স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা মুল্যের চাউল বিতরনে অনিয়ম দূর্নীতি ও হরিলুটের বিষয়ে তদন্তের জন্য গত (১৮জুন) ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন ইতি মধ্যে তারা তদন্তের চিঠি পেয়েছেন। কিন্তু এখনও কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি। গণ মাধ্যমে ১০ টাকা মূলের চাউলের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হলে ৮টি ইউনিয়নে সচেতন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচন শুরু হয়। গ্রামের অধিকাংশ সহজ সরল লোক গরিব, দিন মজুর, পংঙ্গু, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত সহ একে বারে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাউল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে এ বিষয়ে অধিকাংশ লোক জানতেন না। সংবাদ প্রকাশের পর চাউল আত্নসাৎ ও হরিলুটের সাথে জড়িতদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আত্নরক্ষার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা তদবির শুরু করেছেন। কার্ডধারিদের পায়ে হাতে ধরে চাল ফেরত দেয়ারও আশ্বাস দিচ্ছেন। ১০ টাকা মূলের চাউলে অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্রমতে, দৌলতপুর ইউনিয়নে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১২৫৪০ কেজি, অক্টোবর মাসে ১২৫৪০ কেজি, নভেম্বর মাসে ৬৭২০ কেজি, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ৬৭২০ কেজি, এপ্রিল মাসে ৬৭২০ কেজি, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ৬৭২০ কেজি, এপ্রিল মাসে ৬৭২০ কেজি, সেপ্টেম্বর মাসে ৬৭২০ কেজি, অক্টোবর মাসে ৬৭২০ কেজি, নভেম্বর মাসে ৬৭২০ কেজি, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৬৭২০ কেজি, এপ্রিল মাসে ৬৭২০ কেজি, সেপ্টেম্বর মাসে ৬৭২০ কেজি, অক্টোবর মাসে ৫৬৭০ কেজি, নভেম্বর মাসে ৬৭২০ কেজি এবং ২০২০ সালের মার্চ মাসে ৬৭২০ কেজি, এপ্রিল মাসে ৬৭২০ কেজি এবং মে মাসে ৬৪৯০ কেজি। মোট ১,৩১,৩২০ কেজি বা ১৩১.৩২ মেট্রিক টন চাউল। এ চাউলের বর্তমান ৩৬ টাকা বাজার মূল্য মোট ৪৭ লাখ ২৭ হাজার ৫২০ টাকা।
লামাকাজি, রামপাশা ও দৌলতপুর ইউনিয়নের ভূক্তভোগীরা ইতিমধ্যে উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। দৌলতপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে গত ২/৩দিন তদন্ত করে ভিন্ন রকম চিত্র পাওয়া যায়। ডিলারের চাউল রাখার কোন দোকান বা গোদাম নেই। চাউলের কার্ড বা চাউল প্রদানের সিদ্ধান্ত মেম্বারদের হাতে রয়েছে। কার্ডধারিদের অধিকাংশ চাউল মেম্বাররা নিয়ে থাকেন এবং সুবিধাভোগীদের কার্ডও তাদের কাছে থাকে। তারা সে চাউল কি করেন কেউ জানেনা। এ ইউনিয়নের ২২৪ জনের তালিকা উপজেলায় দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে পূরো ২২৪ জনের তালিকাই পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন জাগে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ২২৪ জন লোকের আর্থিক অবস্থা কি ভাবে অতি তাড়াতাড়ি স্বচ্ছল হয়ে গেল তা মোটেই বিশ্বাস যোগ্য নয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ নাম পরিবর্তনের ২টি কারন হচ্ছে, নির্বাচনে ভোট পাওয়ার আশায় মেম্বাররা তাদের পছন্দের লোকদের চাউল দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ তালিকার বাইরের চাউলও বিভিন্ন লোক ও দোকানে বিক্রির করছেন।
দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর সত্তিশ গ্রামের মৃত চমক আলীর পুত্র তৈয়বুর রহমানের নাম পরিবর্তন করে উত্তর দৌলতপুর গ্রামের লাল মিয়ার নাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার পিতার নাম উল্লেখ করা হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই লাল মিয়া ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন ধন মিয়ার বড় ভাই। তার বাড়িতে বড় ধরনের দালান নির্মিত হচ্ছে। তিনি কোন গরিব লোক নন। তার ক্রমিক নং-১১৮। উত্তর সত্তিশ গ্রামের মৃত তজম্মুল আলীর স্ত্রী হারুন নেহার ক্রমিক নং-১৩২। তার নাম পরিবর্তন করে উত্তর দৌলতপুর গ্রামের নাছির আলীর স্ত্রী রং মালা বেগমের নাম দেয়া হয়েছে তাকে ১০ টাকা মূল্যের চালের কথা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে কিছুই জানেনা বলে জানায়। দৌলতপুর ইউনিয়নের তালিকায় কার্ডধারিদের মোবাইল নাম্বার কিংবা কোন কারনে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি পূরুষের সাথে মহিলা এবং মহিলার সাথে পূরুষের কি সম্পর্ক তা তালিকায় উল্লেখ নেই। প্রাক্তণ তালিকার ও বর্তমান তালিকার সুভিধা ভোগীদের বেশ কিছু বক্তব্য রেকর্ডের পর এই ইউনিয়নের ভিন্ন রকম অণিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে।
ইতি মধ্যে বেশ কিছু কার্ডধারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন উর্ধতন কর্মকর্তার নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন। দৌলতপুর ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র ইলাচ আলী তার অভিযোগে বলেন, ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া আমাকে ২বার চাউল দিয়েছেন। আমার ক্রমিক নং-৯৮। আমি আমার কার্ড ও যাবতীয় চাউল ফেরত চাই। একই গ্রামের মৃত সমুজ আলীর পুত্র সালা উদ্দিন ক্রমিক নং-৮৬। অভিযোগ করে বলেন আমি কার্ড ছাড়া মাত্র ১বার চাউল পেয়েছি। ২য় বার চাউল আনতে গেলে ডিলার বারাম জানায় চাউল আসেনি, আসলে পাবে। এপর্যন্ত দীর্ঘ অপেক্ষার পর চাউল পাইনি। একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দৌলতপুর গ্রামের মৃত ঠাকুর আলীর পুত্র জাহির আলী তার অভিযোগে বলেন আমি একজন দিনমজুর লোক, সামান্য রং মিস্তীর কাজ করে জীবন চালাই। আমার ক্রমিক নং-১০২। আমি কয়েকবার চাউল পেয়েছি। কিন্তু ৫/৬ মাস ধরে চাউল পাচ্ছিনা। ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহিন জানিয়েছেন আমার কার্ডটি বাতিল করে দিয়েছেন। আমি বর্তমানে পরিবার নিয়ে অনাহারে আছি। একই অভিযোগে ফারুক মিয়ার স্ত্রী ফুলেছা বেগম ক্রমিক নং-১৯৭, অভিযোগে বলেন, আমি অনেকবার চাউল পেয়েছি আমাকে না জানিয়ে মেম্বার ও ডিলার আমার কার্ড বাতিল করে দিয়েছেন। আমার স্বামী পঙ্গু ও আমার ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছি। ৬নং ওয়ার্ডের ধনপুর গ্রামে মৃত বাবুল মিয়ার পুত্র ছায়েদ আহমদ বলেন, আমি একজন দিন মজুর। আমার ক্রমিক নং-৮৩। আমি কোন দিন ১০ চাকা মূলের চাউল ১বারও পাইনি। আমার ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়র হোসেন ধন মিয়া ও চাউলের ডিলার বারাম আমার চাউল উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছেন। আমার চাউল ফেরত ও বিচার চাই। এ ধরনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে দৌলতপুর ইউনিয়নে। কি কারনে ২২৪ জন লোকের তালিকা একসাথে পরিবর্তন করা হলো তা মোটেই বোধগম্য নয়। এ ইউনিয়নের টেক অফিসারের দায়িত্বে থাকা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলে মূল থেকেই তিনি টেক অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন। কতবার উপস্থিত থেকে চাউল বিতরণ করেছেন তা এই মুহুর্তে স্মরণ নেই।