ষভুক্ত হন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে আপ্তাব মিয়া মহাম্যন্য হাইকোটে ৩১৫/২০০৫ইং. আপিল দায়ের করলে, হাইকোট আপ্তাব মিয়া ও চান মিয়া গংদের দাবি নামঞ্জুর করে আপিলটি খারিজ করে দেন।

হাইকোটে পরাজিত হয়ে আপ্তাব মিয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর নিকট নামজারি আপিল ৭৪/১৯৯১ইং দায়ের করেন। আপ্তাব মিয়া, চান মিয়া ও তেরা মিয়া গংদের বিরুদ্ধে জাল দলিল করায় আপ্তাব মিয়া জিআর ৬/১৯৯২ইং জালিয়াতি মামলা দায়ের করলে তেরা মিয়া দীর্ঘ কয়েকমাস হাজতবাস করেন এবং চান মিয়া দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। আপ্তাব মিয়া বিএস রেকর্ড বাতিল করে তার নামে নামজারির জন্য ৭৪/৯১ইং মামলা দায়ের করলে শুনানী শেষে নামজারি মামলাটিও খারিজ হয়ে যায়। এ মামলায় পরাজিত হওয়ার পর অতিরিক্ত কমিশনার রাজস্ব কার্যালয়ে চান মিয়া ৫৮/২০১১ইং, জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে মামলা দায়ের করলে সেই নামজারি আপিলটিও খারিজ হয়ে যায়। পরে চান মিয়া বিশ্বনাথ সহকারি জজ আদালতে স্বত্ব ঘোষনার দাবিতে স্বত্ব ৭/২০১২ইং মামলাটি দায়ের করলে আদালত সেই মামলাটিও খারিজ করে দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে চান মিয়া ৩০৪/২০১২ইং আপিল করলে এই আপিলটিও খারিজ করেন আদালত। ২০১৯সালের ৪অক্টোবর এডিসি রাজম্ব খতিয়ান নং-১০১, ১০৭, ২৯৪ এসএ দাগ ১৫২, ১৭৭, ৯ ও ১১০, বিএস দাগ ১৮১, ২০৬, ১৩, ১৪১নম্বর দাগে বিএস জরিপে নাম অসুদ্ধ থাকায় সংশোধনের জন্য সিলেটের ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইব্যুনালে ১২৪৯/২০১৬ইং মামলাটি দায়ের করেন এবং মামলাটি বিচারাধীন থাকাবস্থায় ভুমি খেকো এডভোকেট শামিম আহমদ ভাড়াটিয়া অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী নিয়ে বর্ণিত ভুমি একাধিকবার দখলের চেষ্টা করলে আমরা গ্রামবাসিরা বাধা দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে আমরা গ্রামবাসীকে হয়রানী ও নিঃশেষ করছে।
সরকারি এ খাস ভুমি রক্ষায় বিশ্বনাথ ইউএনও, এসিল্যান্ড, স্থানীয় প্রয়াগমহল তফসীল অফিস নিরব ভমিকা পালন করায় ভুমি খেকো সন্ত্রসী শামিমের দাপট দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দৈনকি ইনকিলাব পত্রিকায় সরাকারি খাম ভুমি দখল সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় শামিম, পত্রিকার সম্পাদক ও এএমএম বাহাউদ্দীন ও বিশ্বনাথ প্রতিনিধি আব্দুস সালাম ও কয়েকজন গ্রামবাসীকে আসমি করে ৫০কোটি টাকার ক্ষকিপুরণের মামলা দায়ের করে। আমরা এ মামলাসহ সকল মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অন্যতায় আর কোন মিথ্যা মামলা হয়রানী ও গ্রামবাসীকে খুন খারাবির মত ঘটনা ঘটালে স্থানীয় প্রশাসন দায়ি থাকবে।
বক্তব্যে আরো বলা হয়,

প্রতারক শামিম একজন আইজীবি হওয়ায় ক্ষমতার ধাপট দেখিয়ে তার চাচাতো ভাই সাজ্জাদকে দিয়ে মৃত চান মিয়ার লাশ গ্রামবাসি দাফনে বাধা দেয়ার কথা উল্লেখ করে দন্ড বিধি আইনের ১৪৩/২৯৫ক/৩৪১/৫০৬/১১৪ধারামতে সাজানো এ মামলায় গ্রামের ১৩জনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা নং-১২, তাং ২৯/১০/২০২৪ইং দায়ের করলে গ্রামের নুরুল হক, আঙ্গুর মিয়া, বিলাল আহমদ, সমুজ আলী, সমসু মিয়া, মঞ্জুর হক এই ৬জন হাজতবাস করেন। এডভোকেট শামিম তার চাচাতো ভাই সাজ্জাদকে দিয়ে বিশ্বনাথ সিআর ৩০/২০২৪ইং চাদাবাজির মামলা দায়ের করে এবং মামলাটি বিচারাধীন। সাজ্জাদ সিআর ৪৬১/২০২২ইং, ৩২৬/৩২৫/৩২৪/৩২৩/৪২৭/৪৪৭/৫০৬ (২) ১১৪/৩০৭ ধারায় মামলা দায়ের করলে এ মামলায় আঙ্গুর ও নুরুল হক হাজতবাস করেন এবং মামলাটি এখনও বিচারাধীন। চান মিয়া নন জিআর ৫০/১৯৯৮ইং দায়ের করলে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। শামিম তার চাচি চম্পা বেগমকে দিয়ে নন জিআর ৬৫/২০০৪ইং দায়ের করলে আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সাজ্জাদ বাদি হয়ে বিশ্বনাথ থানার মামলা নং-১৩/১৯৯৭ইং দায়ের করা হলে আদালত আসামিদের অব্যাহতি দেন। শামিম নিজে গ্রাবাসির বিরুদ্ধে ডিআইজি বরাবরে অভিযোগ দিলে মিথ্যা প্রমানিত হবে বুঝতে পেরে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেয়। শামিম কতোওয়ালী থানার জিডি নং-১৩৯৭/১৯৯৪ইং মূলে দায়েরী মামলায় আদালত আসামিদের অব্যাহতি দেন। সাজ্জাদের ভাই জিহান বিবিধ ১০৪/২৪ইং দায়ের করলে আদালত সেটিও খারিজ করে দেন। চান মিয়া জেলে থাকাবস্থায় ননজিআর ৫০/১৯৯৮ইং মামলাটি গ্রামবাসির উপর দায়ের করলে আদালত সেটিও খারিজ করে দেন। গ্রামের মহিলা ছাড়া সকল পুরুষই কোন না কোনভাবে এক একটি মামলার আসামি হয়ে আদালতে দিনের পর দিন হাজিরা দিচ্ছেন।

অতিষ্ট হয়ে গ্রামবাসী জিআইজি বরাবরে ভুমি খেকো মামলাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান পিপিএম (সেবা) গত ২৫/০৫/২০২৫ইং তারিখে গ্রামবাসির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলেন, সরকারি খাস ভুমি দখল করতে না পেরে গ্রামের কৃষক ও নিরিহ শ্রেণীর মানুষকে এডভোকেট শামিম আহমদ হয়রানী করছে মর্মে তদন্তে প্রতিয়মান হয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে আয়াত উল্লার মৃত্যুর পর তার পুত্র চান মিয়া এবং চান মিয়ার মৃত্যুর পর তার পুত্র সাজ্জাদ এবং তেরা মিয়ার পুত্র এডভোকেট শামিম একের পর এক সাজানো মামলা দিয়ে গ্রামবাসিকে পথের ভিখারী করতে যাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যহার উকিল শামিমের সনদ বাতিল ও সাজাদ্দুর রহমানসহ অস্ত্রবাজ মামলাবাজ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করছি।

মামলাবাজ এডভোকেট শামিম আহমদ ও তার ভাই সাজ্জাদুর রহমানকে এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা গ্রামবাসি অবাঞ্চিত ঘোষনা করলাম। সংবাদ সম্মেলনে তেঘরী গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *