মহান মে দিবসের জানা-অজানা কাহিনী

Uncategorized
শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার : আজ মহান মে দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ শ্রমজীবী, মেহনতী মানুষের কথা স্মরণ করবেন, যারা ২৪ ঘন্টা নয়, ৮ ঘন্টা শ্রমের দাবিতে আন্দোলন করে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। পৃথিবীর মানুষের আদি পেশা কৃষি। কিন্তু একসময় শিল্প উন্নতির ফলে পৃথিবীতে কলকারখানা গড়ে উঠে, তখন কারখানার মালিকরা কম মূল্যে ২৪ ঘন্টা শ্রমজীবী মানুষদের কাজ করাতেন। কিন্তু কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে ৮ ঘন্টা শ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ১৮৮৬ সালের ১ লা মে আমেরিকায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল শ্রমজীবী মানুষ। তাদের আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ আট ঘন্টা কাজ করবে। কলকারখানার মালিকরা এ দাবি মানতে রাজি ছিলেন না। ১৮৮৪ -৮৫ সালের দিকে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দাভাবের কারণে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ায় বহু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। তখন শ্রমিকরা ৮ঘন্টা শ্রমের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। আমেরিকার শিকাগো শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশিগান এভিনিউ এ সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক ১৮৮৬ সালের ১ লা মে ধর্মঘটে যোগ দেয়। ৩ মে ধর্মঘট ব্যাপক আকার ধারণ করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়, এতে ৩ জন শ্রমিক নিহত হন। এ হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে ৪ মে এক বিশাল প্রতিবাদে সমাবেশ ডাকা হয়। শিকাগো শহরের হে মার্কেট এর সামনে ঐদিন পুলিশের গুলিতে আরো ৪ জন শ্রমিক নিহত হন এবং ১৬ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়। উত্তেজিত শ্রমিকদের আন্দোলন চতুর দিকে ছড়িয়ে পড়ে। খেটে খাওয়া মানুষকে দমাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করে সরকার। ১৮৮৬ সালের নয় অক্টোবর আরো ৬জন শ্রমিককে ফাঁসি এবং ৩জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এসব কোনো কিছুই আন্দোলন থামে নি। বরং শ্রমিক আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। শ্রমিকদের দুর্বার আন্দোলনের ফলে নত হয় কলকারখানার মালিকগণ। ফলে তারা শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কাজ করার দাবি মেনে নেন। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয় যে, ১লা মে (১৮৮৬) শিকাগো শহরে আন্দোলনে প্রাণ দেয়া শ্রমিকদের স্মরণে ১লা মে দিবস পালন করা হবে। ১৮৯০ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি দেশ প্রথম মে দিবস পালন করে। তারপর একে একে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শ্রমজীবী নিহত মানুষের স্মরণে এবং তাদের ত্যাগ স্বীকারে এ দিনটি পালন করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১লা মে দিবস বিশ্ব শ্রমিক দিবস পালন করে আসছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে এবার ১লা মে ঝাকঝমক ভাবে দিবসটি পালন করা না হতে পারে। তবে পৃথিবীর সব শ্রমিকদের বা মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে যারা সেদিন জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের গভীর শ্রদ্ধভরে স্মরণ করবে বাংলাদেশ। আমরা যুগে যুগে নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিহত সকল শ্রমজীবী মানুষকে স্মরণ ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *