বিশ্বনাথে ‘মা’ হত্যার দায়ে পিতার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিলেন ছেলে!

অপরাধ বিশ্বনাথ
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত। ‘মা’ হত্যার ঘটনা প্রমান করতে আদালতে পিতার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিল ১০বছরের কিশোর নাঈম। আসামি কাঠগড়ায় পিতা, স্বাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো পুত্র, কারো দিকে কেউ তাকাচ্ছেনা। আদালত স্বাক্ষী নাঈমের নাম ঠিকানা লিখে হত্যাকান্ডির ঘঁনা জানতে চাইলে ঘটনার বর্ণনা দেয় কিশোর নাঈম। এসময় আদালত প্রাঙ্গণে পিনপতন নিরবতা ছিল।

ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক, দুঃখজনক, হৃদয়বিদারক অমানবিক ও চাঞ্চল্যকর। স্ত্রী হত্যার অভিযোগে পিতা হেলাল মিয়া জেলে বন্দি আছেন। একাধিকবার জামিনের আবেদন করেও জামিন পাননি। আদালতে ৯জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তলব করা হয় কিশোর নাঈমকে। নাঈমের বয়স ১০ বছর। আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো পিতা, স্বাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ালো ছেলে।

সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার নিজ আসনে বসা। কিশোর নাঈমের নাম ঠিকানা লিখে হত্যাকান্ডের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলেন বিচারক। নাঈম আদালতকে জানালো, ‘ভিকটিম আমার মা, আসামী আমার বাবা। ঘটনার দিন আমার মাকে টেলিফোন করে নুর উদ্দিন চাচার বাড়ীতে এনেছিলেন বাবা। সাথে আমি, আমার বোন, নানী ও ছোট মামা ছিলেন। সেখানে আসলে আব্বা আমাকে একশ টাকার নোট দিয়ে সিগারেট আনতে দোকানে পাঠান, সিগারেট নিয়ে এসে দেখি, আব্বা ছুরি হাতে নিয়ে হাওরের দিকে দৌড়াচ্ছেন। বাড়ীতে এসে দেখি নুর উদ্দিন চাচার গোয়াল ঘরের পাশে একটি ঘরে একটি খাটের উপর মায়ের গলাকাটা লাশ দেখে কান্নাকাটি করতে থাকি, হাসপাতালে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে দেখি মা মারা গেছেন,। মা হত্যার শোকে কাতর হয়ে ছেলে নাঈম এভাবেই আদালতে পিতার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবি এএসএম গফুর।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডটি ঘটেছে বিশ্বনাথ থানা সদরের পার্শবর্তী জানাইয়া গ্রামে। দেওকলস ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো: ওয়াহিদ আলী ২০০৯সালে মেয়ে লুবনা বেগমকে জানাইয়া গ্রামের জহুর আলীর পুত্র হেলাল মিয়ার সাথে বিবাহ দেন। দুই সন্তানের জনক হেলাল মিয়া ২০১৮সালের ২৫জানুয়ারী শশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীকে টেলিফোন করে এনে গলাকেটে হত্যা করে। লুবনা বেগমের ভাই কামরুল হুদা বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় হেলালকে একমাত্র আসামী করে ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (দায়রা ৮৮৭/২০১৮)। ইতিপূর্বে এ মামলায় ১০জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ ও ৩৪২ধারায় আসামীকে পরীক্ষা করা হয়েছে। আদালত আগামী ২০ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের তারিখ ধার্য্য করেছেন।

এদিকে মেয়ে লুবনার এমন মর্মান্তিক ঘটনার কিছুদিন পর বাবা আব্দুল ওয়াহিদ ও বাদি কামরুল হুদা আদালতে স্বাক্ষী দেয়ার পর মারা যান। হত্যাকান্ডের পর এ ঘটনা সমগ্র সিলেটে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *