স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের বিশ্বনাথে বিল্ডিং নির্মাণের নামে যুক্তরাজ্য প্রবাসী চাচার টাকা আত্নসাতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসামুলকভাবে ঠিকাদারের ছোট ভাইকে ধর্ষণ মামলার আসামি করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সাথে থানা পুলিশ জড়িত বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার অলংকারি ইউনিয়নের টেংরা বাগমারা গ্রামে। কথিত ধর্ষণ মামালার আসামি কিশোর বাদশা মিয়া (১৬) গত ৫মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। সে সেচ্ছায় নিখোঁজ হয়েছে নাকি কেউ তাকে অপহরণ করেছে সে সম্পর্কে কিছুই জানা যাচ্ছেনা। ধারনা করা হচ্ছে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কিশোর বাদশা মিয়া আত্নগোপনে রয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় যেমন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি বাদশা মিয়ার মা ছেলের জন্য ব্যাকুল হয়ে কাঁদছেন। এ ঘটনায় পুরো পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত কিশোর বাদশা মিয়া টেংরা বাঘমারা গ্রামের মৃত রিফাত উল্লাহর ছেলে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, টেংরা বাঘমারা গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফারুক মিয়ার বাড়িতে একটি বিল্ডিং নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিলেন প্রবাসীর ভাতিজা রাসেল মিয়া। তিনি সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ না করে চাচার প্রেরিত টাকা বিভিন্নভাবে আত্নসাৎ করেছেন। এই ঘটনা জেনে প্রবাসি ফারুক মিয়া তার ভাতিজাকে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। এতে রাসেল মিয়া ঠিকাদার আছকর আলীর উপর ক্ষীপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার কৌশল অবলম্বন করেন।
চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাসেল ঠিকাদারের ছোট ভাই বাদশা মিয়াকে উরুসে যাওয়ার কথা বলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে প্রবাসি ফরুক মিয়ার ঘরে তালাবদ্ধ করে আটক রাখেন। প্রবাসী ফারুক মিয়ার ঘরে একই গ্রামের আবুল মিয়ার মেয়ে হামিদা বেগম (১৫) গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তাকে দিয়ে সাজিয়ে বাদশা মিয়াকে একমাত্র আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় সম্পূর্ণরুপে কলকাড়ি নেড়েছেন ক্ষীপ্ত রাসেল মিয়া। এ ধর্ষণ মামলা দায়েরে সরাসরি সহায়তা করে বিশ^নাথ থানা পুলিশ।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাদশার বড় ভাই মরহুম হাজী জবান উল্লাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো: আকবর আলী (৩০) ও তার ভাই ঠিকাদার আছকর আলীকে (২৫) আটক করে থানার নিয়ে আসেন এসআই ফজলুল হক। ঘটনার খবর পেয়ে টেংরা গ্রামের কয়েক শতাধিক লোক থানায় উপস্থিত হয়ে নিরপরাধ দুই ভাইকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ গ্রামবাসির চাপে হাফিজ আকবর আলীকে ছেড়ে দিলেও অপর ভাই আছকর আলীকে কোর্টে চালান দেয় পুলিশ। ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি বাদশা মিয়া হলেও তার বড় ভাই আছকর আলীকে সহযোগী আসামি উল্লেখ করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। আছকর আলী দীর্ঘ আড়াই মাস জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পায়। ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার খবর শোনে বাদশা মিয়া নিখোঁজ হলে ২২ ফেরুয়ারি বাদশা মিয়ার বড় ভাই বিশ^নাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, (ডায়েরী নং-১১৩৪)। এর দুইদিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কিশোরী হামিদা বেগম (১৫) বাদি হয়ে বাদশা মিয়াকে আসামি করে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ১৫)। বাদিনী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ১৫জানুয়ারি থেকে ২০২০সালের ২০ ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১৩মাস জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এজহারের সময় মতে ১০ মাসের মধ্যেই মেয়েটির সন্তান জন্ম লাভ করার কথা। কিন্তু ১৩ মাস পরে কি কারনে কার ইন্দনে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হলো ন্যায় বিচারের স্বার্থে তা খতিয়ে দেখা একান্ত জরুরী।
সাজানো এই ধর্ষণ মামলার ঘটনা মুখে মুখে সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছলে একদল সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে বিষয় সম্পর্কে অবহিত হন। মামলার বাদি হামিদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে চাইলে তার বাবা দেখা করতে দেননি। হামিদার পিতা আবুল মিয়া বলেন, থানার দারোগা স্যার ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারবনা।
অভিযুক্ত বাদশা মিয়ার ভাই ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক আকবর আলী বলেন, তাকে রাতে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রতিপক্ষ রাসেলের লোকজন স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন। রাসেলের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ওই গ্রামের মুরব্বী আলকাছ আলী ও মাসুক মিয়া বলেন, প্রবাসী ফারুক মিয়ার বিল্ডিং নির্মাণ করার দায়িত্ব থেকে রাসেলকে বাদ দেয়ায় রাসেল ক্ষীপ্ত হয়ে ধর্ষণ মামলার ঘটনা সাজিয়েছে। আমরা ধর্ষনের ঘটনা কখনও শোনিনি।
বাদশার বৃদ্ধা মা আছিয়া বেগমের বলেন, রাসেল তার ছেলেকে ভাত খাওয়া থেকে মোবাইল ফোন করে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ও সাজানো ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়েছে। ফাঁসানোর একটি ভিডিও রেকর্ড আছে। তিনি আরো বলেন, এক সাথে দুই ভাই খারাপ কাজে কি যেতে পারে? আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে পূরো ঘটনার তদন্ত পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার নিকট দাবি করছি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফজলুল হক জানান, মামলার তদন্ত চলছে, কিছুদিনের মধ্যে রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হবে।