ডাক ডেক্স : বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পালের চক গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসি জমির আলী সহ নিরিহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ভূমি জালিয়াতির সাজানো মামলার ৫জন আসামি জামিনে মুক্তি লাভ করেছেন। (৬ আগষ্ট) মঙ্গলবার সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩নং আমলী আদালতের বিচারক মাহবুবুর রহমান ভুইয়ার আদালতে হাজির হয়ে আসামিগণ জামিনের আবেদন করলে মাননীয় আদালত শুনানি শেষে আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবি গোলাম রশিদ। জামিন প্রাপ্তরা হচ্ছেন হাজী ইরশাদ আলীর পুত্র জমির আলী, মৃত সমসের আলীর পুত্র বারিক মিয়া, শফিক মিয়া, আলমগীর এবং মৃত আবন আলীর পুত্র দিলোয়ার হোসেন। মৃত ইলিয়াস আলীর পুত্র নেপুর আলী যুক্তরাজ্যে থাকাবস্থায় তাকে আসামি করা হয় এবং তিনি প্রবাসে থাকায় আদালতে হাজিরা দিতে পারেননি।
মামলাটি দায়ের করেছেন জমির আলীর চাচাতো বোন জগন্নাথপুর উপজেলার পাড়ার গাঁও গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ফুলতেরা বেগম, (বিশ্বনাথ থানার মামলা নং-০২, তারিখ ০২/০৮/২০১৯ইং), ধারা ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১০৯/ দ: বি:। মামলার স্বাক্ষী হচ্ছেন ফুলতেরা বেগমের ভাই ছইল মিয়া, মনসুর আলী, পালের চক গ্রামের মৃত ছাদেক আলী পুত্র হাবিবুর রহমান, আব্দুর রহিমের পুত্র লয়লুছ মিয়া। বাদিনী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ১নং স্বাক্ষী ছইল মিয়া ও ২নং স্বাক্ষী মনসুর আলীকে ভবিষ্যতে চাপে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র ভাবে ভূয়া দলিল সৃজন করে ছইল মিয়া ও মনসুরের ছবি স্বাক্ষর জাল করে নামজারি মোকদ্দমা নং ৮৪৩/১১-১২ এর মাধ্যমে স্বাক্ষীগণের নামে তাদের অজান্তে আসামিগণ ভূমি নামজারি করেন। ইতি পূর্বে জমির আলী ও বাদি হয়ে গত ১লা জুলাই আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে, (মামলা নং-৯, তারিখ ০৬/০৭/২০১৯ইং)।
জমির আলীর অভিযোগ উপজেলার বুবরাজান মৌজার জেএল নং-৬৩, খতিয়ান নং-১৯৭ ও ৯৯৭ দাগে .৩৩ একর ভূমি, ২০৩ নং খতিয়ানে বিএস ১০০০ নং-দাগের ভূমি বিবাদী ছইল মিয়া ও মনসুর আলী ২৫১০/৯৫ইং নম্বর যুক্ত একটি জাল দলিল দাখিল করে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ভুমি নামজারি করিয়ে নেন। উক্ত মামলার বাদি জমির আলী ২৫১০/ ৯৫ ইং দলিলটির জাবেদা নকল সংগ্রহ করে দেখতে পান এ নম্বর যুক্ত দলিলটি অলংকারি ইউনিয়নের টেংরা প্রকাশিত চানপুর গ্রামের মৃত হামিদ উল্লার পুত্র মনতাজ আলী ও সুনাফর আলীর নামে রয়েছে।
মূলত জমির আলীর মামলাটিকে কাউন্টার দেয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে সাজানো ও কাল্পনিক তথ্য দিয়ে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে আসামিদের অভিযোগ। জমির আলী জানান, ছইল মিয়া আমার চাচাতো ভাই, সে সাজানো দলিল ও কাগজ পত্র দিয়ে আমার বাপ চাচার নামীয় বাড়ি জমি নামজারি করিয়ে নেয়। এ ঘটনায় আমি বাদি হয়ে মামলা দায়ের করার কারনে তার বোন ফুলতেরাকে বাদি করে এ সাজানো মামলা দায়ের করে।
সিনিয়র একজন আইনজীবি জানান, বর্তমানে ভূমি নামজারি করাতে হলে আবেদনকারিগণ নিজের ছবি ও টিপসই বা স্বাক্ষর দিয়ে আবেদন করতে হয়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে তফসিলদার সরেজমিনে আবেদন কারির আবেদন তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার পর সার্ভেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে নামজারির আদেশ দেয়া হয়। ছইল মিয়া ও মনসুর আলী যে কাগজ পত্র দিয়ে ভুমি অফিসে নামজারি করিয়েছেন, তার জাবেদা নকল জমির আলী হাতে রয়েছে। তিনি এসব কাগজ পত্র বিশ্বনাথের ডাক ২৪ ডটকমকে দেখান। মামলায় ফুলতেরা বেগম বুঝাতে চেয়েছেন যে, জমির আলী ও সঙ্গীয় আসামিগণ নিজের জমি (জমির আলীর) ফুলতেরার ভাই ছইল মিয়া ও মনসুর আলীর নামে জাল কাগজ পত্র দিয়ে নামজারি করে দিয়েছেন। এবিষয়ে জমির আলী জানান, এমন পাগল এদেশে নেই যে, নিজের বাড়ি জমি অন্যে নামে নামজারি করিয়ে দেবে। আমরা প্রশাসনের নিকট নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।
এবিষয়ে ফুলতেরা বেগমের দায়েরী মামলার আসামি বারিক মিয়া তার নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ছইল মিয়া ষড়যন্ত্র করে তার বোন ফুলতেরা বেগমকে দিয়ে জমির আলী গংদের জমি আত্নসাতের বিষয়টি আড়াল করতে এই সাজানো মামলা দায়ের করেছেন।
এব্যাপারে বারিক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি একজন বাউল শিল্পী, বাড়ি ঘরে সবসময় থাকিনা, জাগা জমিনের কাগজ পত্র বুঝিনা, আমি ও আমার নিরীহ দুই ভাই এবং আমার চাচাকে ছইল মিয়া তার বোনকে দিয়ে আসামি করে কি লাভমান হবে তা বুঝতে পারতেছিনা। সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে ফুলতেরা ও তার ভাই ছইল মিয়ার জালিয়াতির বিষয়টি প্রশাসন তদন্ত করে দেখবেন এটাই আমার দাবি।