ডাক ডেস্ক : ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট ক্যান্সারে মারা যান মৌলভীবাজারের জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের রুমুজ আলীর ছেলে লোকমান হোসেন। তবে পুলিশের দাবি, গত ৫ অক্টোবর জামায়াতের একটি মিছিলে অংশ নিয়ে নাশকতা চালিয়েছেন লোকমান। পুলিশ বাদী হয়ে জুড়ী থানায় করা একটি নাশকতা মামলায় আসামি করা হয়েছে লোকমানকে, যিনি ছয় বছর আগেই মারা গেছেন।
জানা যায়, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। মিছিলের পরদিন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ২৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন জুড়ী থানার এসআই খসরুল আলম বাদল। এ মামলায় অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নাশকতার এ মামলায় আসামিদের মধ্যে মৃত ব্যক্তি ছাড়াও কয়েকজন প্রবাসীর নামও রয়েছে। পুলিশের মামলার এজাহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
৬ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তি ও প্রবাসীরা কি করে পুলিশের উপর হামলা করলেন এমন প্রশ্নে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার জামায়াতের মিছিল থেকে দুজনকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এজাহারে আসামিদের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে এজাহারভূক্ত আসামেদের একজন মারা গেছেন এবং কয়েকজন বিদেশে আছেন।
ওসি বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে মৃত লোকমান হোসেনকে।
এ মামলায় ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে জায়েদ আহমদকে। তিনি সাত বছর ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। জায়েদ আহমদ উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত ফয়জুল্লাহর ছেলে।
উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের রজব উদ্দিনের ছেলে বুরহান উদ্দিন দুই বছর থেকে আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। মামলায় বুরহানকে ২৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ফুলতলা বাজারের ইব্রাহিম আলীর ছেলে নাঈম উদ্দিন আট বছর আগে কাতার যান। সেখান থেকে তিনি এখন পর্তুগালে অবস্থান করছেন। তাকেও পুলিশের করা ওই মামলায় ২৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মামলার ১১ নম্বর আসামি মৃত লোকমান হোসেনের বড় ভাই মাহতাব আহমদ বলেন, ‘আমার ভাই লোকমান ৬ বছর দুই মাস আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমার ভাই কবর থেকে উঠে কীভাবে মিছিলে অংশ নিল?
তিনি বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির নামে যদি মামলা হয়, তাহলে আমরা যারা জীবিত আছি- তাদের উপর কি ধরনের অত্যাচার চলে একবার আপনারা ভেবে দেখুন।’
লোকমান হোসেনের ভাতিজা কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ কি চাচাকে কবর থেকে তুলে এনে বিচার করবে?
প্রবাসী জায়েদ আহমদের বড় ভাই আব্দুস শুকুর বলেন, আমার ভাই ২০১৮ সাল থেকে প্রবাসে আছে। সে প্রবাসে থেকেও পুলিশি মামলার আসামি হয়ে গেছে। এমনকি যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় তাদেরও আসামি করা হয়েছে।
পর্তুগাল প্রবাসী নাঈম আহমদের বাবা ইব্রাহিম আলী বলেন, আমার ছেলে প্রায় আট বছর ধরে প্রবাসে আছে। প্রবাস থেকে কিভাবে মিছিলে অংশ নিল এবং মামলার আসামি তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
মামলার ১১ নম্বর আসামি মৃত লোকমান হোসেনের বিষয়ে জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা বলেন, লোকমান হোসেন ছয় বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এ মামলার ১৬ নম্বর আসামি উপজেলা যুবদলের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, আমি জীবনেও কোনদিন জামায়াতের কোন কর্মসূচীতে যাইনি। আমি এক সময় যুবদলের রাজনীতি করতাম কিন্তু জামায়াতের সাথে কিভাবে জড়ানো হয়েছে তা জানি না।
মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের ফরমুজ আলীকে।তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে জানা গেছে।
তার বড় ভাইয়ের অভিযোগ, এলাকার কিছু মানুষের সাথে পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে এ মামলায় আসামি করে জেলে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী জুড়ী থানার এসআই খসরুল আলম বাদল এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ওসি স্যারের সাথে কথা বলুন।
উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুর রহমান বলেন, আমরা বাজারে মিছিল করেছি। সেখানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ দূরের কথা কোন পুলিশই ছিল না।অথচ মামলা করে মৃত, প্রবাসী,আশি উর্ধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।