বিশ্বনাথে ১০ দিন আটক রেখে কিশোরিকে ধর্ষণ : আসামিকে ছেড়ে দিল পুলিশ

Uncategorized
শেয়ার করুন

ডাক ডেক্স : সিলেটের বিশ্বনাথে এক কিশোরিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ১০দিন আটক রেখে ধর্ষণ করেছে এক বখাটে। বখাটে হাবিবুর রহমান টিটু উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের কোনাউড়া নোয়াগাঁও গ্রামের মনোহর আলীর ছেলে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার মাতববররা অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান টিটুকে থানা থেকে ওই কিশোরির সঙ্গে বিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিলে পুলিশ আসামিকে ছেড়ে দেয়। বাড়িতে গিয়ে ধর্ষক ও আত্নীয় স্বজনরা মেয়েটি গরিব থাকায় বিবাব করতে অস্বীকার করে। অসহায় পিতা মাতববরদের দারে দারে ঘুরলেও কেউ তাকে পাত্তা দেয়নি। উল্টো ১ লক্ষ টাকার দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি সাংবাদিকদের নজরে আসলে তারা ছুটে যান অসহায় পরিবারের কাছে। কান্নায় ভেঙ্গেপড়া কিশোরির কথা শুনে হতবাক হন সাংবাদিকরা।
বিস্তারিত, উপজেলার কোনাউড়া নোয়াগাঁও গ্রামে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান টিটু পার্শ্ববতি একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ধর্ষিতা ওই কিশোরি। সে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের নওধার বৈরাগীরগাঁও গ্রামের একটি হত-দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। প্রায় ৬মাস পূর্বে তার সঙ্গে পরিচয় হয় হাবিবুর রহমান টিটুর। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ১১ অক্টোবর দুপুরে টিটুর সঙ্গে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় কিশোরি। ওই দিন দুপুরে কিশোরির বাবাকে ফোন করে টিটু তার পরিচয় দিয়ে বলে ‘আপনার মেয়ে আমার কাছে আছে’। একথা বলার পর তার ফোন বন্ধ করে রাখে। এরপর ১০দিন টিটু তার নিজ বাড়ির পার্শ্ববর্তি একটি নির্জন ঘরে কিশোরিকে আটকে রেখে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাত দিন ধর্ষণ করে। নিখোঁজের ঘটনায় তরুণীর পিতা গত ১৮ অক্টোবর বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (ডায়েরী নং- ১০০০) করেন। অভিযোগের ৩দিন পর হাবিবুর রহমান টিটুর বাড়িতে যান বিশ্বনাথ থানার এসআই নবী হোসেন। তখন তিনি ভিকটিম কিশোরির ও অভিযুক্ত টিটুকে থানায় নিয়ে আসার জন্য পরিবারকে বলেন। এরপর ওই দিন বিকেলে পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমকে ও অভিযুক্ত টিটুকে থানায় নিয়ে আসেন। তখন কিশোরিকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ায় বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় মাতব্বররা থানা পুলিশের কাছ থেকে তাদেরকে কিশোরির বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় নওধার পূর্বপাড়া গ্রামের মুরব্বি সোনা মিয়া, আহমদ আলী, আলী হোসেন সহ মাতব্বরা ধর্ষক টিটুকে তার স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেন এবং দ্রুত বিবাহ সম্পন্ন করার জন্য তাদের তাগিদ দেন। এতে কিশোরির পরিবার রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে টিটুর পরিবারের পক্ষ থেকে তরুণীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
এদিকে, আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকায় পরিবারের পক্ষে ভিকটিম মেয়েটিকে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালে নিয়ে যেতেও তাদের কাছে গাড়ি ভাড়ার টাকাও নেই বলে জানান। এমতাবস্থায় পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরির মা বাবা। তবে তিনি মুরব্বিদের আশ্বাসের দিকে চেয়ে আছেন। ধর্ষিতার পরিবারকে বিষয়টি নিস্পত্তির আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপন করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার পায়তারা করা হচ্ছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
এব্যাপারে কিশোরির সাথে কথা বলে জানাযায়, ‘আমি টাকা পয়সা চাই না, স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাই’। অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান টিটু ও তার পিতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে টিটুর বড় ভাই শানুর আলী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি মুরব্বিদের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়েছে। কিভাবে নিস্পত্তি হয়েছে তা বলতে রাজি নন।
বিষয়টি নিম্পত্তি করতে মধ্যস্থতাকারী নওধার পূর্বপাড়া গ্রামের মুরব্বি সোনা মিয়া ও আলী হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য থানা থেকে তাদেরকে (ভিকটিম ও টিটু) বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্ত তখন টিটুর ভোটার আইডি ও জন্মনিবন্ধন কার্ড না পাওয়ায় বিয়ে পড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে টিটুকে তার স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিম্পত্তির জন্য আগামী বুধবার (৩০ অক্টোবর) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে তারা জানান।
বিশ্বনাথ থানার এসআই নবী হোসেন বলেন, ভিকটিমের পিতা থানায় সাধারণ ডায়েরী করলে অভিযুক্ত টিটুর বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে থানায় নিয়ে আসতে বলি। এরপর তারা থানায় আসেন এবং কিশোরি ধর্ষণের শিকার হয়নি উল্লেখ করে তার পিতা লিখিত অঙ্গিকারনামা দিয়ে ভিকটিম ও অভিযুক্ত যুবককে থানা থেকে নিয়ে যান।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *