এ এইচ এম ফিরোজ আলী, রোজা ছিল ক্ষমা ও মুক্তির মাস। বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিম জাহান থেকে এক বছরের জন্য বিদায়। কিন্তু আমাদের মধ্যে রয়েছে নেক আমল। রমজান মাসের প্রতিটি মূহুর্ত ছিল মাগফেরাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে রোজাদার বান্দাদের আচার আচরণ প্রতিদিনের কাজকর্মে অনেক পরিবর্তন হয়ে ছিল। রোজাদার সবাই ছিলেন আত্মসংযমী। পবিত্র রমজান মাসের পূর্বে আমাদের লালিত রাগ, মান অভিমান, হিংসা বিদ্বেষ, সব ভুলে পাপাচার মুক্ত ছিলেন রোজাদারগণ। এমন হতে পারে যে আমাদের অনেক বান্দার এ রমজান ছিল জিবনের শেষ রমজান। পরম দয়ালু মহান আল্লাহ এ মাসের কৃত ইবাদতের সকল ভুল ক্ষমা করে পুনরায় রমজান মাস পাওয়ার সুজোগ করে দিবেন এটা আমাদের প্রার্থনা। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে রমজান না ও আসতে পারে। তাই রমজান মাসে আমাদের সকল সৎ উদ্দেশ্য আগামী রমজান মাস পর্যন্ত পালন করার অভ্যাস ধরে রাখা মুহাম্মদী উম্মতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ ধরে রাখতে হলে মুলমানদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় কাজ রয়েছে। অল্প সংখ্যক নেক আমলের বিনিময়ে রমজান মাসের সকল নেক আমল ধরে রাখা সম্ভব। এর মধ্যে হচ্ছে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন; যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল, অতঃপর তাঁর সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখলে সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল (মুসলিম ১১৬৪)। শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল বা ঐচ্ছিক রোজা পালন সারাটি বছর রোজা রাখার নেকি প্রাপ্তির সূবর্ণ সুজোগ এনে দেয়। হাদিসে আছে রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর শাওয়াল মাসের ছয় রোজা দুই মাসের সমান। এই হলো এক বছরের রোজা। কোন ঈনানদার বান্দার পক্ষে লাগাতার এক বছর রোজা রাখা সম্ভব নয় বিধায় রমজান মাসের পরজ রোজা ও শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখলে এক বছরের সমান হয়ে যায়। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম ( আঃ) থেকে হযরত নূহ ( আঃ) পর্যন্ত প্রতিটি মুসলনান চান্দ্র মাসের চৌদ্দ ও পনের তারিখ রোজা রাখতেন। ইহুদীরা রোজা রাখত ৪০ দিন আর খ্রীস্টানরা ৫০ দিন। শাওয়ালের ঐচ্ছিক ছয় রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে কোন ছয়দিন পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ভাবে না রাখলে ও হবে। তবে যার উপর রমজানের কাজা রোজা আছে তিনি আগে কাজা আদায় করবেন কাজার নিয়ম অনুসারে। তারপর ছয়টি রোজা রাখবেন। শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজা রমজানের ফরজ রোজায় যে ভুল ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছিল তা পূরণ করে দেয়। ফরজ রোজা রাখার সময় বান্দা অনেক অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি, খারাপ ও পাপকাজ থেকে সম্পর্ণ রুপে মুক্ত না ও থাকতে পারেন। এমন হলে রোজায় নেকী কমার সম্ভাবনা থাকে। এই ছয়টি রোজা রমজান মাসের ফরজ রোজায় সহায়তা করে। মূলত বান্দা তাঁর উত্তম অভ্যাস বা চরিত্র ধরে রাখার একটি পন্হা। রোজা বান্দাকে মানবিক হওয়ার সুজোগ করে দেয়। নবী করিম ( সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল হযরত দাউদ ( আঃ) এর রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং একদিন বিনা রোজায় থাকতেন। রোজা রাখলে কুপ্রবৃত্তির ক্ষমতা দূর্বল হয় এবং খোদাভীতি বাড়ে। রোজা শরীরের যাকাত। রোজা ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা যন্রনা অনুভব করে দেয় ফলে ধনী বান্দা গরীদের সহায়তায় মনযোগী হন।