আব্দুস সালাম, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দোহাল গ্রামের আয়ফুল বেগম হত্যাকান্ডের আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আয়ফুল বেগমের বড় ভাই মখলিছ আলীর ঘর থেকে ১লাখ টাকা পুলিশ উদ্ধার করলেও এজাহারে তা উল্লেখ নেই। আয়ফুল বেগমের দুই ভাই মখলিছ আলী ও ইলিয়াস আলীকে জড়িয়ে ঘাতক নুর উদ্দিনের বক্তব্য নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। আয়ফুল বেগমের মেয়ে নাছিমা বেগম ঘাতক নুর উদ্দিনকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা দিলেও সন্দেহজনক আসামি হিসেবে আয়ফুল বেগমের দুই ভাইকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। অথচ বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিল, একমাত্র নুর উদ্দিনই ফুফু শাশুড়িকে হত্যা করে। দুই ভাইকে জিজ্ঞাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। গত শুক্রবার নুর উদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারা মতে জবানবন্দী করেছে। জবানবন্দী শেষে আদালত ৩জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
নুর উদ্দিন আয়ফুল বেগমকে হত্যা করে যে ১লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল, সেই টাকা এখনো উদ্ধার হয়নি। আয়ফুল বেগমের ভাই মখলিছ আলীর ঘরে থাকা ১লাখ ৩০হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা পুলিশ নিয়ে আসে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আয়ফুল বেগম বেসরকারি সংস্থা থেকে যে ১লাখ টাকা ঋন এনে ছিলেন সেই টাকা নুর উদ্দিনকে দিয়ে গণনা না করায় ক্ষীপ্ত হয় নুর উদ্দিন। তিনি (আয়ফুল বেগম) পাশের বাড়ির মানিক নামের একজনকে দিয়ে এই ১লাখ টাকা গণনা করিয়ে ছিলেন। সেই মানিকই পুলিশের কাছে স্বাক্ষ্য দিয়েছে যে, মখলিছের ঘর থেকে উদ্ধারকৃত টাকার নোটের সাথে আয়ফুল বেগমের টাকার নোটের কোন মিল নেই।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মখলিছ আলীর টাকা প্রসঙ্গে জানান, একটি সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে পালের চক গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বি আব্দুল গফুরের নিকট থকে বিদেশের ১লাখ টাকা প্রাপ্ত হন মখলিছ আলী। এই প্রাপ্ত ১লাখ টাকা সহ আরো ৩২ হাজার টাকা মখলিছের ঘরে জমা ছিল। এই টাকা মখলিছ আলীর মেয়ে শিউলি বেগম ঘরে একটি আলমিরায় রেখেছিল। এই টাকা থেকে পুলিশ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা এজাহার দাখিলের পূর্বেই নিয়ে আসে। কিন্তু এজাহারে টাকার কোন উল্লেখ নেই।
গত বৃহস্পতিবার সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর সার্কেল সাইফুল ইসলাম ঘাতক নুর উদ্দিনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে কিভাবে আয়ফুল বেগমকে হত্যা শেষে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয় তা সরেজমিনে দেখিয়েছে। মখলিছ আলী ও ইলিয়াস আলীর সহযোগীতায় নুর উদ্দিনকে আটক করার কারনেই ক্ষীপ্ত হয়ে চালাক চতুর নুর উদ্দিন তাদেরকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়রা আরো জানান, নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে চুরি ছিনতাই সহ অসংখ্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এসবে বাঁধা দিয়ে আসছিলেন মখলিছ আলী। নুর উদ্দিনকে সঠিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য যাচাই বাচাই না করে ১৬৪ ধারা মতে তড়িগড়ি করে জবান্দী গ্রহন জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আয়ফুল বেগমের ভাই মখবুল আলী ঘটনার পর থেকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, আতœীয় স্বজনের সুপারিশে নুর উদ্দিনের নিকট মেয়ে বিবাহ দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছি। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ঠান্ডা মাথায় নুর উদ্দিন কারো ইঙ্গিতে বা পরামশ্যে আমার নিরীহ দুই ভাইকে জড়ানোর চেস্টা করছে। আমার চোখে এখন অন্ধকার দেখছি। আমি আমার নিরীহ অসুস্থ দুই ভাইয়ের মুক্তি ও ঘাতক নুর উদ্দিনের শাস্তি দাবি করছি।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জামাল আহমদ জানান, আয়ফুল বেগমের ঋনের টাকা গণনা করেছিল পাশের বাড়ির মানিক। কিন্তু মখলিছের ঘর থেকে যে টাকা পুলিশ উদ্ধার করেছে সেই টাকার সাথে আয়ফুল বেগমের টাকার নোটের কোন মিল নেই। আমি একটি কাগজে স্বাক্ষর করেছি।