বিশ্বনাথ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

জাতীয় সারাদেশ সিলেট
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মীদের একত্র করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন এবং চিকিৎসা সেবা দিতে সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে বলেন। 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে যদি আমরা ভালো ভাবে  চিকিৎসা ব্যবস্থাটাকে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভীড় হবে না। দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে শুধু সেবা না, এগুলোতে শিক্ষা গবেষণা করা হয়। এরজন্য আমাদেরকে পরিবেশ দিতে হবে। দেশের ৫টি (সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, ফরিদপুর, বরিশাল) বার্ণ ইউনিট নির্মাণে কাজ করছে সরকার। তিনি আরোও বলেন, জনবল সংকট অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থার কারণে উপজেলাগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। যদি জনবল সংকট দূর করতে পারি, তাহলে মানুষ এখানে থাকবে। আর এইগুলা নিরসন করে মানুষকে প্রান্তিক পর্যায়ে কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছি।

তিনি বুধবার ( মার্চ) দুপুরে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে একথাগুলো বলেন। এরপূর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নেরদিঘলী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রপরিদর্শন করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সিলেট আমরা জন্মভূমি। আর বিশ্বনাথে আমরা বাবামা দুজনেরই বাড়ি। এখানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট-আসনের সাংসদ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বিএমএ মহাসচিব এহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেটের সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এর আগে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনের সময় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেন্টু পুরকায়স্থকে কর্মস্থলে উপস্থিত না পাওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এমনকি আরও যারা সঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না তাদের বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন ইতোমধ্যেই জারি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুই দিনের সফরে সিলেট পৌঁছান। আজ সকালে তিনি সিলেটের জৈন্তাপুর বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

অভিযানকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার, পুরুষ মহিলা ওয়ার্ড রুম, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে উপস্থিত ইনডোর আউটডোর রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন। পরিদর্শনকালে জৈয়ন্তপুর কমপ্লেক্সে বেশকিছু অনিয়ম দেখতে পান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে কমপ্লেক্স চত্বরে সহজে দৃষ্টিযোগ্য স্থানে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এর কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে দৃষ্টিযোগ্য স্থানে চিকিৎসকদের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন কীভাবে থাকতে পারে। প্রাইভেট ক্লিনিক চেম্বারের সঙ্গে এই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কারও স্বার্থ না থাকলে এটি হতে পারত না।’ 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেখানে হাত পরিষ্কার করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার চাইলে উপস্থিত কর্মকর্তারা সেটি দিতে ব্যর্থ হয়। পরে তাদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে অথচ সেখানে কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয় না। এটি কীভাবে হতে পারে? একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে উপজেলার মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দেবার জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা যারা দিবেন তারা যদি দায়িত্বশীল না থাকেন তাহলে তো সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে না। সরকার যে জন্য বিনামূল্যে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে চাচ্ছে সেটিও পূরণ হবে না। আমি পরিষ্কার ভাষায় এখানে বলে যাচ্ছি, আমি শুধু বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ত্রুটিই দেখব না। সরকারি হাসপাতালে ধরনের অব্যবস্থাপনা হলে সংশ্লিষ্ট কেউই মাফ পাবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ইমার্জেন্সি রুম অত্যন্ত ছোট দেখেতে পেয়ে কক্ষটিকে বড় করার নির্দেশনা দেন। অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও সেগুলোতে কোনো রোগীর অপারেশন হতে না পারার জন্য মন্ত্রী উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। অন্যান্য কক্ষ পরিদর্শন করে সেগুলো আরও মেরামত করার নির্দেশ দেন এবং এখানকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি লোকবলের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সময় কিছুদিন আগে জৈয়ন্তপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষও পরিদর্শন করেন। 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *