ডাক ডেস্ক : সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডবে উপজেলাব্যাপী অন্তত ১০টি গ্রামের শত শত ঘরবাড়ি, গাছপালা, যানবাহন, বৈদ্যুতিক খুঁটি, দোকানপাট, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রলয়ংকারী এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার অসংখ্য নারী–পুরুষ, শিশু আহত হয়েছেন।
রোববার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। পশ্চিম পাগলায় ঘূর্ণিঝড় আঘাতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, কানাডার সাসকাচিওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ফেলো ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের চন্দ্রপুর, ইনাতনগর, নবীনগর, কাঁদিপুর, ইসলামপুর, রায়পুর, রসুলপুর, শত্রুমর্দন গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই এলাকার অধিকাংশ পরিবার।
সোমবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গাছপালা ভেঙে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে পড়েছে।
চন্দ্রপুর গ্রামের হেলাল মিয়া জানান, মাত্র ৬ মাস আগে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছি। গতরাতের ঘূর্ণিঝড় আমার পুরো ঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে আমার ছোটবোন ও স্ত্রী আহত হয়েছেন। পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।
একই অবস্থা রায়পুর গ্রামের সুশান্তি দাসের। স্বামী সন্তান নিয়ে রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুশান্তির সুখের সংসার। রাতে কোনোভাবে প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি। প্রবল ঝড়ে সব উড়ে যাওয়ায় দিনমজুর স্বামী ও সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের অনিশ্চয়তার সময় পার করছেন।
একই গ্রামের বিধবা সফেদা বেগম সবকিছু হারিয়ে চার মেয়ে নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। ঝড়ে অসহায় পরিবারটির বসতঘর লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। এই ক্ষতি কীভাবে সামাল দেবেন তা জানা নেই সফেদা বেগমের।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনবার্সনে সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য ১০ মেট্টিকটন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনে ৩’শ বান টিন চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।