২৫ সচিবকে নিয়ে বৈঠক : প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

আন্তর্জাতিক খুলনা চট্টগ্রাম জাতীয় ঢাকা বরিশাল ময়মনসিংহ মৌলভীবাজার রংপুর রাজনীতি রাজশাহী সারাদেশ সিলেট সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ
শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক :: নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করা, নিয়মিত বাজার তদারকি করা, প্রশাসনে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তালিকা তৈরি করা, পর্যাক্রমে বাতিল করা, প্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বদলী করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনাম ফিরে আনা, আহত আন্দোলনকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা এবং তাঁদের চিকিৎসার খরচ ব্যয় করা, দেশের সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের গতিবাড়ানো, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, খাদ্য আমদানী ও সরবরাহ নিশ্চিত করা, সব ধরনের বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখা, সার, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, বন্দর, খাদ্যসহ জরুরি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে সাত দিনের মধ্যে তালিকা করে কাজ শুরু করতে হবেসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়নে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার অধীনে থাকা ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার অধনে থাকা ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা এই বৈঠকে অংশ নেবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সচিবদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আগেই চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, এই বৈঠকে একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত হতে পারে। এজন্য তাদেরকে সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারেরর পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে ১৭ সদস্যদের অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হয়। ড. ইউনূসের অধীনে ২৭টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ দেওয়া হয়। পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নতুন শপথ নেওয়া দুজন উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ড. ইউনূসের অধীনে রয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের দ্রুতকাজ করার নিদেশনা দিয়েছেন প্রধান
উপদেষ্ট।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সব মন্ত্রণালয়ের কাজ দ্রুত চালু করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ জন্য সাত দিন সময় দিয়ে এখন থেকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সচিব বলেন, গত কয়েক বছর যারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের দাবিগুলো শুনে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে। মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরগুলোকে দ্রুত ফাংশনাল করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যেসব মন্ত্রণালয়ে আগে মন্ত্রী ছিলেন সেসব মন্ত্রণালয়ের কাজ যাতে স্থবির হয়ে না যায়, সচিবরা সেসব কাজ নিজ উদ্যোগে যাতে শুরু করেন তা নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সার, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, বন্দর, খাদ্যসহ জরুরি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে সাত দিনের মধ্যে তালিকা করে কাজ শুরু করতে হবে এবং তালিকাগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ১৫-১৬ বছরে যেসব বিসিএসের ব্যাচের পদোন্নতি হয়েছে, যারা পদোন্নতিবঞ্চিত, যে কাজগুলো সচিবালয় পর্যায়ে বা দপ্তর পর্যায়ে নিষ্পত্তি করা যাবে, সেগুলো যেন নিষ্পত্তি করা হয়। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, অন্যান্য বিষয় যেগুলো আছে, সাত দিনের ভেতরে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। যেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, তার (প্রধান উপদেষ্টা) কাছে আমরা সিদ্ধান্তগুলো চাইব। শপথ নেওয়ার থেকে অফিস করলেন অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টারা। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কাজ করার জন্য নিদেশনা দিচ্ছেন।

এদিকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। ওই পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, বিচারের আগে সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনের কোন সুযোগ নেই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। আন্দোলনে হামলাকারী, হত্যাকারী সকলের বিরুদ্ধে সারাদেশের ভিকটিমদের মামলা করার আহ্বান জানাচ্ছি। বিচার নিশ্চিত করা হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আকতার বলেছেন,মানসম্মত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, আমিষ নিশ্চিত করা। খাদ্য ও সরবরাহের জোগান এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কখনও সংকট তৈরি না হয়। সহিংসতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যেসব কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে, সেগুলোর সংস্কার শুরু করা হবে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার ডিজিটাল অধিকারে পরিণত হয়েছে। এটি মানবাধিকারের বিষয়। এটিকে বিবেচনায় রেখেই ইন্টারনেট বন্ধ বা সীমিত করতে হবে, যাতে কারও মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকে। কথায় কথায় ইন্টারনেট বন্ধ করা চলবে না।

প্রথমে সকাল সাড়ে ১০টায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান যমুনায় প্রবেশ করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে ১১টা ১৫ মিনিটে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে তার অধীনে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করবেন সচিবরা বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টা তার অধীন সব মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে ২৫ মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *