যে কারনে বিশ্বনাথের উত্তর দৌলতপুর নির্মাণাধীন মদিনা জামে মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্ব

Uncategorized
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর দৌলতপুরে নির্মাণাধীন মদিনা জামে মসজিদকে স্থাপনা বানিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতে ৭জনকে আসামি করে সাজানো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলাটি দায়ের করেন উত্তর দৌলতপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের পুত্র মোস্তফা মিয়া। আদালত বাদির অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৪৪ ধারা জারির জন্য বিশ্বনাথ থানা পুলিশকে নির্দেন দিলে পুলিশ সরেজমিন গিয়ে ১৪৪ধারা নোটিশ প্রদান করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা বিরাজ করছে। আবারও ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ি সংর্ঘষ।

সরেজমিন গিয়ে জানাগেছে, ২০২১ সালে উত্তর দৌলতপুর গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন মোস্তফা মিয়া ও তার ভাতিজা আলা মিয়া ও আনোয়ার হোসেন ধন মিয়াসহ গোষ্টির লোকজন। মসজিদ নির্মাণের আগে অর্থাৎ ওই বছরের ৬ডিসেম্বর আলা মিয়াকে সভাপতি, শফিক মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ও মোস্তফা মিয়াকে সদস্য তার ভাতিজা লিটন মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ করে ১৩সদস্যের একটি সমজিদ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করা হলে ৫লাখ টাকা নিয়ে কোষাধ্যক্ষ লিটন মিয়ার সঙ্গে কমিটির লোকদের দদ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে ৫লাখ টাকা না দেওয়ায় লিটন মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে বাদ দেয়া হয় এবং মোতাওয়াল্লী আলা মিয়ার ভাই ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়াকে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। এতেই মোস্তফা মিয়া ও আলা মিয়া পক্ষের মধ্যে বিরুধ সৃষ্টি কারন। কোষাধ্যক্ষ লিটন মিয়া মসজিদের ৫লাখ টাকা না দেয়ায় গত ১৮ এপ্রিল আলা মিয়া ও মোস্তাফা মিয়া পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ১০জন আহত হন। এ ঘটনায় আলা মিয়া ও ইউপি সদস্য ধন মিয়াসহ ১৯জনকে আসামি করে বিশ^নাথ থানায় মামলা দায়ের করেন মোস্তফা মিয়া, (মামলা নং ১৩)। মামলায় মসজিদের সভাপতি ও মোতাওয়াল্লী আলা মিয়া, কোষাধ্যক্ষ আনোয়ার হোসন ধন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শফিক মিয়া ও কুতুব আলী বেশ কিছুদিন হাজতবাসও করেন। শুধু তাই নয় এ সংর্ঘষের ঘটনার সাথে জড়িত না থেকেও ইরন মিয়া আসামে হয়েছেন এবং ১০দিন জেলও খেটেছেন । মামলা থেকে রেহাই পায়নি প্রতিবন্ধি খচরু মিয়াও।

ওই মামলার পর গত ৩মে মোস্তফা মিয়া বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের আলা মিয়াসহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে মসজিদকে নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে সাটারিংয়ের মালামাল জব্দ করতে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করেন, (বিবিধ মামলা নং ৩৭/২০২৩ইং)। মামলার প্রেক্ষিতে সেখানে ১৪৪ধারা জারি করা হয়। তবে, দৌলতপুর মৌজার বিএস ৩৭৪৩,৩৮০৬,৩৮০৭,৩৮০৮,৩৮০৯,৩৮১০ দাগের জায়গা নিজেদের উল্লেখ করা হলেও ৩৮০৬,৩৮০৭ ও ৩৮০৮ নং দাগের ৬৩ শতক জায়গায় নির্মানাধীন মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮০৬ নং দাগের ২১শতক জায়গার মালিক মাসুক মিয়া, ৩৮০৭ নং দাগের ২৪শতক জায়গার মালিক ইরণ মিয়া এবং ৩৮০৮ নং দাগের ১৮শতক জায়গার মালিক হচ্ছেন সুরুজ আলী। তারা মসজিদে ওই জায়গাটুকু দান করেছেন। ১৪৪ধারা জারির পর বিশ্বনাথ থানা পুলিশের এসআই অমিত সিংহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গত ২৫জুন বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আর এতে ৩৮০৬,৩৮০৭ ও ৩৮০৮ নং দাগের ৬৩শত জায়গায় নির্মানাধীন মসজিদ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। আর কেবলমাত্র ৩৮০৯ নং দাগের মসজিদের সামনের জায়গা মোস্তফা মিয়ার রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

এর আগে গত ১৯ এপ্রিল মোস্তফা মিয়ার সংর্ঘষের মামলার প্রায় ২১দিন পর গত ১০মে আলা মিয়া পক্ষের কুতুব আলী বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের মোস্তফা মিয়া, লিটন মিয়াসহ ৭জনকে আসামি করে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩য় আদালতে টাকা আত্মসাৎ ও মারামারির মামলা দায়ের করেন, (পিটিশন মামলা নং-৫৯ এবং মামলার জিআর নং ১৯৪/২৩ইং)। ১৪৪ ধারা জারির পর নির্মানাধীন ওই মসজিদের সাটারিং খোলে নিতে আসেন ঠিকাদির প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এঘটনাকে কেন্দ্র করে বেআইনি কার্যক্রমের অভিযোগ এনে গত ২৬জুলাই আবারও আলা মিয়াসহ ওই পক্ষের মোট ৭জনকে অভিযুক্ত করে মোস্তফা মিয়া সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুনানী শেষে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট ইমরুল হাসান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার আবারও থানা পুলিশের এসআই অমিত সিংহ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তিশৃংখলা বাজায় রাখতে বলেন। এ নিয়ে আবারও নতুন করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উত্তর দৌলতপুরের মুরব্বি মাসুক মিয়া, ইরণ মিয়া ও সুরুজ আলী বলেন, তারা তাদের মোট ৬৩শতক জায়গা মসজিদে দান করেছেন। অথচ, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নির্মানাধীন মসজিদকে বারবার নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে আদালতে মামলা দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করাচ্ছেন মোস্তফা মিয়া। মুলত তার ভাতিজা লিটন মিয়ার ৫লাখ টাকা আত্মসাৎকে কেন্দ্র করে গত এপ্রিল মাসে মারামারি হয়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও মোতাওয়াল্লি আলা মিয়া তার ভাই ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, লিটন মিয়া মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করায় মসজিদ কমিটি ও নিজেদের গোষ্টির মধ্যে ফাটল ধরে। আর এই টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ এপ্রিল মারামারি হয়। এরপর তাদেরকে ঘায়েল করতে আদালতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নির্মানাধীন মসজিদকে নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে মোস্তফা মিয়া বারবার অভিযোগ করেন এবং ১৪৪ ধারা জারি করান। যা আদৌ সত্য নয়।

তবে, টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা দাবি করেছেন মোস্তফা মিয়ার ভাতিজা মসজিদ কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ লিটন মিয়া। তিনি বলেন, মসজিদের সামনে তার চাচা মোস্তফা মিয়ার জায়গায় মাটি ভরাট নিয়ে বাক বিতন্ডা হয়। এনিয়ে আলা মিয়া পক্ষ তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।

টাকা আত্মসাৎ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, কোষাধ্যক্ষ হিসেবে তাকে মুল্যায়ন না করে সভাপতি ও মোতাওয়াল্লী আলা মিয়া বিচ্ছিন্নভাবে টাকা খরচ করেন। এনিয়ে বেশ কিছুদিন দু’পক্ষে বাক বিতন্ডা হয়েছে। আর এইসকল বিষয়াদি নিয়ে তাকে ও তার চাচাকে ঘায়েল করতেই এমন মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্বনাথ থানার এসআই অমিত সিংহ বলেন, মোস্তফা মিয়া নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে যেখানে ১৪৪ধারা জারি করিয়েছেন সেখানে ভবন নয় নির্মানাধীন মসজিদ রয়েছে। তিনি (মোস্তফা মিয়া) যেসকল জায়গার দাগ নং উল্লেক করেছেন সেই দাগের বেশিরভাগ জায়গাতেই মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে খালি জায়গা খুব কমই আছে। গত ২৫জুন বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এসকল বিষয় উল্লেখ করে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেছেন। কিন্তু তারপর গত বুধবার আবারও আদালতে পিটিশন দেওয়ায় দু’পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান বলেন, উত্তর দৌলতপুরে আইনশৃঙ্খলা বিঘিœত হচ্ছে এমন কোন কাজ পরিলক্ষিত হয়নি। আর যদি এমন কেকু করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *