নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সড়ক পথের গুরুত্ব অপরিসীম। এক সময় এদেশে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারে কম মূল্যে বিক্রি করতে, আবার কেউ কেউ একটু বেশি লাভের আশায় মাইলের পর মাইল পাঁয়ে হেঁটে দূরবর্তী বাজারে বিক্রি করতেন। এখন সড়ক পথের ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় ৬/৭ ঘন্টায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য পৌছে যায় কৃষি পণ্য। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারনে অনেক অঞ্চল অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। দেশের অনেক স্থানে উন্নয়নে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে দীর্ঘদিনেও ব্রীজ, কালভার্ট ও পাকা সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার ৪নং রামপাশা ইউনিয়ন ও ২নং খাজাঞ্চী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান, আশুগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের সামনে খাজাঞ্চী নদীর উপর ৫০ বছরেও বাঁশের সাকোঁর পরিবর্তে একটি পাকা সেতু নির্মাণ হয়নি। এলাকাবাসী প্রতিবছর চাঁদা তুলে বাঁশের সেতু নির্মাণ করলে প্রায়ই বন্যা-ঝড়-তুফানে ভেঙ্গে যায়। এক সময় এ নদী খেয়া নৌকায় পারাপার হলেও এখন নৌকা নেই। এ অবস্থায় প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থদের নদী পারাপারের সময় ব্যাগ, বইপুস্তক এবং লোকজনের ধান-চাউল, তরী-তরকারী প্রায়ই নদীতে সবকিছু হারাতে হয়। আশুগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাবিনা বেগম বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে যায়।
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর মনোনীত নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম খান এমপি নির্বাচিত হয়ে এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের আশ^াস দিয়েছিলেন। তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার্থে জানাইয়া গ্রামের পাশে, রামপাশা পাকা সড়ক থেকে শ্রীধরপুর হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত একটি রাস্তার মাটি ভরাটের কাজও সম্পন্ন করে ছিলেন। এই রাস্তার উত্তরমুখে খাজাঞ্চী নদীতে পাকা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিলেন। তারপর যোগযোগ প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী, এনামুল হক বীর প্রতিক, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আজিজুর রহমান, এম ইলিয়াছ আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী ও ইয়াহিয়া চৌধুরী সেতু নির্মাণের আশ^াস দিয়ে ভোট নিয়েছিলেন। দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরীর মৃত্যুর পর জানাযা শেষে, দেওয়ান ফরিদ গাজী আশুগঞ্জ বাজারে (লেখকের সাথে) এক বৈঠকে সেতু নির্মাণের সকল সহযোগিতারও আশ^াস দিয়েছিলেন। বর্তমান মোকাব্বির খান এমপি মাস খানেক পূর্বে সরেজমিনে সেতু এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় প্রকৌশলীকে প্রকল্প তৈরীর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ দেশে টাকা আর ক্ষমতা ছাড়া কে শোনে কার কথা। ১৯৭৩-২০২২ সাল ৫০ বছর সময় পেরিয়ে গেলেও এখানে সেতুটি নির্মাণের আশায় ভোট দিয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেক শিশু যৌবন পেরিয়ে বাধর্ক্যে গমন করেছেন। কিন্তু সেতুতো এখনও নির্মাণ হয়নি, কখন হবে তা কেউও জানে না। পালেরচক গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বী ও শিক্ষাবিদ মোঃ আব্দুল গফুর আক্ষেপ করে জানালেন, সারা জীবন ভোট দিয়েছি, একটি সেতুর জন্য, কিন্তু সবাই এমপি হলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। এলাকাবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সেতুটি নির্মাণের জোর দাবী জানিয়েছে। আশুগঞ্জ বাজারের পশ্চিমে পাকা রাস্তার কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সড়কটি রক্ষায়ও কোন ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না।