স্টাফ রিপোটারঃ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশের খচড়া সংবিধানের স্বাক্ষরকারী, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সিলেট জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জননেতা লুৎফুর রহমান এডভোকেটের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ ৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ২.৩০ মিনিটের সময় সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে তাঁর জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হয় এবং জানাযা শেষে মানিকপীর গুরুস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। সিলেটের প্রবীণ ও বর্ষীয়ান এই রাজনিতিবিধকে শেষ বিদায় জানাতে জনতার ঢল নেমেছিল আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে।
সিলেটের সব শ্রেণী পেশার মানুষ তাঁকে শেষ বারের মত একনজর দেখতে ভীড় জমান। সকাল ১১টায় তাঁর মরদেহ জেলা পরিষদের সামনে রাখা হলে আওয়ামীলীগসহ সিলেটের রাজনিতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সেচ্ছাসেবী সংগঠন ফুল দিয়ে তাঁকে শেষ বারের মত শ্রদ্ধা জানান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এডভোকেট লুৎফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক জানাযার নামাজে উপস্থিত হয়ে এডভোকেট লুৎফুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট লুৎফুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় । এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল , শফিউল আলম নাদেল, সদস্য আজিজুস সামাদ ডন। নামাজের জানাযায় ইমামতি করেন মাওলানা মুহিবুল হক।
সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলা, উপজেলা থেকে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জানাযায় অংশগ্রহন করেন। সিলেটের বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী ২ ছেলে ১ মেয়ে নাতি-নাতনিসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। লুৎফুর রহমান গত ১৫ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন চিকিৎসা গ্রহনের পর করোনা মুক্ত হয়ে বাসায় ফিরে যান। কিন্তু শাররীক অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে হেলিকাপ্টারের ব্যবস্থা করলে তাঁর শাররীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় নেয়া সম্ভব হয়নি এবং তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাবেক বালাগঞ্জ ও বর্তমান ওসমানী নগর উপজেলার পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের বড় হাজীপুর গ্রামে ১৯৪০ সালের ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। নিজ গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণী পাশ করার পর মৌলভীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৫৯ সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকোলেশন পাশ করেন। সিলেট এম সি কলেজ থেকে আইএসসি ও বিএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এলএলবি পাশ করেন এবং সিলেট জেলাবারে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭০সালে বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচন হন। ১৯৬২সালে কয়েকজন ছাত্র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কাউন্সিলে যোগদান করেন। ১৯৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশের খচড়া সংবিধানে সদস্য স্বাক্ষর করেন। ২০১৬ সালে তিনি জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং পরবর্তীতে জনপ্রনিধিদের ভোটে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সব শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এডভোকেট লুৎফুর রহমানকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করেন। এডভোকেট লুৎফুর রহমান একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তিনি একেবারে সাদা মাটা জীবন-যাপন করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটে শোকের ছায়া নেমে এসছে। জেলা আওয়মীলীগের নেতৃবৃন্দ তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, এডভোকেট লুৎফুর রহমানের মৃত্যুতে সিলেট আওয়ামীলীগের যে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা কখনও পুরন হওয়ার নয়।